1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাকার জন্য জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত মোদীর 

গৌতম হোড়
২৪ জানুয়ারি ২০২০

ভারতে নয় হাজারেরও বেশি শত্রু সম্পত্তি বিক্রি করবে নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ তাদের আশা, এই সম্পত্তি বিক্রি করে পাওয়া যাবে এক লাখ কোটি টাকা৷

https://p.dw.com/p/3WkPx
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Wyke

আর্থিক সঙ্কট কাটাতে মোদী সরকার এখন শত্রু সম্পত্তি বিক্রি করে এক লাখ কোটি টাকা পেতে চাইছে। সেই প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত ও বাধাহীনভাবে হয়, সে জন্য সরকার তিনটি কমিটি তৈরি করেছে৷ অমিত শাহের নেতৃত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি ছাড়াও ক্যাবিনেট সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে আরও দুটি কমিটি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রের শত্রু সম্পত্তি সরকার দ্রুত বিক্রি করতে চায়৷ কারণ, এই দুই রাজ্যে সম্পত্তি বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়া যাবে৷ উত্তর প্রদেশে প্রায় পাঁচ হাজার শত্রু সম্পত্তি আছে৷ তবে সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পাবে, কলকাতা বা মুম্বইয়ের শত্রু সম্পত্তি বিক্রি করা৷  কারণ ওই দুই শহরে জমি ও বাড়ির দাম অনেক বেশি৷

দেশভাগের সময় প্রধাণত যে মুসলিমরা ভারত ছেড়ে পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন এই সম্পত্তি ছিল তাঁদের৷ হিসাব বলছে, পশ্চিমবঙ্গেই এরকম সম্পত্তির পরিমাণ দুই হাজার ৭২৫টি। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে কলকাতা ছেড়ে তাঁরা চলে গিয়েছিলেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে৷ সারা দেশে শত্রু সম্পত্তির পরিমাণ হল নয় হাজার ২৮০টি, যা প্রধাণত মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশে ছড়িয়ে৷  মুসলিম বাদে চীনাদের ছেড়ে যাওয়া অল্প কিছু সম্পত্তিও আছে৷

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরি মনে করেন, এখন শত্রু সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আর্থিক কারণে৷  ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''মূলত কলকাতা ও মুম্বাইয়ের সম্পত্তি বিক্রি করে ভালো টাকা পাওয়া যাবে৷ তাই ওই দুই শহর বা বলা ভালো দুই রাজ্যের শত্রু সম্পত্তি আগে বিক্রির চেষ্টা করবে সরকার৷ তবে এই সম্পত্তি বিক্রি করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে৷ সেই প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য এতগুলি কমিটি করা হয়েছে৷ কোনও সন্দেহ নেই এই টাকাপেলে সরকারের সমস্যা কমবে৷''

তিন বছর আগে শত্রু সম্পত্তি বিক্রির রাস্তা সুপ্রিম কোর্ট সুগম করে দিয়েছিল৷ সর্বোচ্চ আদালতের রায় ছিল, শত্রু সম্পত্তি হলে তা বিক্রি করে দেওয়া উচিত৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিতাভ সিনহার মতে, এই সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও আইনগত জটিলতা নেই৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''কিছু সম্পত্তি সরকারের কাছে আছে৷ কিছু জবরদখল হয়ে আছে৷ সেই সব সম্পত্তি খালি করে বিক্রি করাটা সরকারের দায়িত্ব৷ সরকার যদি একদিনে দিল্লিতে জবরদখল কলোনি খালি করে দিতে পারে, তা হলে বেআইনি দখলদারদেরও দ্রুত হঠিয়ে দিতে পারে৷ দরকার হলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তা হতে পারে৷ তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে বিক্রির ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা নেই এটা বলা যেতে পারে৷ আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও একই পন্থা অনুসরণ করা হয়৷''

তবে জয়ন্ত মনে করেন, ''জবরদখল হয়ে থাকা শত্রু সম্পত্তি বিক্রি করতে গেলে মামলা হতেই পারে৷ তার জন্য বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হতে পারে৷ তবে সরকার দ্রুত বিক্রির ব্যবস্থা করতে চাইছে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷'' দেশভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরির পরিবার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''যাঁদের কাছে জমি-বাড়ির দলিল বা প্রমাণপত্র ছিল, তাঁরা টাকা পেয়েছেন৷ আমাদের কাছে না থাকায় আমরা পাইনি৷ তেমনই পশ্চিমবঙ্গের জমি, বাড়ি ছেড়ে যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে প্রমাণ থাকলে তাঁরা সম্পত্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন৷ সেই সম্পত্তি এখন সরকারের৷ তারা তা বিক্রি করতেই পারে৷ দ্রুত করার চেষ্টাও অস্বাভাবিক কিছু নয়৷''

 আর্থিক সঙ্কট কাটাতে তাই শত্রু সম্পত্তি বিক্রির দিকেই নজর দিল মোদী সরকার৷