1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ছাদে বাগান করলে অনেক কিছুই কিনে খেতে হয় না'

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৬ অক্টোবর ২০১৮

ছাদবাগান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷খুব সীমিত আঙ্গিকে হলেও সরকারও ছাদবাগানকে উৎসাহিত করছে৷ তবে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ মনে করেন সর্বস্তরেই এখনো অনেক কিছু করার বাকি৷

https://p.dw.com/p/36atV
Bangladesch Dr. Kamal Uddin Ahmed Botaniker und Vizekanzler der Sher-E Bangla Universität
ছবি: privat

ডয়চে ভেলে: ছাদ এবং ব্যালকনিতে গাছ লাগানো এখন কোন পর্যায়ে আছে?

অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ: সবার মধ্যে একটা সচেতনতা এসেছে৷ এটা করা যায়, করা উচিত এবং এটা একটা ইস্যু, সেটা সবাই জানেন৷ হয়তবা ৬০ ভাগ মানুষ এটার প্র্যাকটিসে আছেন৷ সকলের মধ্যে সচেতনতা আছে, এটা প্রতিদিনই বাড়ছে৷

এটা কতটা জনপ্রিয়? আগের তুলনায় কতটা বেড়েছে?

অনেক অনেক গুন বেড়েছে৷ এখন মানুষ বুঝতে পারে, ছাদবাগান অত্যন্ত লাভজনক শুধু নয়, পরিবেশ রক্ষায় এর বিরাট ভূমিকা আছে৷ ৯০ ভাগ মানুষই এখন এটার সম্পর্কে জানে৷

মূলত কারা এদিকে আগ্রহী হচ্ছেন?

যাঁদের নিজেদের বাসা আছে, তাঁরাই মূলত এটা করছেন৷ পাশাপাশি যাঁরা পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন, তাঁরা করছেন৷

পরিবেশের ক্ষেত্রে এই চাষাবাদ কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে?

শুধু ঢাকা শহরের উদাহরণ দেই৷ ৬০-৭০ ভাগ কংক্রিট হয়ে গেছে৷ ১০ বছর আগে এখানে গাছপালা ছিল ১৬-১৭ ভাগ৷ এরও ২৫-৩০ বছর আগে ছিল ৩০ ভাগের বেশি৷ আর এখন এটা কমতে কমতে ৮ ভাগে নেমে এসেছে৷ এর কারণ হলো, বিল্ডিং বাড়ছে, রাস্তা হচ্ছে৷ গাছ কেটে ফাঁকা করে ফেলা হচ্ছে৷ এভাবে ৭০ ভাগ কংক্রিট হয়ে গেছে৷ গাছের একটা কুলিং এফেক্ট আছে৷ এটা যাঁরা বিজ্ঞান পড়েছেন, তাঁরা জানেন৷ গাছের উপর রোদ পড়লে সে তাপটা সংগ্রহ করে পানি ছাড়ে৷ এতে গাছের নীচে সবসময় ঠাণ্ডা থাকে৷ এভাবে তাপ প্রতিসরণ করে সে মহাশূণ্যে ফেরত দেয়৷

ছাদ বা ব্যালকনিতে কী ধরনের গাছ লাগানো উচিত?

ছাদ বা ব্যালকনিতে বেগুন, মরিচ এই ধরনের গাছ লাগাতে পারেন৷ আর আপনি যদি সৌন্দর্যের কারণে লাগান, তাহলে ফুলের গাছ লাগাতে পারেন৷ আবার ঔষধি গাছ, যেমন তুলসী, অ্যালোভেরা, বাসক পাতাসহ এই ধরনের বহু গাছ লাগানো যেতে পারে৷ আমার বাসার ছাদে কুমড়া, লাউ, চিচিংঙ্গাসহ বহু ধরনের গাছ আছে৷ ১৫ ফিট উচ্চতার গাছগুলো সেখানে লাগানো যায়৷

কেউ যদি শুধু ফুলের বাগান করতে চান, তাহলে কি ফুলের গাছ লাগানো যেতে পারে?

অধিকাংশ ফুল গাছই আপনি লাগাতে পারেন৷ শুধুমাত্র কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া যেসব গাছ আকৃতিতে বড় এগুলো বাদে সব গাছই লাগানো যায়৷ তবে রাধাচূড়াও এখন অনেকে লাগাচ্ছেন৷ এটা কোনো সমস্যা না৷ আমরা পরীক্ষা করছি, লাগাচ্ছি৷

অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ

যদি কেউ শাকসবজি বা ফলের গাছ লাগাতে চায়, তাহলে কী গাছ লাগালে সুবিধা হবে?

ডাটা, পালং শাক, পুঁই শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, মরিচ, আলু, কচু, চিচিংঙ্গা, লাউ, কুমড়াসহ যে-কোনো গাছই লাগাতে পারেন৷ আমার বাসার ছাদে এগুলো করে আমি নিজেই প্রমাণ করেছি, এটা করা সম্ভব৷ মরিচ, বেগুন এগুলো আপনার কেনার দরকার নেই, এগুলো ছাদবাগান থেকেই পাওয়া সম্ভব৷

ছাদ বা ব্যালকনিতে লাগানো গাছের পরিচর্যা করা কি খুব কঠিন?

কোনো কঠিন কাজ না৷ আপনি ছোট পরিসরে করতে পারেন৷ দু'চারটা আগাছা আপনি নিজেই হাতে তুলে ফেললে শেষ হয়ে যায়৷ পানির অবস্থা বুঝে আপনি একবার পানি দিলেন৷ মাটির সঙ্গে গোবর মিশিয়ে একবার লাগিয়ে দিলেই হয়৷ এটা একেবারেই সহজ৷ তবে পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে প্রতিদিন খেয়াল রাখতে হবে৷ বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহার না করেই আপনি এটা করতে পারেন৷ এতে আপনি নিরাপদ ফল-সবজি পেতে পারেন৷

সঠিক পরিচর্যা করতে ন্যূনতম কোন বিষয়ের দিকে নজর রাখা উচিত?

এটা তো একটা সমন্বিত কার্যক্রম৷ আপনাকে মাটির গুণাগুণ দেখতে হবে৷ পাশাপাশি পানি দিতে হবে৷ বেশি পানি দিলেও ক্ষতি, আবার পানি কম দিলেও ক্ষতি৷ এটা বুঝে পানি দিতে হবে৷ আলোটা সঠিকভাবে পেলেই হয়৷ আর ব্যালকনির ক্ষেত্রে দক্ষিণ দিকে হলে ভালো হয়৷

গাছ বা গাছের চারা সাধারণত কোথায় পাওয়া যায়? দামই বা কেমন?

আমাদের ঢাকাতে অনেক নার্সারি আছে, সাভারে আছে৷ সারাদেশেই এখন সরকারির পাশাপাশি প্রচুর বেসরকারি নার্সারি হয়েছে৷ চাইলেই আপনি সেখান থেকে গাছ সংগ্রহ করতে পারেন৷ দাম একটু বেশি মনে হতে পারে৷ কিন্তু আপনি নিজে যদি কমার্শিয়ালি করতে চান, তাহলে একটা চারা কিনলেন সেটা থেকে একটা বেগুন পাকিয়ে বিচি বের করে আপনি নিজেই চারা উৎপাদন করে নিতে পারেন৷ হাইব্রিডগুলো কিনতে হবে৷ দাম তো একেকটার একেকরকম৷ তবে সবজির দাম বেশি না৷ মানে এত বেশি না যে, আপনি সেটা করতে পারবেন না৷

সরকার এ ধরনের গাছ রোপনের উদ্যোগকে কীভাবে উৎসাহিত করছে?

এখন নানাভাবে সরকার এটাকে উৎসাহিত করছে৷ অফিসিয়ালি, কমার্শিয়ালি এটার জন্য প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে৷ বছর পাঁচেক আগে এটা গ্রো করে বেশি৷ এর আগে সবাই প্রাইভেটলি করতো৷ প্ল্যানিং কমিশন থেকে তখন ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (ফাও)-এর উদ্যোগে আড়াইশ' ছাদবাগান করার উদ্যোগ নেয়া হয়৷ আমার প্রস্তাবেই তারা সেটা করে৷ ঢাকা-চট্টগ্রাম মিলে ইতিমধ্যে আড়াইশ' আদর্শ ছাদবাগান করা হয়েছে৷ এছাড়াও নানাভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে৷ ইসলামিক রিলিফের মাধ্যমেও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে৷ ১৭ লাখ টাকা খরচ করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদের উপর একটা বাগান করা হয়েছে৷ যদিও এটা গবেষণার জন্য৷ কারণ, কোন মাটি ভালো, কীভাবে করলে গাছ ভালো হয় মাটির টবে না কাঁচের টবে, নাকি প্লাস্টিকের, না সিমেন্টের, না কাঠের টবে করলে ভালো গাছ হবে, সেসব নিয়ে গবেষণা করে থিসিসও করা হয়েছে৷ নানাভাবে সরকারও এই কাজে উৎসাহ দিচ্ছে৷

ছাদে বাগান করা ভবনের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

এখানে দুটো জিনিস৷ পানি যদি নিয়মিত পড়তে থাকে তাহলে ছাদের ক্ষতি হতে পারে৷ আমরা যখন ছাদবাগান করি, তখন একটা স্তর করে নেই৷ কারণ, পানি নিরোধ করতে হবে৷ ছাদের উপর সরাসরি না বসিয়ে একটু ফাঁক রেখে পিলারের উপর বসিয়ে দেয়া যায় তাহলে ভালো হয়৷ ৫/৬ ইঞ্চি ফাঁকা থাকলেই হয়৷ যাঁরা এটা করেননি, তাঁরা করে নেবেন৷ আর যাঁরা নতুন ভবন বানাচ্ছেন, তাঁরাও এটা করে নেবেন৷

যাঁরা ছাদ বাগান করতে আগ্রহী, তাঁদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে?

যাঁরা এটা করতে চান, তাঁরা ছাদকে প্রোটেক্ট করে এটা করবেন৷ প্রাইমারি নলেজ এখানে পাওয়া যায়৷ তাঁরা এখানে আসতে পারেন৷ প্রতি শুক্রবার আমাদের একজন প্রফেসর থাকেন৷ আমাদের ছাদবাগান যাঁরা দেখতে আসেন তাঁদের ওই প্রফেসর সাহেব ব্রিফ করেন, ঘুরিয়ে দেখান৷ প্রতি শুক্রবার প্রায় একশ' মানুষ এটার ধারণা নিতে আমাদের এখানে আসেন৷ তাঁদের কোনো প্রশ্ন থাকলে তার উত্তর দেয়া হয়৷ আমরা প্রাথমিক ধারণা দেয়ার জন্য এক দুই ঘণ্টা ব্রিফও করি৷ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও এটা নিয়ে কাজ করছে৷ তাদের কাছে গেলেও আপনি ধারণা পেতে পারেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য