1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনে সংশোধনী কেন্দ্রের প্রশিক্ষকের পিটুনিতে কিশোরের মৃত্যু

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০

সম্প্রতি চীনের এক কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রের প্রশিক্ষকের বেদম পিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছে চেন শি নামের ১৬ বছরের এক চীনা কিশোর৷

https://p.dw.com/p/PQWM
ছবি: AP

পিটুনির কারণ হিসেবে জানা গেছে, চেন নাকি প্রশিক্ষকের আদেশ অমান্য করে প্রশিক্ষণের সময়ে দৌড়াতে আপত্তি জানিয়েছিল৷ এর এক পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা প্রশিক্ষক এবং উপস্থিত আরো দুই ব্যক্তি মিলে কিশোর চেনকে বেদম পেটাতে শুরু করে৷ তাদের বেধড়ক পিটুনির ফলেই চেনের মৃত্যু ঘটে৷

চেনকে এই সংশোধনী কেন্দ্র ভর্তি করানোর মাত্র দুইদিন পরে চেনের মা ট্যাং ইউলিনকে কেন্দ্রটি থেকে ফোনে জানানো হয় যে, চেন গুরুতর অসুস্থ, সে এখন হাসপাতালে রয়েছে৷ সম্ভবত সানস্ট্রোকের কারণেই সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ ইউলিন আর তার স্বামী যেন জরুরী ভিত্তিতে এখানে চলে আসেন৷

জানা গেছে, চীনের উনান প্রদেশের রাজধানী চ্যাংশা'র বাইটেং কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রে ১৬ বছরের চেন এসেছিল স্রেফ তার মায়ের কথায় প্রলোভিত হয়ে৷ চেনের মা তাকে বলেছিলেন, চেন যদি এই সংশোধনী স্কুলে যায়, তাহলে তিনি তাকে তথ্য প্রযুক্তি পড়তে পাঠাবেন৷ চীনে সাধারণত ইন্টারনেট আসক্ত এবং অবাধ্য কিশোর-কিশোরীদেরই এধরণের কেন্দ্র পাঠানো হয়ে থাকে৷

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চেন কে নাকি হাতকড়ায় বেঁধে কাঠের ব্যাটন আর একটি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে৷ সংশোধনী কেন্দ্রে প্রশিক্ষকের পিটুনিতে চেনের মৃত্যু'র বিষয়টি চীনে এধরণের শতাধিক কেন্দ্রগুলোকে বিতর্কিত করে তুললো৷

Tibeter in Indien Streik wegen Olympia
ফাইল ছবিছবি: AP

চেনের মা ট্যাং ইউলিন চেনকে এই সংশোধনী কেন্দ্র পাঠিয়েছিলেন মূলত কিশোর চেনের দুর্বল ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রমে অনীহা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে৷ তার আশা ছিলো এখানে থেকে তার প্রিয়তম পুত্র ক্রমশ আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি আর কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার শিক্ষা পাবে৷ কিন্তু বাস্তবে যা ঘটেছে তা এই মায়ের জন্য নিদারুণ অসহনীয় এক বেদনারই বিষয়৷

জানা গেছে, এই সংশোধনী কেন্দ্র আসা অধিকাংশ কিশোরদেরই মিথ্যা প্রলোভনে ভুলিয়ে এখানে রেখে যাওয়া হয়৷ চেনের মা ইউলিনকেও সংশোধনী কেন্দ্রের পরিচালক মিথ্যা প্রলোভন দেওয়ার কথা শিখিয়ে দিয়েছিলেন৷ সংশোধনী কেন্দ্রগুলোতে আসা কিশোরদের হয় এধরণের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এখানে আনা হয়, নয়তো জোর করে তুলে আনা হয়৷ ১০০ জনের প্রায় ৯০ জনকেই নাকি প্রলোভনে ভুলিয়ে এখানে আনা হয় আর ১০ জনকে হয় অভিভাবক নয়তো কেন্দ্রের প্রশিক্ষকরা জোর করে তুলে সেখানে ঢুকিয়ে দিয়ে আসেন৷

চেনকে এই কেন্দ্রে ভর্তি করার জন্য তার মা ইউলিনকে গুনতে হয়েছিল তিন হাজার চারশো ডলার৷ সেও মাত্র ৬ মাসের জন্য৷ শর্ত ছিল ইউলিন কোনরকম যোগাযোগ করতে পারবেন না৷ কেবল সেখানকার এক শিক্ষকের মাধ্যমে তার স্নেহের সন্তানটির খোঁজ-খবর রাখতে পারবেন৷

কেন্দ্রের ফোন পাওয়ার পর তড়িঘড়ি প্লেনে চেপে সেখানে পৌঁছেও চেনকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পাননি ইউলিন৷ তারা যখন হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন ততক্ষণে চেন তাদের ছেড়ে বহুদূর পাড়ি জমিয়েছে৷ শুধু তার রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত প্রাণহীন দেহটি বাবা-মা'র অপেক্ষায় ছিল৷

এদিকে চীনের পুলিশের বরাতে জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রশিক্ষক সহ চেনের সেই দুই ঘাতককে পুলিশ ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করেছে৷ সংশোধনী কেন্দ্রটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন