1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানি যখন আইন কঠোর করে

২৭ নভেম্বর ২০১৭

জার্মানরা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷ জার্মান আইনও সেই স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়৷ কিন্তু বিপত্তি বাঁধে যখন আইনের অপব্যবহার হয়৷ কিংবা আইনি দুর্বলতায় বড় কোন ঘটনার উপযুক্ত বিচার সম্ভব না হয়৷

https://p.dw.com/p/2oFVz
Deutschland Herbststimmung in Moritzburg
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska

জার্মানিতে অভিবাসন, মানে স্থায়ীভাবে থাকা বা জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়া বিদেশিদের জন্য মোটেই সহজ বিষয় নয়৷ সাধারণত এদেশে চাকুরির সুবাদে আসার পর টানা কয়েকবছর বৈধভাবে কাজ করলে কিংবা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর চাকুরি করলে স্থায়ীভাবে থাকার এবং এক পর্যায়ে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ মেলে৷ তবে প্রচলিত অভিবাসন আইনে একটি সহজ ধারা আছে৷ সেটি হচ্ছে, কেউ যদি জার্মান নাগরিক বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি আছে এমন কাউকে বিয়ে করেন তাহলে তিনিও জার্মানিতে স্থায়ীভাবে থাকার এবং নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবেন৷

আইনের এই ধারা ব্যবহার করে অনেকে জার্মানিতে এসেছেন বা জার্মান নাগরিক হয়েছেন, যেটা স্বাভাবিক ব্যাপার৷ কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন আইনের অপব্যবহার হয়৷ অর্থাৎ কেউ কেউ অর্থের বিনিময়ে শুধুমাত্র জার্মানিতে থাকার অনুমতি পেতে বিয়ে করেন কিন্তু একসঙ্গে বসবাস বা সংসার করেন না৷ গত কয়েক দশকে এরকম অর্থের বিনিময়ে বিয়ের অসংখ্য ঘটনা ঘটার পর আইন কিছুটা কড়া করেছে জার্মান সরকার৷ এখন যারা শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আসেন, তারা বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি না পাওয়া অবধি জার্মানিতে বিয়ে করতে পারেন না৷

তবে আইনের ফাঁক গলিয়ে জার্মানিতে বসবাসের অনুমতি এখানেই শেষ হয়ে যায়নি৷ বিয়ের বদলে সন্তান দত্তক নিয়ে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ এখনো রয়ে গেছে৷ ভাবছেন কীভাবে? খুব সহজ৷ জার্মানিতে কোনো এক শরণার্থী পরিবারে একটি সন্তান জন্ম নিল৷ এরপর সন্তানকে নিবন্ধনের জন্য নেয়া হলো নগর ভবনে৷ সেখানে জার্মান নাগরিকত্ব আছে এমন কেউ বললেন, সন্তানটি তাঁর৷ অর্থাৎ তিনি বাবা৷ ব্যস, বাবা যখন জার্মান তখন সন্তানও জার্মান হয়ে যাবে৷ এখন সেই সন্তানের মা, যিনি শরণার্থী কিংবা স্বাভাবিকভাবে জার্মানিতে থাকার উপযুক্ত নন, তিনিও সন্তানের জন্য থেকে যেতে পারবেন৷ এভাবে এক পর্যায়ের সন্তানের আসল বাবাকেও জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি এনে দেয়া যাবে৷

জার্মানিতে বসবাসরত অনেক পুরুষ এভাবে অর্থের বিনিময়ে অন্য কারো সন্তানের ‘কাগুজে বাবা' হন৷ তবে সেইসব মানুষ এগুলো করেন, যারা সাধারণত দেশটিতে সরকারি সুযোগসুবিধা নিয়ে বসবাস করেন৷ কেননা সচ্ছল কেউ বাবা হলে তাঁকে পরিবর্তীতে সন্তানের ভরণপোষণের খরচ দিতে হয়, যা অসচ্ছলদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷

বর্তমানে জার্মান সরকার নকল বাবাদের কীভাবে আটকানো যায় সেই চেষ্টা করছে৷ কিন্তু বিষয়টি আইনগতভাবে বেশ জটিল৷ ফলে আরো কিছুকাল এই পন্থায় জার্মানিতে বসবাসের সুযোগ থেকে যাবে বলে মনে হচ্ছে৷ 

আরাফাতুল ইসলাম
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

জার্মানিতে এভাবে আইনের সরলতার ফাঁক গলিয়ে কার্যত অবৈধ নানা কাজ করা হয়৷ অনেক সময় ছোটখাট বিষয় পুলিশও এড়িয়ে যায় কেননা সেসব বিষয়ে সময় দেয়া পুলিশের জন্য লাভজনক নয়৷ সাইকেল চুরি সেরকম এক ব্যাপার৷ ইউরোপের কেন্দ্রে সাইকেল চুরির ঘটনা নিয়মিতই ঘটে৷ আপনি পুলিশের কাছে গেলে তারা অভিযোগ নেবে বটে, তবে সাইকেল সম্পর্কে এমন সব তথ্য চাইবে যার অধিকাংশই আপনি হয়ত নিজেই জানেন না৷ ফলাফল: কিছুদিন পর পুলিশ আপনার সাইকেলটি পাওয়া যায়নি বলে একটি চিঠি দিয়ে তদন্তের ইতি ঘটিয়ে দেবে৷ আর আইনের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের দেশগুলো থেকে সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী বড় বড় ট্রাক নিয়ে জার্মানিতে আসে, এরপর সাইকেল চুরি করে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যায়৷  

তবে গুরুতর অপরাধ মানে মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ কিছু কিংবা জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা বা উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা রুখতে পুলিশ এবং আইন অত্যন্ত সক্রিয়৷ গত কয়েক বছরে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা সফলতার সঙ্গে রুখতে সক্ষম হয়েছে জার্মানি৷ ফলে ফ্রান্স বা বেলজিয়ামে যে পরিধির সন্ত্রাসী হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে উগ্রপন্থিরা, জার্মানিতে তা পারেনি৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷