1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঝুঁকির মুখে দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২২ এপ্রিল ২০২০

করোনা-সংকটের মাঝেই বর্ষা আসন্ন৷ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা৷ ইউএনএইচসিআর বলছে, করোনার কারণে যোগাযোগ ব্যবন্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় সেখানে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া যায়নি আর তাই ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে৷

https://p.dw.com/p/3bGKd
ফাইল ছবিছবি: Getty Images/P. Bronstein

স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় সামাজিক দূরত্ব এবং লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে৷ আর রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প এলাকায় উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেছে৷

 তবে সংকট কাটাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বাত্মক চেষ্টা করছে৷ তারা বলছে, এরইমধ্যে করোনাকে মাথায় রেখে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে৷ মার্চ থেকেই সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে৷ কমপক্ষে দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ তারা ৯ লাখ রোহিঙ্গাকে সব ধরনের সেবা দিতে যা যা প্রয়োজন করছেন৷ আর করোনা পরিস্থিতিকে মাথায় রেখেই এটা করা হচ্ছে৷ কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং খাদ্যের অপর্যাপ্ততা তাদের ভাবিয়ে তুলছে৷

৪৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন করোনার কারণে লকডাউন করা হয়েছে৷ তাই চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে৷ খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কৌশলেও আনা হয়েছে পরিবর্তন৷ এখন আর একসঙ্গে বিতরণ করা হয় না৷ একাধিক দিনে ভাগ ভাগ করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয় বলে জানান ব্র্যাকের একজন কর্মকর্তা৷

কক্সবাজারের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা করোনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত৷ এরই মধ্যে আমরা একটা বৈঠক করেছি৷ আরো একটি বৈঠক করবো বর্ষার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে৷ তবে আমাদের আগের যে প্রস্তুতি, সেটা আছে৷ ভলান্টিয়াররা প্রস্তুত আছে৷ তার সঙ্গে প্রয়োজনে আরো নতুন কিছু যোগ করবো৷ করোনার কারণে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও জরুরি সেবা তো চালু আছে৷’’

আমরা করোনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত: কক্সবাজারের ডিসি

করোনার জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০০ বেডের একটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে৷ আর ভিতরে ২৫০ বেডের ৩-৪ টা হাসপাতাল আছে৷ কোয়ারান্টিন সেন্টারও তৈরি করা হয়েছে৷ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্যাম্পের ভিতরে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায়ে তাদের সহয়াতা করছে বলে জানান তিনি৷

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে এখনো করোনা পজিটিভ কেউ নেই৷ তবে ৪০ জনের মতো কোয়ারান্টিনে আছেন বলে জানান কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান৷

কক্সবাজারে আইইডিসিআর-এর যে করোনা টেস্টিং ল্যাব আছে সেখানেই রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও টেস্টের সুযোগ পাচ্ছেন৷ আর তাদের জন্য ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে করোনা চিকিৎসার জন্য ১০০টি বেড প্রস্তুত আছে৷ এক সপ্তাহের মধ্যে আরো এক হাজার বেড প্রস্তুত হবে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন৷ তিনি বলেন, ‘‘সামনে বর্ষার মৌসুম৷ সেটাও আমাদের মাথায় আছে৷ সব মিলিয়েই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি৷’’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন ছাড়াও ইউএনএইচসিআর, আইওএম এবং ব্র্যাক বড় আকারে কাজ করে৷ ইউএনএইচসিআর বলছে, ২০১৯ সালের বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের ক্যাম্পে প্রায় চার হাজার পরিবার সাময়িকভাবে বাস্তুচ্যূত হন৷ ক্ষতিগ্রস্ত হন ১৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ৷ তবে আগাম ব্যবস্থা নেয়ায় ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ক্ষতি কম হয়৷ ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, শরণার্থীদের জীবন রক্ষার কৌশলগুলো শেখানো হচ্ছে৷ তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবককে দ্রুত সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ তারপরও বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে৷ ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজেও দেরি হচ্ছে৷ লকডাউন থাকায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণ সরবরাহও কঠিন হয়ে পড়েছে৷

ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে করোনা চিকিৎসার জন্য ১০০ বেড প্রস্তুত আছে: ডা. মাহবুব

ইউএনএইচসিআররের এই শঙ্কার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন ৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা এটা কেন বলল তা আমরা পর্যালোচনা করে দেখবো৷ তবে বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি আছে৷ এর সঙ্গে কারোনাও যুক্ত হয়েছে৷’’

বর্ষা মৌশুমে ঘূর্ণিঝড় ও টানা বৃষ্টির কারণে আবাসন সংকট তৈরি হয়৷ স্বাস্থ্য সেবা, স্যানিটেশন ও খাদ্য সংকট তৈরি হয়৷ বন্যা বা বড় কোনো টর্নেডো হলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়৷ আর সেগুলো বিবেচনায় রেখে যদি বর্ষাকালের স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকে, তাহলে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্ষতির মুখে পড়বেন৷ যদি বর্ষা পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়, তাহলে এই সংখ্যা দুই লাখ হবে বলে জানান ব্র্যাকের একজন কর্মকর্তা৷ তিনি জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত ২০ দিনের খাবার মজুদ আছে৷ এখন স্থানীয়ভাবে খাবার সংগ্রহ কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে৷’’

শুধু রোহিঙ্গা নয়, ক্যাম্প এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সহায়তা দিতে হয়৷ তাদের সংখ্যা চার লাখের কম নয়৷
ব্র্যাকের হিউম্যানিটেরিয়ান ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের এরিয়া ডিরেক্টর হাসিনা আক্তার হক বলেন, ‘‘এখানে সবাই মিলে প্রস্তুতি নেয়া হয়৷ বর্ষাকালের সেই প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি নেই৷ করোনার কারণে প্রস্তুতির কোনো সংকট তৈরি হয়নি৷ আর সামাজিক দূরত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকটের কারণে জরুরি সহায়তা বাধার মুখে পড়ছে না৷’’