1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তুর্কি বংশোদ্ভূতরা কীভাবে ভোট দেবেন?

২৮ আগস্ট ২০১৭

জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার রয়েছে৷ এতকাল তাদের একটা বড় অংশ মূলত সিপিডি দলকেই ভোট দিয়ে এসেছে৷ বর্তমান জার্মান-তুর্কি সংকট তাঁদের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে?

https://p.dw.com/p/2iwFO
প্রতীকী ছবিছবি: picture alliance/abaca/Depo Photo

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান গত সপ্তাহে জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত ভোটারদের উদ্দেশ্যে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে তিনটি রাজনৈতিক দলকে বর্জন করার ডাক দিয়েছেন৷ ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন শিবির ও এসপিডি ছাড়াও বিরোধী সবুজ দলও ‘তুরস্কের শত্রু' তালিকায় রয়েছে৷ মুস্তাফা বাইহান এমন দাবি সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এদের ভোট না দিয়ে তাহলে কি উদারপন্থি এফডিপি বা চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলকে ভোট দেবো?''

সামাজিক গণতন্ত্রীদের প্রতি চিরায়ত সমর্থন

আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর তুর্কি বংশোদ্ভূত প্রায় ১২ লক্ষ ভোটারের মনে একই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে৷ ডেটা-ফর-ইউ নামের এক জনমত বিশ্লেষণকারী সংস্থার উমুট কারাকাস বলেন, ‘‘আমরা জানি, জার্মানিতে বসবাসরত বেশিরভাগ তুর্কি আসলে বেশ রক্ষণশীল৷ সেই অর্থে তাদের সিডিইউ ও সিএসইউ দলকে ভোট দেওয়া উচিত৷ অন্যদিকে তুর্কিরা মূলত শ্রমিক শ্রেণির হওয়ায় তাদের রাজনৈতিক অবস্থান বামপন্থি৷ অর্থাৎ তাঁরা মূলত এসপিডি অথবা সবুজ দলকেই ভোট দিয়ে থাকেন৷

বন সম্পর্কে পাঁচটি তথ্য

চার বছর আগে গত সাধারণ নির্বাচনের ঠিক পরে তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষদের মধ্যে এক জনমত সমীক্ষা চালিয়েছিল ডেটা-ফর-ইউ সংস্থা৷ তাতে প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, যে তাঁরা এসপিডি দলকে ভোট দিয়েছেন৷ ১২ শতাংশ সবুজ দলকে ভোট দিয়েছিলেন বলে জানান৷ অন্য এক সূত্রেও একই প্রবণতা দেখা গেছে৷ গত বছরের নভেম্বর মাসে এক সমীক্ষায়ও এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি৷ তাতে ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ এসপিডি-র প্রতি সমর্থন জানান৷

উত্তেজনা বাড়ছে

তুর্কি বংশোদ্ভূত ভোটারদের মধ্যে ইউনিয়ন দল সম্পর্কে অনীহার পেছনে শুধু ‘খ্রিষ্টীয়' নামটি কাজ করছে না, সিডিইউ ও সিএসইউ দলের কর্মসূচিও তার অন্যতম কারণ৷ যেমন এই দুই দল বেশ কিছুকাল ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের যোগদানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে রয়েছে৷ দ্বৈত নাগরিকত্বের বিরোধিতা ও ‘মূল জার্মান সংস্কৃতি' নিয়ে তাদের ছুৎমার্গও তুর্কি বংশোদ্ভূত ভোটারদের দূরে সরিয়ে রেখেছে৷ তাছাড়া মূলত বামপন্থি দলগুলিতেই তুর্কি বংশোদ্ভূত সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমকায় দেখা যায়৷ বর্তমানে যে ১১ জন তুর্কি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন এসপিডি দলের, তিনজন সবুজ দলের এবং দু'জন বামপন্থি ‘ডি লিংকে' দলের৷ মাত্র এক জন সিডিইউ দলের৷ এসপিডি দলের উপ সভাপতি আইদান ও্যসোউস ও সবুজ দলের প্রধান চেম ও্যজদেমির তুর্কি বংশোদ্ভূত৷

গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে বার্লিন ও আংকারার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে৷ আর্মেনীয়দের গণহত্যা সম্পর্কে জার্মান সংসদের প্রস্তাবকে তুরস্কের সরকার ও জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত অনেক মানুষ প্ররোচনা হিসেবে গ্রহণ করেছেন৷ তুরস্কে অভ্যুত্থানের পর থেকে সেদেশে আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে জার্মানির অভিযোগ৷ প্রেসিডেন্টের হাতে বিপুল ক্ষমতা তুলে দিতে গণভোটের ফলেও জার্মানিতে তুমুল সমালোচনা শোনা গেছে৷ জার্মানিতে তুর্কি রাজনীতিকদের নির্বাচনি প্রচার নিয়ে বচসা, তুরস্কে জার্মান সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে৷ এবার এর্দোয়ান যেভাবে কয়েকটি জার্মান রাজনৈতিক দলকে বর্জন করার ডাক দিয়েছেন, তার ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে৷ এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, বর্তমান উত্তেজনার কতটা প্রভাব ভোটারদের উপর পড়বে? ডেটা-ফর-ইউ সংস্থার এক সমীক্ষা অনুযায়ী অনেক তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষ শুধু তুর্কি সংবাদমাধ্যম থেকে খবরাখবর নেন৷

নির্বাচনের প্রতি বেড়ে চলা অনীহা

এর্দোয়ানের ডাক কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ কিন্তু আদৌ এমন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা নিয়ে বার্লিনে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷ দুই প্রধান দলের নেতাই তুর্কি বংশোদ্ভূত ভোটারদের উদ্দেশ্যে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন৷ কিন্তু অনেকে মনে করছেন, এই ভোটাররা আসন্ন নির্বাচনে আরও কম সংখ্যায় ভোট দেবেন৷ এমনটা হলে এসপিডি দলেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে৷ এই অবস্থায় নেদারল্যান্ডসের মতো জার্মানিতেও অভিবাসীদের কোনো দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে৷

প্রতিবেদন: ক্রিস্টফ রিকিং/এসবি