1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলপথে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রযুক্তি

২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

পণ্য পরিবহণের জন্য জলপথ সড়ক বা রেলের তুলনায় অনেক বেশি উপযুক্ত, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ জার্মানির বিশাল জলপথ নেটওয়ার্কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা এড়াতে কাজে লাগানো হচ্ছে এক অভিনব প্রযুক্তি৷

https://p.dw.com/p/2puaZ
Deutschland Kohlefrachter auf dem Rhein
ছবি: Imago/Westend61

রাইন নদীর তীরে লোরেলাই টিলা৷ কিংবদন্তি অনুযায়ী জায়গাটা বড় বিপজ্জনক৷ অতীতে সেখানেই নাকি অনেক জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১১ সালে সেই কিংবদন্তি সত্যি ফলে গিয়েছিল৷ এক রাডারের পর্দায় সেই ঘটনা ধরা পড়েছিল৷ ভোর ৪টা ৪২ মিনিটে ভালডর্ফ নামের বিশাল এক ট্যাংকার জাহাজ রাডার থেকে উধাও হয়ে যায়৷ জাহাজে ২,০০০ টন সালফিউরিক অ্যাসিড ছিল৷ সে যাত্রায় ক্যাপ্টেনের মৃত্যু হয়৷ এমন বিশাল দুর্ঘটনার কারণে জার্মানির পরিবহণ মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের এক কমিটি গড়ে তাঁদের তদন্তের ভার দেয়৷

জাহাজ চলাচলের এক নতুন সিমুলেটর সেই দুর্ঘটনার রহস্য সমাধান করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ফেডারেল জলপথ ইঞ্জিনিয়ারিং ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বিএডাব্লিউ সেটি তৈরি করেছে৷ এটি কোনো ভিডিও গেম নয়, বরং একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র৷ টর্স্টেন ডেটমান এ বিষয়ে বলেন, ‘‘প্রথম দর্শনে ভিডিও গেম মনে হলেও আমরা অনেক পরিশ্রম করে প্রকৃতি ও জাহাজের বৈশিষ্ট্য নকল করে এমন সিমুলেশন সৃষ্টি করেছি, যা নদীর উপর বাস্তব পরিস্থিতির হুবহু প্রতিফলন ঘটায়৷''

সিমুলেটরের পর্দায় নজর দিলে সত্যি সবকিছু খুব বাস্তব মনে হয়৷ এমনকি ক্যাপ্টেনের দাঁড়ানোর জায়গায় দিকনির্ণয় সহ বিভিন্ন কাজের জন্য যে সব যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলিও হুবহু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ আবহাওয়া অনুযায়ী চারিদিক স্পষ্ট অথবা ঝাপসা থাকে৷ টর্স্টেন ডেটমান বলেন, ‘‘সিমুলেটরে আমরা এই দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি৷ আমরাই তথ্য সংগ্রহ করছি, যার কিছুটা সবার নাগালেই রয়েছে৷ কিছু তথ্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপ কেন্দ্র থেকে পাই৷ তাছাড়া মানুষই যেহেতু সিমুলেটরটি চালায়, অনেক কিছুই তার নজরে পড়ে৷ সে কারণে আমাদের ভিসিবিলিটি সিস্টেমের প্রয়োজন, যদিও তার ফলে কাজ অনেক বেড়ে যায়৷

আকাশ থেকে স্ক্যান করে জার্মানির জলপথের থ্রিডি মডেল তৈরি করা হয়েছে৷ তবে রাডার প্রতিফলনের মাধ্যমে নদীর তলদেশের পরিমাপ তার থেকেও বেশি জরুরি৷ কারণ তলদেশের কাঠামো জটিল স্রোত সৃষ্টি করে, যা জাহাজ চলাচলের উপর জোরালো প্রভাব ফেলে৷

নিউমারিক মডেলের মাধ্যমে নদীর তীর পর্যন্ত পানির স্রোতের গতি-প্রকৃতি হিসেব করা হয়৷ তাছাড়া জাহাজের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও গোটা প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে৷ প্রত্যেকটি জাহাজই সেই অর্থে ভিন্ন এবং নদীর স্রোতের সঙ্গে তার ঘাত-প্রতিঘাত আলাদা৷ তাই আলাদা করে সব জাহাজের আচরণ আগেই পরিমাপ করা হয়৷ টর্স্টেন ডেটমান বলেন, ‘‘আমরা সাধারণত সেই ক্যাপ্টেনকে নিয়ে আসি, যিনি সাধারণত জাহাজ চালান৷ তিনি আমাদের সিমুলেটরে জাহাজের ভার্চুয়াল মডেলটি চালিয়ে বলেন, তিনি এখানে অবিকল আসল জাহাজ চালানোর স্বাদ পাচ্ছেন৷ একমাত্র তখনই কোনো জাহাজ আমাদের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পায়৷ তারপর সেটিকে আমরা পরীক্ষার কাজে লাগাই৷''

ভালডর্ফ জাহাজের ক্ষেত্রে সিমুলেটরের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়, যে স্রোত, পানির উচ্চতা অথবা অন্য কোনো জাহাজ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল না৷ জানা গেছে, পণ্য বোঝাই করার সময়ে একটি ত্রুটির কারণে বিপর্যয় ঘটেছিল৷

ঠিক সিমুলেটরের মডেলের মতো মূল জাহাজের ট্যাংক অর্ধেকটা ভর্তি ছিল৷ তাই সেই তরল পদার্থ ট্যাংকের মধ্যে নড়াচড়া করছিল৷ ফলে জাহাজের ল্যাটারাল পোজিশন বা পার্শ্বীয় অবস্থান আরও গতিশীল হয়ে ওঠে৷ তখন জাহাজটি তীরের মাটিতে ধাক্কা খায়৷

এই কেস উন্নত সিমুলেটরটির উৎকর্ষের প্রমাণ দেয়৷ তারপর থেকে জার্মানির জলপথে সম্ভাব্য বিপদের আঁচ পেতে সেটিকে নিয়মিত কাজে লাগানো হচ্ছে৷

ইয়র্গ ভল্ফ/এসবি