1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে কে?

২২ আগস্ট ২০১০

সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে একটি আফগান মেয়ের মুখের ছবি ছাপা হয়৷ কোন সাধারণ ছবি নয়, অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটি ছবি৷ কারণ মেয়েটির নাক কেটে নেওয়া হয়েছে৷ কেটে নিয়েছে তালেবান৷ আফগানিস্তানে মেয়েদের অবস্থান এখন কোথায়?

https://p.dw.com/p/OtQT
Time, magazine, Afghan, woman, Aisha, টাইম, ম্যাগাজিন, আফগান, মেয়ে,
সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছাপানো আফগান মেয়ের মুখের ছবিছবি: AP/Institute for Time Magazine, Jodi Bieber

টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে যে মেয়েটির ছবি ছাপা হয়েছে সে মেয়ের নাম বিবি আয়েশা৷ বয়স ১৮৷ বিবি আয়েশার বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু স্বামী তার উপর নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন চালাতো৷ এই যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পেতে বিবি আয়েশা পালিয়ে চলে গিয়েছিল স্বামীর বাড়ি থেকে৷ তালেবান বিবি আয়েশাকে ধরে শাস্তি দেয়৷ শাস্তি হল নাক এবং কান কেটে দেওয়া৷ গত বছর আফগানিস্তানের দক্ষিণে অবস্থিত উরুজগান প্রদেশে এই ঘটনা ঘটে৷

বিবি আয়েশা এই মুহূর্তে অ্যামেরিকায় রয়েছেন৷ তাঁর মুখে সার্জারি করা হবে৷ চেষ্টা করা হবে নাক প্রতিস্থাপনের৷ গ্রসম্যান বার্ন সেন্টারে চিকিৎসাধীন বিবি আয়েশা৷ তবে কবে অপারেশন হবে তা এখনো জানা যায়নি৷

আফগান এই মেয়েটি সম্প্রতি নাড়া দিয়েছে বিশ্বকে৷ আফগানিস্তানে চলতি নৃশংসতা এবং নির্যাতনের কুত্সিত রূপ আরেকবার দেখা দিল ভয়ঙ্কর চেহারায়৷ বিতর্ক উঠেছে, আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার কারণেই এমনটি ঘটছে৷ অনেকে বলছে, তালেবান ক্ষমতায় গেলে এ ধরণের আরো অনেক ঘটনা ঘটবে৷ তাই মার্কিন সেনাদের আরো বেশ কিছুদিন আফগানিস্তানে থাকা উচিত, যাতে তালেবান যেন কখনোই ক্ষমতায় না যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে পারে সেনারা৷

আফগান নারীরা আজ কোথায় ?

দীর্ঘ ৯ বছর যুদ্ধের পর আজ আফগান নারীর স্বাধীনতা কতটুকু ? সমাজে তাদের অবস্থান কোথায় ? ডয়চে ভেলের আফগান বিভাগে কাজ করছেন নাবিলা কারিমি৷ সম্প্রতি তিনি আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন৷ তিনি বললেন, ‘‘নারীদের অবস্থান ভাল হয়েছে নাকি খারাপ হয়েছে তা এক কথায় বলা মুস্কিল৷ আমরা যদি তালেবান শাসনামলের সঙ্গে এখনকার সময় তুলনা করি তাহলে বলতে হবে অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল৷ কিন্তু যদি দেখা যায় এই ৯ বছরে নারীরা কী অর্জন করতে পেরেছে – তাহলে বলতে হবে যে খুব সামান্যই অর্জিত হয়েছে৷ এবং এই অর্জন শুধুমাত্র বড় শহরে, যেমন কাবুল, হেরাত, মাজার-ই-শরীফেই দেখা যাবে৷ ছোট শহর বা গ্রামগুলোতে মেয়েদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি৷ আগে যা ছিল এখনও তাই রয়ে গেছে৷ তবে ইদানিং মেয়েদের খবর আসছে পত্রিকায়৷ তারা এখন কথা বলছে খোলাখুলিভাবে৷ এখন এসব মহিলার বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, তাদের মতামত, পাওয়া না পাওয়া সবই শোনা যায়৷ আগে এই সুযোগটি ছিল না৷''

বিবি আয়েশা নিজেই টাইম ম্যাগাজিনে ছবি তোলার জন্য রাজি হন৷ বিবি আয়েশার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘‘আমি চাই, সারা বিশ্ব দেখুক আফগানিস্তানে কী হচ্ছে৷ তালেবান ক্ষমতায় গেলে মেয়েদের কী দুর্দশা হবে, তা সবাই জানুক৷''

টাইম ম্যাগাজিন আরো লিখেছে যে, এ ঘটনা দশ বছর আগে ঘটেনি, ঘটেছে সম্প্রতি৷ অর্থাৎ দশ বছর আগে তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন মেয়েদের ওপর এ ধরণের নির্যাতন চালানো হত না৷ এখন হচ্ছে কেন ? এই মুহূর্তে মার্কিন সেনারা যদি আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়, তাহলে এসব অসহায় মেয়েদের কীভাবে রক্ষা করা হবে ?

যুদ্ধবিরোধী অনেকেই বলছে, অসহায় বিবি আয়েশাকে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এর মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলাকে অনুমোদন করা হচ্ছে৷ আরো দীর্ঘদিন আফগানিস্তানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ বলা প্রয়োজন, ২০০১ সালে আফগানিস্তান আক্রমণের পর প্রায় ৪৩ শতাংশ অ্যামেরিকান এখন মনে করছে, আফগানিস্তানে যাওয়াটা ঠিক হয়নি৷ আফগানিস্তানে সেনা পাঠানো ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত৷

কে এই বিবি আয়েশা ?

বিবি আয়েশা নিজে কিন্তু কখনো টাইম ম্যাগাজিনের কথা শোনেননি৷ তিনি যখন কাবুলে আশ্রয় গ্রহণ করেন, তখন একজন লুকিয়ে তাঁর হাতে টাইম ম্যাগাজিনের একটি কপি দেয়৷ বিবি আয়েশার নিষ্পাপ ভাষ্য,‘‘আমি জানি না এই পত্রিকা অন্য কোন মেয়েকে সাহায্য করতে সক্ষম কিনা৷ আমি শুধু আমার আগের চেহারা ফিরে পেতে চাই৷''

বিবি আয়েশার বিয়ে হয়, যখন তাঁর বয়স ১৬৷ উরুজগান প্রদেশে তালেবান এবং স্থানীয়দের মধ্যে শান্তি চুক্তির একটি অংশ হিসেবে আয়েশা এবং তাঁর বোনকে তুলে দেওয়া হয় একটি পক্ষের হাতে৷ আয়েশার হবু স্বামী ছিল সেই পক্ষে৷ সে তখন আয়েশা এবং তাঁর বোনকে নিয়ে যায়৷ আয়েশা এবং তাঁর বোনকে ক্রীতদাসীর মত খাটায় শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা৷ আয়েশা পালিয়ে যায়৷ কান্দাহারে আয়েশা ধরা পড়ে যায় তাঁর স্বামীর হাতে৷ তাঁর স্বামী এবং দেবর মিলে তাঁর কান এবং নাক কেটে নেয়৷

টাইম ম্যাগাজিনে বিবি আয়েশার ছবির মধ্যে দিয়ে কোন আফগানিস্তানকে আমরা দেখছি ? নাবিলা কারিমি সে প্রসঙ্গে বললেন,‘‘আমার মনে হয় আফগানিস্তানের যে কোন মানুষ বিবি আয়েশার বর্তমান চেহারা দেখে শিউরে উঠবে৷ এর সঙ্গে ইসলাম ধর্ম বা আমাদের সমাজ জীবনের কোন মিল নেই৷ এটা কতগুলো উগ্রপন্থী, অসুস্থ, হিংসাপরায়ণ লোকের কাজ৷ কোন সাধারণ মানুষ তা করবে না৷ এ ধরণের ঘটনা আগে ঘটেনি৷ এই ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করা যায় না যে সব মেয়ের ভাগ্যেই এমনটি ঘটেছে৷ এ ধরণের উগ্রপন্থী মানুষ কম বেশি পৃথিবীর সব দেশেই রয়েছে৷''

সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিবি আয়েশা জানান, ‘‘যখন আমার নাক এবং কান কেটে ফেলা হয়, তখন আমি অজ্ঞান হয়ে যাই৷ আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমার মুখে বরফ শীতল পানি ঢেলে দিয়েছে৷ যখন আমি চোখ খুলি তখন আমি শুধু রক্ত দেখতে পাই৷ চারিদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়