1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুদ্ধাপরাধী ‘শাহেনশাহ’

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৫ অক্টোবর ২০১৪

স্বাধীনতা বিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধীদের গুরু হিসেবে পরিচিত গোলাম আযম চিরবিদায় নিয়েছেন৷ শনিবার ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়৷

https://p.dw.com/p/1Dc3B
Bangladesch Ghulam Azam Trauerfeier 24.10.2014
ছবি: picture-alliance/landov/Shariful Islam

বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বাদ জোহর মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছর সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের জানাজায় ইমামতি করেন গোলাম আযমের চতুর্থ ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী৷

জানাজায় জামায়াত ইসলামী এবং শিবিরের অনেক নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা গেছে৷ সেখানে গোলাম আযমের ছেলে আযমী বলেন, ‘‘গোলাম আযম জ্ঞানত কাউকে কষ্ট দেয়ার জন্য কিছু করেননি৷ এরপরও কেউ যদি তাঁর কথা, আচরণ ও কর্মকাণ্ডে ব্যথা বা আঘাতপ্রাপ্ত হন, তাহলে আপনারা মাফ করে দেবেন৷ আমি করজোড়ে দেশবাসীর কাছে মাফ চাচ্ছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘গোলাম আযমের সঠিক মূল্যায়ন হবে, দীন এ দেশে যদি বিজয়ী হয়৷''

এর আগে দুপুর একটার দিকে জামায়াত-শিবিরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গোলাম আযমের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স বায়তুল মোকাররমে নিয়ে যান৷ তবে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় ৪-৫ টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটে৷ কে বা কারা ককটেলগুলো বিস্ফোরণ ঘটায় তা জানাতে পারেনি পুলিশ৷ এছাড়া পল্টন মোড় থেকে আরও তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ৷ পল্টন মডেল থানার পরিদর্শক জানান, দুর্বৃত্তরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে৷ তাদের চিহ্নিত করা যায়নি৷

টুইটারে অনেকে জানাজার ছবি প্রকাশ করেছেন৷ সেখান থেকে কয়েকটি যোগ করা হলো এখানে:

প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালের পহেলা জানুয়ারি এই বায়তুল মোকাররম মসজিদেই প্যালেস্টাইন যুদ্ধে নিহত দুই বাংলাদেশীর নামাজে জানাজায় অংশ নিতে গেলে জুতাপেটার শিকার হন গোলাম আযম৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ হিসাবে তাকে জুতাপেটা করা হয়েছিল৷

গোলাম আযমনামা

গোলাম আযমের জন্ম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার পুরনো অংশে লক্ষ্মীবাজার এলাকায় নানার বাড়িতে৷ তাঁর দাদার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামে৷ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের কাছে গোলাম আযম ‘শাহেনশাহ' ডাকনামে পরিচিত৷

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করার জন্য মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী পার্টির সাথে মিলে সেসময়কার জামায়াতের আমির গোলাম আযম প্রথমে শান্তি কমিটি গঠন করে মিছিল সমাবেশ করেন৷ এর ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী সরাসরি আলবদর এবং রাজাকার নামে দু'টি বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়৷

Ghulam Azam 2003 SW
যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমছবি: picture-alliance/epa/Ahmad Fayyaz

মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ২২ নভেম্বর ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তান যান গোলাম আযম৷ এরপর ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে ঢাকা আসেন অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে৷ এরপর তিনি আর ফিরে যাননি৷

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতের প্রকাশ্য আমির ঘোষণা করা হয়৷ সেসময় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়৷ ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণআদালত করে গোলাম আযমসহ কয়েকজনের গণহত্যা এবং স্বাধীনতা বিরোধীতার জন্য প্রতীকী বিচার করা হয়৷

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়ে ১৯৯২ সালে গোলাম আযমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়৷ তবে সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগ থেকে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়ে ১৬ মাস জেল খাটার পর গোলাম আযম ছাড়া পান৷

Pakistan Ghulam Azam Trauerfeier 23.10.2014
পাকিস্তানে গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজাছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images

স্বাধীন বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে গোপনে এবং প্রকাশ্যে জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করে গোলাম আযম অবসর যান ২০০০ সালে৷ এরপর মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হয়ে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন৷ বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিত্‍সাধীন অবস্থায় মারা যান৷

জীবিত থাকতে গোলাম আযম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে অস্বীকার এবং স্বাধীনতার বিরোধীতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য কখনো ক্ষমা চাননি, দুঃখ প্রকাশও করেননি৷