জার্মানির ভয়ংকর যত সিরিয়াল কিলার!
সিরিয়াল কিলাররা শুধু মানুষই খুন করেন না, তারা ধর্ষণ, শিশু উৎপীড়ন কিংবা নরমাংস ভক্ষণের মতো ভয়ঙ্করতম অপরাধগুলোর অনেকগুলোই করেন৷আসুন, জার্মানির কিছু ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলারের সঙ্গে পরিচিত হই৷
ম্যুনস্টারব্যর্গের নরখাদক
১৯০৩ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে তৎকালীন প্রুসিয়া (বর্তমান ম্যুনস্টারব্যর্গ)-এ নিজের বাড়িতে কার্লে ডেনকে নামক এক ব্যক্তি কমপক্ষে ৪২ জনকে মেরে তাদের মাংস খেয়েছেন৷ ধারণা করা হয়, তিনি গ্রামের মানুষদের মেরে তাঁদের মাংস পোল্যান্ডে শূকরের মাংস বলে বিক্রিও করতেন৷ তার শিকার এক ব্যক্তি পালিয়ে গিয়ে পুলিশকে খবর দিলে মানুষের মাংসসহ কার্লেকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ দু’দিন পরে জেলেই আত্মহত্যা করেন কার্লে৷
হানোফারে আতঙ্ক
১৯১৮ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে ফ্রিটৎস হারমান নামক এক ব্যক্তি কমপক্ষে ২৪ জন বালক ও তরুণকে যৌন উৎপীড়ন, হত্যা ও অঙ্গচ্ছেদ করেছেন৷ হানোফারে এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়৷ আতঙ্কিত স্থানীয়রা তার কাছে ৫শ’ হাড় উদ্ধার করার পর তার অপরাধ ধরা পড়ে৷ তিনি ছিলেন পুলিশের ইনফর্মার৷ ১৯২৫ সালে তার শিরশ্ছেদ করা হয়৷
বার্লিনের কসাই
কার্ল গ্রসমানকে বলা হয় বার্লিনের কসাই৷ তিনি মানুষ মেরে তাদের মাংস বিক্রি করতেন কালোবাজারে৷ একবার চিৎকার শুনে পুলিশ তার বাড়িতে হানা দিয়ে এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে৷ ঠিক কতজনকে গ্রসমান হত্যা করেছেন তার সঠিক হিসেব না থাকলেও অন্তত ২৩ জন নারী তার শিকার বলে ধারণা করা হয়৷ এছাড়া সে সময় আশেপাশে আরো ১০০ জনের নিখোঁজ সংবাদ পাওয়া যায়৷ মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আগেই ১৯২২ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন৷
ফালকেনহাগেন লেকের ভয়
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে ফ্রিডরিশ শুমান অসংখ্য ধর্ষণ, হত্যা ও চুরির মতো অপরাধ করেছেন৷ স্থানীয় এক বনকর্মীর সঙ্গে একবার ঝগড়া হবার পর তাকে গুলি করেন শুমান৷ পরে আদালত তাকে ছয় জনকে হত্যা ও ১১ জনকে হত্যা চেষ্টায় ছয়বার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন৷ ২৮ বছর বয়সি এই যুবক সে সময় স্বীকার করেন যে, তিনি মোট ২৫ জনকে হত্যা করেছেন৷
এস-বান খুনি
১৯৪০ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে নাৎসি যুগের বার্লিনে ৩১টি ধর্ষণ, ৮ জন নারীকে হত্যা এবং আরো ৬ জনকে হত্যার চেষ্টা করেন পাওল অগরসো৷ জার্মানির যাত্রীবাহী রেলের কর্মচারী ছিলেন অগরসো৷ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়ার দু’দিনের মাথাতেই তার শিরশ্ছেদ করা হয়৷
মৃত্যুর কারিগর
১৯৪৬ ও ১৯৪৭ সালে হার্ৎস মাউন্টেনে বর্ডার গার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রুডলফ প্লাইল৷ তখন পূর্ব থেকে পশ্চিম জার্মানিতে অবৈধ নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি৷ তার দুই সঙ্গী নারীদের ফাঁদে ফেলে নিয়ে আসতেন৷ তার বিরুদ্ধে আদালতে একজন দালাল ও নয় নারীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়৷ তবে তিনি ২৫ জনকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন৷ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলেও আট বছর পর আত্মহত্যা করেন৷
ডুইসবুর্গের মানুষখেকো
ইওয়াকিম গেরো ক্রোল একজন সিরিয়াল কিলার, ধর্ষক, শিশু নিপীড়নকারী ও নরখাদক ছিলেন৷ ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি ১৪ জনকে হত্যা করেছেন৷ এদের প্রায় সবাই তরুণী৷ ১৯৭৬ সালে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয়, তখন তার ফ্রিজে মানুষের অঙ্গ পাওয়া যায়৷ এক চার বছরের কন্যাশিশুর কাঁধ ও হাত রান্না করার জন্য তৈরি রেখেছিলেন তিনি৷ ১৯৮২ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ১৯৯১ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তিনি৷
ঠান্ডা মাথার খুনি
১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে অন্তত চার জন নারীকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে ফ্রিটৎস হোনকার বিরুদ্ধে৷ শ্বাসরোধ করে যৌনকর্মীদের মেরে ফেলতেন তিনি৷ এরপর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেন৷ একবার ঘরে আগুন লেগে যাবার পর দমকলকর্মীরা তার বাড়িতে ভিক্টিমদের শরীরের বিভিন্ন অংশ লুকানো অবস্থাতে পান৷
সেন্ট পাওলি’র খুনি
হামবুর্গের রেড লাইট এলাকায় দালালদের জন্য ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করতেন ভের্নার পিন্সনার৷ তিনি ৭ থেকে ১০ জনকে হত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হয়৷ ১৯৮৬ সালে তাকে পুলিশ বিভাগে আনা হলে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে গুলি করেন৷ পরে নিজেকে ও স্ত্রীকে গুলি করেন৷
বিষাক্ত নার্স
কোলন শহরের এই নার্সের নাম মারিয়ানে ন্যোলে৷ ১৯৮৪ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বিষ দিয়ে ১৭ জন রোগীকে হত্যা করেন৷ আরো ১৮ জনকে হত্যার চেষ্টা করেন৷ তবে তার বিরুদ্ধে মাত্র ৭ জনের হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়৷ এই নারী কখনোই তার অপরাধ স্বীকার করেননি৷ এখনো তিনি যাবজ্জীবন জেল খাটছেন৷
রাস্তার শিকারি
ফলকার একার্ট একজন ট্রাক চালক৷ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি কমপক্ষে ৯ জন নারীকে হত্যা করেছেন৷ এর বাইরে আরো চারজনকে ফলকার হত্যা করেছেন বলে পুলিশের ধারণা৷ ইউরোপে ঘুরে ঘুরে যৌনকর্মীদের তুলে নিয়ে পরে তাদের হত্যা করতেন তিনি৷ ভুক্তভোগীর চুল বা অন্য কোনো চিহ্নও রেখে দিতেন ৷ ২০০৭ সালে একার্ট আত্মহত্যা করেন
মৃত্যুর দূত
বাভারিয়ার একটি হাসপাতালে ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালে কমপক্ষে ২৯ জন রোগীকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছেন স্টেফান লেটার৷ তিনি এখন যাবজ্জীবন জেল খাটছেন৷
আরেক হন্তারক নার্স
নিয়েল্স হ্যোগেল রোগীদের হৃদযন্ত্র বন্ধ হবার ইনজেকশন দিতেন৷ দু’জনকে হত্যার অভিযোগ প্রথমে প্রমাণিত হলে ২০১৫ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ তবে সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে, আরো ১০০টি হত্যার সঙ্গে এই ব্যক্তি জড়িত৷ তাই তাকে ভয়ঙ্করতম খুনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷