1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনে যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে কাজাখ সংস্কৃতি

৬ আগস্ট ২০২০

চীনে মুসলিম নির্যাতন এবং কাজাখদের সংস্কৃতি ধ্বংসের বিষয়ে জানালেন কাজাখ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসা সায়রাগুল সাউতবে৷

https://p.dw.com/p/3gWYY
ছবি: Regina Recht

কাজাখ-চীনা বংশোদ্ভূত সায়রাগুল সাউতবে ‘এসকেপ ফ্রম চায়না’স মডার্ন-ডে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ গ্রন্থের সহলেখক৷ বইটির জার্মান সংস্করণ জার্মানিতে প্রকাশিত হবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে৷ এরপর মে মাসে ইংরেজি সংস্করণ বের হবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায়৷ 

প্রাচীন কালে কাজাখস্তান তো বটেই, এমনকি মঙ্গোলিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনেও বসবাস ছিল কাজাখদের৷ সায়রাগুল সাউতবের শৈশবও কেটেছে সেই অঞ্চলে৷ ১৯৮০-র দশকের দিকে নদীর তীরের একটি জায়গায় নয় সন্তানকে নিয়ে থিতু হন তার বাবা-মা৷ একদিন হান চীনারা তাদের গ্রামে এসে জেনারেল স্টোর খুলে বসে৷ স্থানীয়রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলাকার নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয় তারা৷ বড় বড় বাঁধ নির্মান করা হয়৷ গড়ে ওঠে বড় বড় কারখানা৷

চীনের উত্তর-পশ্চিমে শুরু হয় সিল্ক রোডের কাজ৷ সেই এলাকার নাম শিনজিয়াং বা নিউ ফ্রন্টিয়ার ৷ ভূরাজনৈতিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেই এলাকায় চীনের এক পঞ্চমাংশ কয়লা, গ্যাস আর তেলের রিজার্ভ৷ এলাকাটিকে পূর্ব তুর্কিস্তান এবং উইগুরস্তান নামেও ডাকা হতো৷ শিনজিয়াং বা নিউ ফ্রন্টিয়ার নামকরণ সেই অতীতকে মুছে দেয়ার চেষ্টা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷

নিষ্ঠুর ‘সাংস্কৃতিক বিনিময়’

২০১৬ সালের দিকে সাউতবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রথমবার বুঝতে পারেন৷ কাজাখ ভাষায় কথা বলে ব'লে তার সন্তানকে কিন্ডারগার্টেনে গিয়ে এক অর্থে মুখ বন্ধ করে থাকতে হতো৷ এক পর্যায়ে তার স্বামী আর দুই সন্তান এলাকা ছাড়লেন৷ সায়রাগুল সাউতবেরও খুব তাড়াতাড়ি তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার ইচ্ছে ছিল৷

কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রথমে মুসলিমদের পাসপোর্ট জব্দ করল৷ তারপর শুরু হলো মাসে আটদিন করে ‘বন্ধুসেবা’ দেয়া৷ সেই দিনগুলোতে কাজাখ, উইগুর এবং অন্য মুসলমানদের হান চীনাদের সঙ্গে থেকে তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে হতো৷

খুব নিরীহ আর ভালো মনে হলেও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওই কার্যক্রম আসলে কেমন ছিল সায়রাগুল সাউতবে তার বর্ণনা দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন কিভাবে মুসলমানদের গৃহভৃত্যের মতো খাটানো হতো, শূকরের মাংস খেতে বাধ্য করা হতো৷ গৃহকর্তার সঙ্গে এক বিছানায় শুতে হতো নারীদের৷ ‘অতিথিদের’ প্রতিটি কাজের ছবি তুলে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হতো, নয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হতো৷

নজরদারি, নির্যাতন, ধর্ষণ

প্রথম শিবিরটি খোলা হয় ২০১৬ সালে৷ সায়রাগুলকে দেয়া হলো শিবিরে আটকদের চীনা ভাষা এবং অপপ্রচারমূলক গান শেখানোর দায়িত্ব৷ ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হতো এই কাজ৷ নানা ধরনের অত্যাচার দেখেছেন সেখানে৷ দু'শ মানুষের সামনে নারীকে ধর্ষণ করার দৃশ্যও দেখেছেন তিনি৷

অবশেষে পলায়ন

পাঁচ মাস পর শিবির থেকে অস্থায়ীভাবে মুক্তি পান সায়রাগুল৷ সেই সুযোগে  পালিয়ে যান কাজাখস্তানে৷ আড়াই বছর পর দেখা হয় স্বামী আর দুই সন্তানের সঙ্গে৷ তার কিছুদিন পর সুইডেনে এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুমতি নেন তিনি৷

নাদিন ভোচিক/এসিবি