1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশুদের টানছে উগ্রবাদীরা

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৫ জুন ২০১৭

দারিদ্র্য ও অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি শিশুদের উগ্রপন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভারতের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী৷

https://p.dw.com/p/2fGVj
Indien Kinderarbeit
ছবি: imago/imagebroker

জাতিসংঘের কাছে পেশ করা শিশু অধিকার সংক্রান্ত এক রিপোর্টে এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ভারতে অন্তত তিন হাজার শিশুকে অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি তাদের ক্যাডারভুক্ত করেছে৷ এদের মধ্যে ৫০০ যুক্ত রয়েছে মনিপুরসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সহিংস তৎপরতায় আর ২,৫০০ রয়েছে মধ্যভারতের ছত্তিসগড়, ঝাড়খন্ড, ওড়িষা এবং পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায়৷ মাওবাদীরা দারিদ্র্য ও অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে আদিবাসী পরিবারের ছেলে বা মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়৷ এদের বয়স গড়ে ১০ থেকে ১৫ বছর৷ তাদের নিজেদের শিবিরে রাখে৷ আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর ট্রেনিং দেয়৷ মেয়েদের সাধারণত লাগানো হয় রান্নাবান্নার মতো কায়িক কাজে কিংবা নেতাদের হুকুম তামিলের কাজে৷ মাওবাদীদের ক্যাডার ক্রমশ কমে আসায় এইভাবে সেটা পূরণ করা হয়৷ বাচ্চাদের নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধির দিকে নজর রাখতে বলা হয়৷ গোপন খবরাখবর আদানপ্রদান করে ক্যুরিয়ার হিসেবে৷

Nobelpreis 2014 Friedensnobelpreis Kailash Satyarthi
ভারতের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থীছবি: Ravi Raveendran/AFP/Getty Images

কিন্তু সরকার এসব কথা মানতে নারাজ৷ অভিযোগ এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অধিকর্তা সুহাস চাকমার৷ তাঁর আরও অভিযোগ, মাওবাদী মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনীতে ‘আর্দালি’ হিসেবে নিয়োগ করা হয় ১৮ বছরের কম বয়সের কয়েকশ’ ছেলেকে৷ তাদের পড়াশুনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরেও আছে এমন তিন থেকে চার হাজার শিশু যাদের বয়স ১৫ বছরের নীচে৷

অশান্ত জম্মু-কাশ্মীরে সম্প্রতি একটা নতুন, কিন্তু বিচলিত করার মতো প্রবণতা দেখা দিয়েছে৷ জেহাদি গোষ্ঠীগুলি তাদের এজেন্টের মাধ্যমে নাবালকদের সন্ত্রাসবাদের দিকে টেনে আনছে৷ কিছুদিন আগে আড়াইশ’র মতো কাশ্মীরি কিশোর জঙ্গিবাদে যোগ দিয়েছে৷ ইসলামের নামে এদের মগজ ধোলাই করছে জইস-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা, হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন৷ তারপর ট্রেনিং দিচ্ছে কিভাবে গুলি ও গ্রেনেড ছুঁড়তে হয়, কিভাবে পুলিশের ওপর পাথর বৃষ্টি করতে হয়৷ কিন্তু এদের মোকাবিলায় পাল্টা গুলি চালালে বিপদ আরও বাড়বে৷ তাই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বেগ বেড়েছে৷ মানব ঢাল কাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে নাগরিক সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর উভয়সঙ্কটে পড়েছে নিরাপত্তা বাহিনী৷

এই উদ্বেগ আরো বেড়েছে ইসলামিক স্টেটের দৌরাত্মে৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আইসিস শরণার্থী বাচ্চাদের মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে৷ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এরা সক্রিয়৷ এদের এজেন্টরা জম্মু-কাশ্মীর ছাড়াও তামিলনাড়ু এবং কেরালা রাজ্য থেকে নাবালকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত করছে৷ সম্প্রতি ১৫ বছরের নীচে কিশোরদের ১৪ জনের দুটো দলকে পুলিশ আটক করেছে৷ পুলিশের মতে, এরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল গুলি ও গ্রেনেড ছোঁড়ার ট্রেনিং নিতে৷ ধরা পড়ার পর এরা বলে তাঁরা যাচ্ছিল অ্যাডভেঞ্চার করতে৷ পুলিশের ধারণা, এদের অস্ত্রশস্ত্র দেয়া-নেয়ার কাজেও লাগানো হয়৷ এরাই এখন কাশ্মীরে সন্ত্রাসের নতুন মুখ৷

বাচ্চাদের উগ্রবাদের দিকে টেনে আনার প্রবণতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাশ সত্যার্থী৷ সম্প্রতি তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, বিশ্ব নেতা হিসেবে তাঁরা যেন শিশুশ্রম নিবারণ এবং বাচ্চাদের শিক্ষার প্রসারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেন জরুরি ভিত্তিতে৷ না হলে কিশোর-কিশোরীরা জড়িয়ে পড়বে উগ্রবাদের চোরাবালিতে৷ হারিয়ে যাবে তাঁদের শৈশব৷ এই লক্ষ্যে মোদী-ট্রাম্প কী কী পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবছেন তা যেন তাঁদের যৌথ বিবৃতিতে স্থান পায়৷ উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবার কথা ২৬শে জুন৷ শিশু সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন যোগ দিতে বচপন বাঁচাও আন্দোলনের প্রাণপুরুষ সত্যার্থীও আছেন যুক্তরাষ্ট্রে৷ তিনি ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের সরে আসার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান৷ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিণাম শিশুদের জন্য মারাত্মক হোতে পারে৷ এই সব শিশুর অভিভাবকদের মধ্যে কর্মহীনতার হার বাড়ছে৷ তাঁদের বাচ্চারা পাচার হয়ে যাচ্ছে৷ সামাজিক উত্তেজনা বাড়ছে৷ বাচ্চারা পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে রোজগারের ধান্দায় বিপথে চলে যাচ্ছে৷

‘বাচ্চাদের উগ্রবাদী দলে যোগ দেবার বিষয়টা আমাদের ঠিক জানা নেই’

এ বিষয়ে চাইল্ড লাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের কর্তাব্যক্তি সন্দীপ কুমার মিত্র ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় বললেন, ‘‘আমরা যেটুকু জানি, তাতে বাচ্চাদের নানা লোভ দেখিয়ে পাচার করা হয়৷ তারপরে নানা কাজে ঢোকানো হয় শিশু শ্রমিক হিসেবে কিংবা রেডলাইট এলাকায় পয়সা রোজগারের জন্য৷ কিছুদিন তাঁরা বাড়িতে টাকাপয়সাও পাঠায়৷ তারপর টাকা পাঠানো বন্ধ হলে মিসিং চিলড্রেন হিসেবে ডাইরি করা হয় এবং পুলিশের সহায়তায় আমরা তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করে থাকি৷ কিন্তু পাচার হওয়া বাচ্চাদের উগ্রবাদী দলে যোগ দেবার বিষয়টা আমাদের ঠিক জানা নেই৷’’