1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অর্জন অকল্পনীয়

সমীর কুমার দে ঢাকা
৫ ডিসেম্বর ২০১৭

পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও, তাদের সাফল্যও কিন্তু কম নয়৷ মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল আর সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে পুলিশ, জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান এ কে এম শহীদুল হক৷

https://p.dw.com/p/2oec6
ছবি: AKM Shahidul Haque 

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের অধিকাংশই গ্রেপ্তার হয়েছে বা পুলিশের অভিযান মারা গেছে৷ তাই তো আমরা স্লোগান দিয়ে নয়, কাজ দিয়ে জনগণের বন্ধু হতে চাই৷''

ডয়চে ভেলে: যাত্রা শুরুর পর পুলিশ কতটা এগিয়েছে?

আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক: পুলিশ অনেকদূর এগিয়েছে৷ আমাদের ‘লজিস্টিক সাপোর্ট' বেড়েছে, জনবল বেড়েছে, ‘ক্যাপাসিটি' বেড়েছে, মানে সক্ষমতা বেড়েছে৷ এছাড়া পুলিশ জনবান্ধব হয়েছে, কমিউনিটি পুলিসিংয়ের মাধ্যমে জনগণের কাছে এসেছে পুলিশ৷ আসলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে৷ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশের সম্প্রসারণ হয়েছে, পেশাদারিত্বও বেড়েছে৷ বাংলাদেশ পুলিশ যেহেতু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করে, যেমন ইউএন মিশনে কাজ করে, ফলত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়েছে আমাদের পুলিশ৷ বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক ইভেন্ট হচ্ছে, সেখানেও পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, দিচ্ছে৷ সদ্য আইপিইউ-র সম্মেলন হয়ে গেল, যেখানে ১৩৬টি দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা অংশ নেন৷ আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শুধু এই সম্মেলন নয়, সিপিএ সম্মেলন অথবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি৷ এগুলোতে আমরা ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড' অনুযায়ী নিরাপত্তা দিয়েছি৷ এখনও পর্যন্ত এখানে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সবাই সন্তুষ্ট৷

পুলিশ বাহিনীর বর্তমান জনবল এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা কি পর্যাপ্ত?

পর্যাপ্ত বলব না, তবে পুলিশের বাজেট আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে৷ অবশ্য পুলিশের জনবল যেভাবে বাড়ছে, সে অনুপাতে ট্রান্সপোর্ট, আবাসন পর্যাপ্ত হয়নি৷ এ সব বিষয়ে সরকারের কাছে আমাদের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে৷ এ সব বিষয় সমাধানে সরকারও আন্তরিক৷

এখন সামনে এগিয়ে যেতে পুলিশের অন্তরায় কী?

অন্তরায় নেই৷ তবে আমাদের যেসব প্রস্তাবনা থাকে, সেগুলো পাশ করতে প্রশাসনিক অনেক জটিলতা পার করতে হয়৷ এর জন্য আমাদের ক্ষমতাশালীদের প্রভাবিত করতে হয়, তদবির করতে হয়৷

লম্বা সময় ধরে পুলিশি ব্যবস্থা চলছে....এতে পুলিশ কতটা জনগণের বন্ধু হতে পেরেছে?

আমরা কাজ দিয়ে জনগণের বন্ধু হতে চাই, স্লোগান দিয়ে নয়৷ আমরা কমিউনিটি পুলিসিংয়ের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে কাজ করছি৷ জনগণের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছি এবং সমাধানের চেষ্টা করছি৷ এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে পুলিশের সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে৷ আমরা জনগণের আরো কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি৷ সেটা হলে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ফারাকটা অনেক কমে আসবে৷

পুলিশের বিরুদ্ধে তো বিস্তর অভিযোগ৷ এ সব অভিযোগের কি সুরাহা হয়?

হ্যাঁ, অনেক অভিযোগ আছে৷ সরাসরি যে অভিযোগগুলো আসে সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই৷ কিছু অভিযোগের তদন্তও হয়৷ সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ আর ‘ইন জেনারেল' যে অভিযোযোগগুলো আছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা প্রশিক্ষণ আর ‘মোটিভেশন'-এর মাধ্যমে সদস্যদের শোধরানোর চেষ্টা করি৷ তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের চেষ্টা করি৷ স্বাধীন দেশে পুলিশ যেন জনগণের বন্ধু হতে পারে, সে চেষ্টাই করছি আমরা৷

‘আমরা স্লোগান দিয়ে নয়, কাজ দিয়ে জনগণের বন্ধু হতে চাই’

এখন কি মানুষ পুলিশের কাছে যেতে ভয় পায়?

ভয় যে পায়, সেটা বলা যাবে না৷ তবে যাঁরা পুলিশের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত নন, তাঁরা অনেকসময় ভুল ধারণা নিয়ে পুলিশের কাছে যেতে ভয় পান কখনও কখনও৷ তবে এই ধারণা এখন অনেক বদলে গেছে৷ আর দিন দিন এটা আরো বদলাচ্ছে৷ এখন ভয় অনেক কমে গেছে৷

বাংলাদেশ তো ডিজিটাল হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়েছে৷ তা পুলিশ কতটা ডিজিটাল হতে পেরেছে?

আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল হওয়ার চেষ্টা করছি৷ অনেক কিছুই আমাদের ডিজিটাল হয়েছে৷ আমরা অপরাধীদের জন্য একটি ‘ক্রিমিনাল ডেটাবেজ' তৈরি করেছি৷ আমাদের একটা ‘সফটওয়্যার' আছে, যেটা তদন্তে খুবই সহায়তা করে৷ এছাড়া আমাদের অনেকগুলো ‘অ্যাপ' আছে৷ এগুলো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই তাঁদের অভিযোগের কথা পুলিশকে জানাতে পারছেন৷ সেই অভিযোগগুলোর আমরা সমাধান করছি৷ এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমরা অভ্যন্তরীণ ‘মনিটরিং' করছি৷

স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠে রাজারবাগে৷ মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা নিয়ে কিছু বলুন...

৭ই মার্চ যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিলেন, যার যা আছে তাই নিয়েই প্রস্তুত থাকতে, তখন থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ৷ ২৫ মার্চ রাতে ট্যাংক-কামান নিয়ে যখন সেনারা আক্রমণ শুরু করে, রাজারবাগের পুলিশ সদস্যরা কিন্তু তখন পালিয়ে যাইনি৷ তাঁরা হাতে যা ছিল তাই নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন৷ বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়৷ এতে অনেক পুলিশ সদস্য শহিদ হন৷ তখন গোটা বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ হয়েছে৷ পুলিশ তাঁদের অস্ত্র দিয়েছে, পুলিশ বেতারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বা পাক বাহিনীর আক্রমণ সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করেছে৷ তৎকালীন বাঙালি পুলিশ যতজন ছিল, তার ৭০ ভাগ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল৷

বাহিনীর প্রধান হিসেবে পুলিশের অর্জন নিয়ে কিছু বলুন...

গত দেড় বছরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের যে সাফল্য, যে অর্জন, সেটা অকল্পনীয়৷ বিশ্বের বহু দেশ এটা করতে পারেনি৷ ১৭ কোটি মানুষের দেশে জঙ্গি এবং তাদের আস্তানা খুঁজে বের করে আমাদের মেধাবী ও চৌকস অফিসাররা যে অপারেশনগুলো করেছে, এটা বিরল ঘটনা৷ গুলশানের ঘটনা বা ব্লগার হত্যা – সবগুলো ঘটনায় আমরা অপরাধীদের খুঁজে বের করেছি৷ তাদের বিচারে সোপর্দ করেছি৷ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলোতে আমরা নিরাপত্তা দিচ্ছি৷ অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷ জনগণের পুরো সহায়তা পেলে আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারব৷

আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য