1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাকা-পয়সা ছাড়া জীবনযাপন

দেবারতি গুহ১৪ জুলাই ২০১৪

হাইডেমারি শয়েরমার আর গ্রেটা টাউবার্ট – না এঁরা কোনোভাবেই একেঅন্যের পরিচিত নন, নন আত্মীয়ও৷ কিন্তু কোথায় যেন তাঁদের মধ্যে একটা ‘আত্মীয়তা’ রয়েছে৷ আত্মীয়তাটা আত্মার, দৃষ্টিভঙ্গির এবং জীবনদর্শনের৷

https://p.dw.com/p/1Cbg7
হাইডেমারি শয়েরমারের জীবনের মন্ত্র ‘গিভ অ্যান্ড টেক'ছবি: AP

হাইডেমারি শয়েরমারের কথা

হাইডেমারি শয়েরমারের পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানার জায়গাটা খালি৷ ৬৪ বছর বয়স্ক এই মনস্তত্ববিদ গত প্রায় ১০ বছর ধরে দৈনন্দিন জীবনের জন্য আবশ্যক কোনো জিনিসপত্র ছাড়াই জীবনযাপন করছেন৷ অথচ হাইডেমারি শয়েরমার কিন্তু ভিখারি নন অথবা তাঁকে রাস্তায় দিনযাপনও করতে হয় না৷ অবাক হচ্ছেন?

টাকা-পয়সা ছাড়া আজকের দুনিয়ায় তো কিছুই পাওয়া না৷ এ পরিস্থিতেও হাইডেমারির দিন কাটছে ভালোই৷ ভালো খাচ্ছেন, ভালো ভালো বই পড়ছেন, নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এমনকি ভালো নাটক-সিনেমাও দেখছেন! কিন্তু কিভাবে?

Heidemarie Schwermer lebt seit 15 Jahren ohne Geld
হাইডেমারির সহায়-সম্পত্তি বলতে এক জোড়া চশমা আছেছবি: AP

হাইডেমারি শয়েরমার বেছে নিয়েছেন সেই পুরোনো দিনের বিনিময় প্রথা৷ লোকের বাড়িতে কাজ করেন – তা সে যে কোনো কাজই হোক৷ বাড়ি পরিষ্কার করা, ঘর গোছানো, রান্না করা, ছেলে-মেয়েদের পড়ানো, তাদের দেখাশোনা করা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা অসুস্থদের শুশ্রুষা করা, এমনকি চুল কাটার কাজ করতেও তাঁর কোনো অসুবিধা হয় না৷ কখনও কখনও মনস্তাত্ত্বিকের ভূমিকাও নিতে হয় তাঁকে৷ নিজের সম্পর্কে হাইডেমারি শয়েরমার বলেন, ‘‘আমার কিছুই নেই, অথচ আমি অনেক কিছুই৷''

এসব কাজের বিনিময়ে তিনি খাবার পান, থাকার জায়গা পান, মোবাইল ফোনের কার্ড সংগ্রহ করেন, এমনকি যাতায়াতের জন্য ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থাও হয়ে যায়৷ যেমন ধরুন, তাঁর যদি কোনো নাটক দেখার ইচ্ছা হয়, তবে তিনি থিয়েটার হলের সামনে উপস্থিত হয়ে এমন কোনো মানুষের খোঁজ করেন, যিনি হাইডেমারির পক্ষে করা সম্ভব এমন কোনো কাজের বিনিময়ে টিকিট কেটে দেবেন৷ দেওয়া আর নেওয়া বা ‘গিভ অ্যান্ড টেক'-ই হাইডেমারির জীবনের মন্ত্র৷

Greta Taubert
অন্তত একটা বছর আর্থিক লেনদেন থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন গ্রেটা টাউবার্টছবি: DW/N. Wojcik

এভাবে ভালোই আছেন হাইডেমারি শয়েরমার৷ তাঁর কথায়, ‘‘পয়সা কড়ি, মাথার উপরের ছাদ ছাড়াই শান্তিতে আছি''৷

গ্রেটা টাউবার্টের গল্প

মাত্র ৩০ বছর বয়স গ্রেটা টাউবার্টের৷ কিন্তু এরই মধ্যে খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-আশাক আর বাজারকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে যেন একটা বিতৃষ্ণা এসে গেছে তাঁর মনে৷ তাই একরকম হঠাৎ করেই নিয়েছিলেন টাকা-পয়সা ছাড়া জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত৷ সারা জীবনের জন্য নয়, চেয়েছিলেন অন্তত একটা বছর আর্থিক লেনদেন থেকে দূরে থাকতে৷

থেকেছেনও৷ কোনো প্রয়োজনে একটা সেন্টও খরচ করেননি৷ দোকান থেকে কিচ্ছু কেনাকাটা নয়, যা লাগবে সব নিজে তৈরি করো অথবা বর্জন করো – এই ছিল তাঁর ‘মটো'৷ এই পরিকল্পনা নিয়েই শুরু করেছিলেন নিজের বাগানে চাষাবাদের কাজ৷ একটা সময় তো তাঁকে চুল পরিষ্কার করার জন্য শ্যাম্পুটাও নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে, তাও আবার কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস দিয়ে৷

Suche nach Kleidung
পুরনো জামা আর ফার্নিচার সংগ্রহ করছেন গ্রেটা টাউবার্টছবি: privat

আসলে কৈশোর থেকে মাঝেমাঝেই বৈষম্যহীন এক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন গ্রেটা৷ স্বপ্ন দেখতেন এমন এক সমাজের, যেখানে সব মানুষ সমান৷ সমান শুধু জাতি-ধর্মের দিক থেকেই নয়, আর্থিক দিক থেকেও৷

দু'জনের কী মিল!

হাইডেমারি শয়েরমারের মতো গ্রেটারও বাড়ি-গাড়ির কোনো বিমা ছিল না৷ জার্মানিতে তা খুবই অস্বাভাবিক, কারণ, এ দেশে বিমা ছাড়া চিকিৎসার ব্যয় মেটানো প্রায় দূরূহ৷ তাই তাঁদের অসুস্থ হওয়ারও কোনো উপায় ছিল না৷ এটা এক বড় ঝুঁকি বই কী!

হাইডেমারি শয়েরমার আর গ্রেটা টাউবার্টের জন্ম কিন্তু বেশ অবস্থাপন্ন পরিবারে৷ কিল শহরে শিক্ষা-বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়েছেন হাইডেমারি৷ আর গ্রেটা পড়েছেন মনস্তত্ব৷ অথচ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর দু'জনেরই মোহ খুব কম৷ বাড়ি-গাড়ি, সম্পত্তি, প্রাচুর্য – এসব তাঁদের কাছে সত্যিই বাতুলতা৷

তাহলে কি তাঁদের সহায়-সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই তাঁদের? তা আছে৷ হাইডেমারির আছে এক জোড়া চশমা৷ ‘‘বাহ্ রে, চশমা ছাড়া পড়াশুনো করবো কী করে?'' বললেন হাইডেমারি শয়েরমার৷ আর গ্রেটা টাউবার্টের আছে প্রায় খান পঞ্চাশেক বই!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য