জার্মানদের ছোট্ট বাগান বাড়ি
বিদেশিরা ভেবে হয়তো অবাক হন, জার্মানরা কেন বাগানের জন্য প্রচুর জায়গা রেখে ছোট ছোট বাড়ি তৈরি করেন৷ ‘শ্রেবারগার্টেন’ নামে পরিচিত এই ঐতিহ্যের পেছনের কাহিনি রয়েছে আজকের ছবিঘরে...
বাগান
জার্মানিতে ভ্রমণের সময় অনেক পর্যটকই বিস্মিত হন জায়গায় জায়গায় কুটিরঘর আর ফাঁকা জায়গা দেখে৷ এটি আসলে বাগানের জন্য বরাদ্দ জায়গা৷ তিন নামে জার্মানদের মধ্যে এটি পরিচিত– শ্রেবারগার্টেন, ক্লাইনগার্টেনআনলাগে বা গার্টেনকলোনি৷ প্রত্যেক ছোট প্লটে একটি কুঁড়েঘর থাকবেই৷ আর মানুষ এসব জায়গা বাগান করতে ভাড়া নেন৷
প্রবক্তা ডক্টর শ্রেবার
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্যাপক নগরায়নের প্রেক্ষিতে জার্মানির লাইপজিশ শহরের চিকিৎসক ডানিয়েল গটলব মরিৎস শ্রেবার শহুরে যুবাদের মধ্যে বাইরে খেলাধূলা ও অন্যান্য সমাজকর্মের প্রসারে কাজ শুরু করেন৷ তাঁর মৃত্যুর পরে ১৮৬৪ সালে ‘শ্রেবারফেরাইন’ সংস্থাটি তাঁর স্মৃতিতে গড়ে ওঠে৷ তারা বিভিন্ন পরিবারের জন্য মাঠ খুঁজে দিতো যাতে খেলাধূলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা হয়৷ পরে বাগান তৈরির ব্যাপারটি যুক্ত হয়৷
গরীবের বাগান
তবে এর আগেও ভূমির মালিক, শিল্প কারখানা মালিক, নগর ব্যবস্থাপনা এবং সেবা সংস্থাগুলো অপেক্ষাকৃত গরীব পরিবারগুলোকে খোলা জায়গায় বাগান করার ব্যবস্থা করে দিতো৷ ‘আমেনগার্টেন’ বা গরীবের বাগান নামে পরিচিত ছিল এটি৷ ১৮২৬ সালে ১৯টি শহরে এই ধরনের বাগান করার তথ্য পাওয়া যায়৷
মানসিক প্রশান্তির জায়গা
তাজা খাবার জোগান দেওয়া ছাড়াও এসব বাগান হয়ে ওঠে মানসিক প্রশান্তি ও বিশ্রামের জায়গা৷ ছবিটি ১৯০৬ সালে আঁকা৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন জার্মান ‘স্কাট’ নামের একটি কার্ড গেম খেলছেন৷
যুদ্ধ ও বাগান
দুই দফা বিশ্বযুদ্ধে জড়ানো জার্মানির মানুষের খাদ্যাভাব পুরণ করতে এই বাগানগুলোর বিশেষ ভূমিকা ছিল৷ কারণ, যুদ্ধ চলাকালীন খাবার সবসময় বাজারে পৌঁছাতো না৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বাগানের ইজারা নেওয়ার খরচও এ কারণে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ ছবিটি অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিন থেকে তোলা৷
বাগানের আইন
জার্মানিতে এই বাগান নিয়ে রীতিমতো আইন রয়েছে৷ সেখানে স্পষ্ট বলা রয়েছে, বাগানের কুঁড়েঘরটি থাকার জন্য ব্যবহার করা যাবে না এবং এটি একটি নির্ধারণ করে দেওয়া আকারের চেয়ে বড় হতে পারবে না৷ বাগানের তিন ভাগের এক ভাগে অন্তত সবজি বা ফল চাষ করতে হবে৷
সবুজ রাখা
ইজারা নেওয়া বাগানের মালিকেরা নিজের বাগানকে সবসময় সবুজ রাখার চেষ্টা করেন৷ সাধারণত এ ধরনের বাগানের জন্য এমন জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয় যেখানে কেউ সচরাচর থাকতে চান না৷ যেমন– রেলপথের পাশে৷ বার্লিনের দেওয়ালের দুইপাশেও প্রচুর বাগান ছিল৷ ছবিতে ১৯৮২ সালে পশ্চিম বার্লিনের এমন বাগান দেখা যাচ্ছে৷ পূর্ব জার্মানির সরকার ১৯৫০ সালে এ ধরনের বাগানগুলোকে যৌথ বাগানে রূপান্তরের চেষ্টা করলেও পরে সেই উদ্যোগ থেকে সরে আসে৷