1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে আসাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু

২৭ নভেম্বর ২০২০

জার্মানির আদালতে চলছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের তদন্ত৷ আদৌ কি সম্ভব হবে আসাদের বিচার সম্পন্ন করা?

https://p.dw.com/p/3lvbs
Syrien Ein Schatten fällt auf die Fahne mit dem Portait von Präsident Bashar Assad
ছবি: Muzaffar Salman/AP Photo/picture-alliance

২০১৩ সালে সিরিয়ার ঘোটা শহরে ও ২০১৭ সালে খান শেইখুন শহরে ছাড়া হয় সারিন গ্যাসবোমা, যা আদতে যুদ্ধে ব্যবহৃত অন্যতম রাসায়নিক অস্ত্র৷ এই বিষাক্ত সারিন গ্যাসের প্রকোপ শ্বাসরোধ করে মারে ঘোটা শহরের অন্তত এক হাজার বাসিন্দাকে, যার মধ্যে চারশ' ছিল শিশু৷

এভাবে সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের চোখে যুদ্ধাপরাধের সমান৷ এই ভয়াবহ হামলার ফলে বহু সিরিয়ান মারা গেলেও অনেকে প্রাণে বেঁচে, পালিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেন৷

বর্তমানে জার্মানিতে বাস করছেন ছয় লাখেরও বেশি সিরীয় শরণার্থী, যাদের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সময় গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে নিজেদের ভূমিকার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হয়েছে৷ জানাতে হয়েছে যে তারা আক্রমণকারীদের সাথে যুক্ত ছিলেন, না কি আক্রান্তদের দলে৷

গ্যাসবোমার বিষাক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেবার মুহূর্তেও অনেকে ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিলেন ভয়াবহতার চিত্র, যা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে সিরিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করার মামলায়৷

বিচার শুরু

২০২০ সালের এপ্রিলে প্রথম জার্মানির কোবলেনৎস শহরে সিরীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়৷ যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা বিষয়ে জার্মানির আন্তর্জাতিক এক্তিয়ারে মামলাটি গৃহীত হয়৷ ২০০২ সালে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে জার্মানির নিজস্ব এক্তিয়ারকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর্যায়ে সমমর্যাদার করা হয়৷

এপ্রিলের মামলায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ওপর ধারাবাহিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ ওঠে৷ এরপর অক্টোবর মাসের শুরুতে ওপেন সোসাইটি জাস্টিস ইনিশিয়েটিভ, দ্য সিরিয়ান আর্কাইভ ও সিরিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন, এই তিনটি সংস্থা একত্রে কার্লসরুয়ে শহরের সরকারি আইনজীবীর কাছে আরেকটি মামলা নথিভুক্ত করেন৷

কার্লসরুয়ের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ বিভাগ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে যে তারা এবিষয়ে তদন্ত করছে ও যথাযথ তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছে৷ কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু তারা এখনই জানাতে নারাজ৷

বিশ্ব রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার নথি ও সাক্ষীদের দেখার সুযোগ পেয়েছে একমাত্র ডয়চে ভেলে ও ডেয়ার স্পিগেল৷

তথ্যপ্রমাণ ও বিচারের ভবিষ্যৎ

ঘোটা ও খান শেইখুন শহরে সারিন গ্যাসবোমা হামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রমাণ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে অসংখ্য ছবি, ভিডিও ও নথি৷ পাশাপাশি, সিরিয়া থেকে পালিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া এমন ৫০ জনের সাক্ষ্য এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যারা এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী৷ শুধু তাই নয়, এই দুই শহর থেকে হামলাপরবর্তী সময়ে সংগৃহীত স্যাম্পলের ভিত্তিতে জাতিসংঘও এই ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধের তকমা দিয়েছে৷

প্রাপ্ত প্রমাণ স্পষ্টভাবে আঙুল তুলছে প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার ভাই মাহের আসাদের দিকে৷ পাশাপাশি, অভিযোগের তীর উঠছে সিরিয়ার সায়েন্টিফিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের দিকেও৷ এই সেন্টার বা এসএসআরসি সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ক শীর্ষ সরকারি প্রতিষ্ঠান৷

কিন্তু জার্মানির মাটিতে শুরু হওয়া এই বিচারপ্রক্রিয়া কি আদৌ কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে আন্তর্জাতিক মহলে? কোনো রাষ্ট্রনায়কের সার্বভৌম সুবিধার কারণে বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে আসাদ পার পেয়ে যেতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে৷ পাশাপাশি এই বিচারপ্রক্রিয়া যে কোনোমতেই সহজ বা স্বল্পমেয়াদি নয়, তাও বুঝছেন অভিযোগকারীরা৷

সিরিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের প্রেসিডেন্ট মাজেন দারউইশ বলেন, ‘‘আমরা জানি এই প্রক্রিয়ায় দশ, বিশ বা ত্রিশ বছর লাগতে পারে৷ আমাদের তাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে৷''

বিচারপ্রক্রিয়াকে শক্ত করতে অভিযোগকারীরা ইতিমধ্যে অন্যান্য ইউরোপিয়ান এক্তিয়ারেও মামলাটি দায়ের করার কথা ভাবছেন৷

জার্মানিতে বিচার শুরু হলেও বর্তমানে জার্মানিতে বাস করা অনেক সিরিয়ানই এই বিচারের প্রভাব সিরিয়ার মাটিতে প্রসারিত হবার স্বপ্ন দেখেন৷ সিরিয়ান আর্কাইভের পরিচালক হাদি আল-খাতিব এবিষয়ে বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপগুলি নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এতে করে মানুষ বুঝতে পারে যে বিচার চাইতে আমরা কেউ ভুলিনি৷ তবে সিরিয়ার মাটিতে এই বিচারের কাজ হলে তা সেখানের মানুষের জন্য একেবারে অন্য অর্থ বয়ে আনবে৷''

আল-খাতিবের সাথে একমত দারউইশও৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা বিচার নয়, এগুলো হচ্ছে বিকল্প পন্থা, কারণ আমি জানি যে একদিন নিশ্চয়ই সিরিয়াতে একটা সম্মানজনক বিচারব্যবস্থা আমরা তৈরি করতে পারব৷''

চতুর্থ লুই স্যান্ডার্স, বিরগিটা শ্যুলকে-গিল, ইউলিয়া বায়ার/এসএস