1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চোরাপথে রান্নার ভিডিও!

২৩ এপ্রিল ২০১৮

উত্তর কোরিয়ায় চোরাকারবারের মাধ্যমে ডিভিডি পাঠিয়েছিলেন শিল্পী ওয়াং কিম৷ ডিভিডিতে থাকা ভিডিওগুলোতে ছিল পিৎসা তৈরির কলাকৌশল শেখানোর চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র৷ ৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ওই ভিডিওগুলোই এখন তুমুল আলোচনায়৷   

https://p.dw.com/p/2wVR2
ছবি: Hwang Kim

দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পী ওয়াং কিম উত্তর কোরিয়ায় ৫০০ রান্নার ডিভিডি চোরাকারবারির মাধ্যমে পাচার করেছিলেন৷ কিন্তু এত কিছু থাকতে রান্নার ভিডিও কেন!

উত্তর কোরিয়ার সাবেক নেতা কিম জং ইলের স্বপ্ন ছিল সত্যিকারের একটি ইটালিয়ান পিৎসার দোকান বসবে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের কেন্দ্রে৷ একইভাবে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান নেতা এবং ইলের ভোজনরসিক পুত্র কিম জন উনেরও খুব প্রিয় পিৎসা৷ আর ঠিক এসব কারণেই ৯ বছর আগে প্রথম উত্তর কোরিয়ায় পিৎসার দোকান খোলা হয়৷ অবশ্য সেটি ছিল বিত্তশালীদের অবকাশ যাপন এবং খেতে যাওয়ার একটি জায়গা৷ 

খোদ নেতার পছন্দে খোলা দোকান৷ তাই পিৎসা তৈরির রসদ আসতো সরাসরি ইটালি থেকেই৷ আর তার ব্যক্তিগত বাবুর্চিদের বেশ কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছিল রোম আর নেপলসে, যাতে সব ধরনের পিৎসাই তাঁরা তৈরি করতে পারেন৷

এই পিৎসার দোকান নিয়ে নানা কেচ্ছাকাহিনি রয়েছে৷ তবে তা প্রথম নজরে আসে ২০০৯ সালের মার্চে, জাপানি ম্যাগাজিন চোসন সিম্বো প্রকাশের পর৷ পুরো পৃথিবীর সংবাদপত্রই এই প্রতিবেদন লুফে নেয়৷

প্রতিবেদনটি চোখে পড়ে দক্ষিণ কোরীয় বংশোদ্ভুত লন্ডনের শিল্পী ওয়াং কিমের৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি দেখে আমি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ি৷ এটিকে আমার পুরোপুরি অদ্ভুত একটি বিষয় মনে হয়৷ উত্তর কোরিয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য খুব কমই সুযোগ আছে অন্যদেশের সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার৷’’

‘‘এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ রাজনৈতিক নেতারা অবশ্য এসব সুযোগ পান৷ হঠাৎই সেখানে একটি পিৎসার দোকান হলেও তাতে অনুপ্রবেশের অনুমোদন সাধারণ জনগণ পাবে না৷’’

তবে এই চিন্তা করে শিল্পী কিম পিছিয়ে যাননি৷ বরং উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষকে পিৎসা তৈরির প্রক্রিয়া শেখানোর নতুন কৌশল হাতে নিলেন৷ তৈরি করলেন চারটি পাঁচ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র৷

একটি পুরুষ ও একটি নারী চরিত্র নিয়ে তৈরি এসব চলচ্চিত্রের বিষয় ছিল পিৎসা তৈরির কৌশল৷ নাম দিলেন– ‘পিৎসাস ফর পিপল’৷

জার্মানিতে প্রথমবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হাইডেলবার্গে একটি নাটকের উৎসবে সেই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো দেখানো হয়৷

সেখানে উপস্থিত শিল্পী ওয়াং কিম জানান, ২০১০ সালে ধারন করা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো তিনি ৫০০ ডিভিডিতে ‘বার্ন’ করেছিলেন৷ তারপর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় চোরাকারবারি করে, এমন লোকদের দিয়ে তা উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হয়৷

প্রত্যেককে ১০০টি করে ডিভিডি দিয়ে দেওয়া হয় এবং এটা তিনি তাদেরকে বিনা মূল্যে দেন৷ অবশ্য চোরাচালানের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের সাথে কেউ কেউ ডিভিডি বিক্রি করেছেন বলেও তিনি জানতে পারেন৷

ওয়াং কিম বলেন, ডিভিডিগুলো কতজন দেখেছেন, তা দেখে কেউ পিৎসা বানানো শিখেছেন কিনা সে বিষয়ে  সঠিক তথ্য না পেলেও, পরবর্তীতে চোরকারবারিরা তাকে বেশ কিছু চিঠি দিয়েছেন৷ ওইসব চিঠিতে ডিভিডিগুলোর দর্শকেরা তাদের মতামত জানিয়েছেন৷ চিঠিদাতাদের মধ্যে কেউ কেউ ভিডিও দেখে পিৎসাও বানিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন৷ 

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এসব চিঠির মধ্যে কিছু ‘ফ্যানমেইল’ রয়েছে, যা নায়ক বা নায়িকাকে ভালো লাগার কারণে লেখা৷

উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটি খুব ছোট উদ্যোগ মনে হলেও, দেশটির দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের মধ্যে পিৎসার স্বাদ দেয়ার প্রচেষ্টা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়৷   

এসথার ফেলডেন/এইচআই