1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিতাবাঘের থাবায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাকিস্তানে বিমা স্কিম

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০

চিতাবাঘ৷ বিড়াল গোত্রের এ প্রাণীটি নিশাচর আর বৃক্ষচর স্বভাবের৷ চিতাদের দেখা পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য৷ পাকিস্তানের একটি জাতীয় উদ্যানে এখনও আছে অনেক চিতাবাঘ৷ কিন্তু পরিবেশ প্রতিবেশের ক্ষতি এবং মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে৷

https://p.dw.com/p/PLhN
ছবি: AP

রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে প্রায় তিনহাজার তিনশ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি জাতীয় উদ্যান৷ নাম আইয়ুবিয়া ন্যাশনাল পার্ক৷ ঘন বন৷ পুরানো গাছগুলোর গায়ে জন্মেছে সবুজ শ্যাওলা৷ ছোট ছোট বন গাছগাছরা জন্মে থাকা সরু পথে সকালে হেটে যাচ্ছেন মোহাম্মদ ওয়াসিম৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড বা ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর পাকিস্তান শাখার কর্মকর্তা তিনি৷ ইদানিং ওয়াসিমের কাজ বেশ বেড়েছে৷ এবারের অ্যাসাইনমেন্ট চিতাবাঘ৷ চিতাবাঘের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে পরিবেশ৷ বন সংলগ্ন এলাকার মানুষের খপ্পরের মধ্যে পড়লেই সব শেষ৷ তারা পিটিয়েই হত্যা করছে ক্ষিপ্ত গতিতে চলা সব চিতাবাঘকে৷

এই বনে আগেও চিতা বাঘ মারা গেছে৷ কিন্তু অবস্থা খারাপ হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে৷ ওয়াসিম সেই কথাই জানালেন, ‘‘২০০৫ সালের জুন মাস৷ একটি চিতাবাঘ চলে আসে লোকালয়ে৷ ক্ষুধার্ত ছিল সে৷ হয়ে ওঠে মানুষ খেঁকো৷ একে একে তার আক্রমণে প্রাণ হারায় ছয়জন৷ এর মধ্যে অধিকাংশই নারী৷ এ অবস্থায় বন বিভাগ এবং পুলিশ মিলে বাঘটিকে হত্যা করে৷ বন সংলগ্ন এলাকার মানুষ তাদের ছয়জনের প্রাণহানীর পর ক্ষেপে যায়৷ এরপর শুরু হয় চিতাবাঘ হত্যা অভিযান৷ যেখানে যখন যাদের সুযোগ আসছে, তারা হত্যা করছে চিতা৷''

একটা সময় ছিল যখন এই বনের মানুষ আর বনের জন্তু জানোয়ারেরা বাস করতো একটা সুন্দর পরিবেশে৷ কেউ কারও কাজে সমস্যা সৃষ্টি করতো না৷ বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা বলতো ওরা থাকবে ওদের জায়গায়, আর আমরা থাকবো আমাদের জায়গায়৷ কিন্তু এখন পাল্টে গেছে ছবি৷

ওয়াসিম বলছেন,‘‘বনজীবী মানুষের মধ্যে যাঁরা বয়স্ক, তাঁদের কেউই কিন্তু বাঘের সঙ্গে এ ধরণের লড়াই'এ জড়িয়ে পড়েননি৷ যদি তাঁরা কখনও কোন আক্রমণাত্বক চিতাবাঘ দেখতে পেতেন, তখন তাঁরা সেই বাঘকে সময় দিতেন৷ আর আস্তে আস্তে বাঘটি নিজে থেকেই হয়ে যেতো স্বাভাবিক৷ চলে যেত নিজের জায়গায়৷ এখন সেই অবস্থা আর নেই৷ ২০০৫ সালের সেই ঘটনার পর, ভয় ঢুকে গেছে মানুষের মধ্যে৷ বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে৷ যদি কোন নারী কোন জায়গায় বাঘ দেখতে পান, তাহলে তিনি প্রাণভয়ে দৌঁড়াতে থাকেন৷ আর চিতাও তখন পিছু নেয় তাঁদের৷ বাঘ হয়তো ভাবে, আমার জায়গায় মানুষ কেন? আর সে জন্যই একটি বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা চিতা আর মানুষের এই দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করছি৷''

Perischer Leopard Zoo Budapest Flash-Galerie
ছবি: AP

বাঘে মানুষের এই দ্বন্দ্ব অবসানে কাজ চলছে৷ বলা হচ্ছে, ভোর ছয়টার আগে তাঁরা যেন বনে না যান৷ সকাল সকাল অনেকেই বনে যান মূলত খড়ি সংগ্রহের আশায়৷ মূলত এই সব হিংস্র জন্তু রাতে চলাচল করতে ভালোবাসে৷ সূর্য ওঠার সময় তারা নিজ নিজ গুহায় ফিরে যায়৷ ফলে সে সময় যদি তারা কোন মানুষকে দেখে, তখন মূলত প্রাণের ভয়েই আক্রমণ করে বসে৷

ওয়াসিম এবং তাঁর সহযোগিরা মানুষদের বোঝাচ্ছেন সে কথা৷ স্থানীয় এক বনবাসী মোহাম্মদ আলি বুঝেছেন ব্যাপারটা৷ বললেন, ‘‘চিতা দেখতে আমিও গিয়েছি এবং আবারো যাবো ইনশাআল্লাহ৷ তবে আমার ভয় করে৷ তারপরেও আমি দেখেছি অনেকে যারা চিতা দেখলো, তারা সেটিকে মেরে ফেলার জন্য ব্যস্থ হয়ে পড়ে৷ কিন্তু চিতা মারা উচিত নয়৷ বনের প্রাণী হত্যা শাস্তি যোগ্য অপরাধ, জেলও হতে পারে৷''

ওয়াসিম জানালেন, পাকিস্তানে এমন কোন আইন নেই যে বন্যপ্রাণীর আক্রমণে যদি কেউ নিহত, আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে৷ আর যদি কারও বা কোন সম্প্রদায়ের মানুষের ক্ষতি হয়, তাহলে সেই ক্ষতির পেছনে যে প্রাণী আছে, তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁরা৷

ওয়াসিম বললেন, ‘‘আর তাই ডাব্লিউডাব্লিউএফ একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে আইইউসিএন-এর সহযোগিতায়, তাতে আমরা চিতার আক্রমণের ক্ষতিপূরণ দিতে এই অঞ্চলে একটি বিশেষ বিমা স্কিম চালু করার চেষ্টা করছি৷''

তাঁদের আশা এই সবের ফলে বাঁচবে চিতা, বাঁচবে পরিবেশ এবং প্রতিবেশ৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ