1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাম্পের ইরান পদক্ষেপ বিপজ্জনক

৯ মে ২০১৮

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে সর্বনাশা পদক্ষেপ নিলেন৷ মিশায়েল ক্নিগে মনে করেন, এর ফলে ট্রান্স অ্যাটলান্টিক সম্পর্কে আঘাতের পাশাপাশি পরমাণু প্রতিযোগিতাও বাড়বে৷

https://p.dw.com/p/2xQJt
ছবি: Reuters/J. Ernst

ট্রাম্প প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির প্রতি কতটা ঘৃণা কাজ করে, সোমবার রাতে হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা সহকারী সেবাস্টিয়ান গর্কার এক মন্তব্যে তার পরিচয় পাওয়া গেল৷ ফক্স নিউজ চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘‘ইরান চুক্তির মাথায় গুলি করা উচিত৷ সেটি অ্যামেরিকার জন্য খারাপ, বিশ্বের জন্য খারাপ, আমাদের বন্ধুদের জন্য খারাপ৷''

মঙ্গলবার ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে গিয়ে ট্রাম্প প্রায় মারমুখো ভঙ্গিতে কথা বলেন৷ আরেকটু হলে বোধহয় হিংসারও উল্লেখ করে ফেলতেন৷ তবে চিরকাল যা বলে আসছেন, সেই ধারণা আঁকড়ে ধরে বললেন, ইরান চুক্তি অ্যামেরিকা ও বিশ্বের জন্য ভালো নয় এবং ওয়াশিংটনের সহযোগীরাও নাকি সেই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত৷

Michael Knigge Kommentarbild App
মিশায়েল ক্নিগে, ডয়চে ভেলের ওয়াশিংটন প্রতিনিধি

ইরান চুক্তি বিশ্বকে আরও নিরাপদ করে তুলেছিল

 ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি অবশ্যই নিখুঁত ছিল না– যে কোনো আপোশ মীমাংসার ক্ষেত্রেই যেমনটা হয়ে থাকে৷ কিন্তু প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে বিস্তারিত আলাপ আলোচনার পর যে বোঝাপড়া সম্ভব হয়েছিল, তা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে স্বল্প ও মাঝারি মেয়াদের জন্য কড়া সীমার মধ্যে বেঁধে ফেলেছিল এবং সেই অবস্থা যাচাই করার কাঠামো গড়ে তুলেছিল৷

ইরান এ পর্যন্ত চুক্তির শর্ত মেনে এসেছে৷ নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পরিদর্শক ও মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বার বার সে দেশকে এই সার্টিফিকেট দিয়েছেন৷ গোটা বিশ্ব সামগ্রিকভাবে এই মূল্যায়ন গ্রহণ করেছে৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে বিপরীত মূল্যায়ন করেছেন, ট্রাম্প মঙ্গলবার তাঁর বক্তব্যে তার উল্লেখ করেন৷

যে চুক্তির আওতায় নিশ্চিত করা হয়েছিল যে ইরান কমপক্ষে এক দশকের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না, সেটিকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা উচিত৷ এই চুক্তি গোটা অঞ্চল, বিশ্ব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ করে তুলেছিল৷  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ই-থ্রি – বা জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের নেতৃত্বেইউরোপের মধ্যে অত্যন্ত কঠিন অথচ নিবিড় সহযোগিতার মাধ্যমে এই চুক্তি সম্ভব হয়েছিল৷ এ প্রসঙ্গে মনে রাখা জরুরি যে চীন, রাশিয়া তথা আন্তর্জাতিক সমাজও তার প্রতি সমর্থন দেখিয়েছিল৷ তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এই, যে এই পরমাণু চুক্তি এক অভিনব কাঠামো সৃষ্টি করেছিল৷ কোনো দেশ পরমাণু অস্ত্র তৈরির বাসনা করলে কীভাবে সফল ও শান্তিপূর্ণ পথে তা খর্ব করা সম্ভব, তার একটা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছিল৷

ইউরোপীয় সহযোগীরা একমত নয়

ওয়াশিংটনের সহযোগীরাও ইরান চুক্তি সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের মনোভাবের সঙ্গে একমত, এমন ভুল দাবি অত্যন্ত ধৃষ্টতার পরিচয় – বিশেষ করে জার্মানির চ্যান্সেলর ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে গিয়ে ইরান চুক্তি মেনে চলার জন্য ট্রাম্পকে বোঝানোর শেষ চেষ্টা চালানোর পর এমন দাবি ধোপে টেকে না৷ বাস্তবে এই পদক্ষেপ ইউরোপীয়দের গালে চড় মারার মতো ঘটনা, যারা সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এই চুক্তির পক্ষে সওয়াল করে আসছিল৷ এমনকি ইসরায়েলেও সামরিক কর্মকর্তারা বার বার বলেছেন, তাঁরা চান যে অ্যামেরিকা এই চুক্তি মেনে চলুক৷

অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যখন পররাষ্ট্র নীতির উপর প্রভাব ফেলে

এক্ষেত্রে ভুলের কোনো অবকাশ নেই৷ ট্রাম্প যেভাবে অ্যামেরিকাকে ইরান চুক্তির বাইরে আনার পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার সঙ্গে সুচিন্তিত আন্তর্জাতিক কৌশলের কোনো সম্পর্ক নেই৷ এই পদক্ষেপ বিশ্বকে আরও নিরাপদ করে তুলবে না অথবা ওয়াশিংটন ও তার সহযোগীদের স্বার্থ রক্ষা করবে না৷ বেসামাল আবেগ ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই এর মূল ভিত্তি৷

ট্রাম্প ও তাঁর অনেক অনুগামী ও সহকারী পূর্বসূরি বারাক ওবামার যাবতীয় পদক্ষেপকে ঘৃণার চোখে দেখেন৷ তাঁর উত্তরাধিকারের সব চিহ্ন সরিয়ে ফেলতে তাঁরা সবকিছু করতে প্রস্তুত৷ তাই ওবামার পররাষ্ট্র নীতির এমন সাফল্য নষ্ট করার পদক্ষেপ বিস্ময়ের কোনো কারণ হতে পারে না৷ বিশেষ করে ট্রাম্প যেভাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে এইচ আর ম্যাকমাস্টার ও রেক্স টিলারসনকে সরিয়ে ফেলে যথাক্রমে জন বোল্টন ও মাইক পম্পেও-কে এই দুই পদে বহাল করেন, তার ফলেও এই মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ ম্যাকমাস্টার ও টিলারসন ইরান চুক্তি মেনে চলার পক্ষে ছিলেন৷ বোল্টন ও পম্পেও এই চুক্তির ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত৷

নির্বাচনি প্রচারের সময়েও ট্রাম্প  ইরান চুক্তিকে সর্বকালের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চুক্তি হিসেবে তুলে ধরে সেটি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ এবার সেই প্রতিশ্রুতি পালন করে তিনি অ্যামেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারে নিজের সাফল্য তুলে ধরতে পারেন৷

নতুন চুক্তি – কোনোরকমে, কোনো এক সময়ে

ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর কী ঘটবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প প্রকাশ্যে তুলে ধরা হয় নি৷ প্রেসিডেন্ট শুধু জানিয়েছিলেন যে তিনি দরকষাকষি করে কোনোভাবে, কোনো এক সময়ে আরও ভালো চুক্তি আদায় করবেন৷

কিন্তু ইউরোপ, ইরান তথা আন্তর্জাতিক সমাজে নতুন করে এ বিষয়ে আলোচনার কোনো সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না৷ তাই ট্রাম্প আদৌ এমন প্রচেষ্টা চালানো পর্যন্ত ইরান কার্যত পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রে তার উপর চাপানো শর্তের বাইরে থাকবে৷ ফলে গোটা অঞ্চলে অস্থিরতা বাড়বে বই কমবে না৷

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের বাড়তি গুরুত্ব

ট্রাম্প ইরান সংক্রান্ত যে বেপরোয়া পদক্ষেপ নিলেন, তার প্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন-এর সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে তাঁর উপর চাপ আরও বেড়ে যাবে৷

ট্রাম্প যাই বলুন না কেন, এর ফলে কিমের উপর চাপ মোটেই বাড়বে না, প্রেসিডেন্ট নিজে সেই চাপ অনুভব করবেন৷ কারণ যাচাই করা যায়, এমন এক আন্তর্জাতিক চুক্তি ছিঁড়ে ফেলে তাঁকে আরও বিস্তারিত এক চুক্তি পেশ করতে হবে৷ এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, উত্তর কোরিয়ার মতো ইরানের হাতে কিন্তু পরমাণু অস্ত্র ছিল না৷

ট্রাম্প নতুন এক পরমাণু সংকট সৃষ্টি করেছেন এবং চলমান এক সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছেন৷ ইউরোপ ও এশিয়ায় ঘনিষ্ঠ মার্কিন সহযোগীদের অবজ্ঞা করার পর শান্তিপূর্ণভাবে দুটি সংকটের সমাধান করা ‘গ্যাম্বলার-ইন-চিফ'-এর জন্য মোটেই সহজ হবে না৷ বিশ্বের জন্যও এই পরিস্থিতি অশনি সংকেত বয়ে আনছে৷

মিশায়েল ক্নিগে/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য