1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডেনিমে সাফল্য, চ্যালেঞ্জও অনেক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ মে ২০১৮

ডেনিম রপ্তানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ৷ চীনকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের এই শীর্ষ অবস্থান দেশের ডেমিন প্রস্তুতকারকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ভূমিকা রেখেছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মপরিবেশের উন্নয়ন৷

https://p.dw.com/p/2xPNO
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/S.K. Das

ডেনিম রপ্তানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ৷ চীনকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের এই শীর্ষ অবস্থান দেশের ডেমিন প্রস্তুতকারকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এখানে ভূমিকা রেখেছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মপরিবেশের উন্নয়ন৷

ইউরোপের বাজারে এখন যত ডেনিম রপ্তানি হয়, তার শতকরা ২৭ ভাগ যায় বাংলাদেশ থেকে৷ আগে চীন এই বাজারে শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও ২০১৭ সালে বাংলাদেশ তাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিমে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়৷ মোট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অংশ শতকরা ১৪ দশমিক ২ ভাগ৷ বাংলাদেশের আগে রয়েছে চীন এবং মেক্সিকো৷

ইউরোপিয় কমিশনের পরিসংখ্যান ডিরেক্টরেট ইউরোস্ট্যাট-এর হিসেব অনুযায়ী,  ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ইউরোর ডেনিম জিনস রপ্তানি করেছে৷ এরপর ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ইউরো৷ এছাড়া রপ্তানি বেড়েছে ০ দশমিক ৫৮ ভাগ৷ তবে বাংলদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্কেরর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশি, ৪ দশমিক ৩৬ ভাগ৷

‘বাংলাদেশে ডেনিমের ভালো ‘ফেব্রিক’ তৈরি হয় আধুনিক কারখানা এবং ভালো ওয়াশিং প্ল্যান্ট থাকায় ডেমিনে আমরা ভালো করছি’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৫ ভাগ৷ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৪৬৩ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ডেনিম রপ্তানি হয়েছে৷ ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৭ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলারে৷ চীন ২০১৭ সালে ৯২১ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করলেও, রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৪১ ভাগ৷ মেক্সিকোরও একই অবস্থা৷ তাদের রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৯ ভাগ৷ অর্থাৎ মোট রপ্তানি করেছে ৭৯৩ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম৷

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম৷ তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে শতকরা ১৩ ভাগ এবং ৭ দশমিক ৯ ভাগ৷ তারা ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যথাক্রমে ২১৩ দশমিক ৭ এবং ২০৭ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম রপ্তানি করেছে৷

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কারকদের সংগঠন বিজিএমই-এর সভাপতি সিদ্দিুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ডেনিমের ভালো ‘ফেব্রিক' তৈরি হয়৷ আধুনিক কারখানা এবং ভালো ওয়াশিং প্ল্যান্ট থাকায় ডেনিমে আমরা ভালো করছি৷''

বাংলাদেশে এখন ৩১টি বড় ডেনিম ফ্যাক্টরি আছে৷  বাংলাদেশ থেকে ব্লু ডেনিম ট্রাউজার্স, স্কার্ট, জ্যাকেট, স্যুট-কোট, প্লে স্যুট রপ্তানি হয়৷ আমাদের ক্রেতারা হলো: এইচঅ্যান্ডএম, ইউনিকলো, টেস্কো, লেভিস, ডিসেল, ওয়াংলার, জি-স্টার, এস অলিভার, হুগো বস ও গ্যাপ৷

‘ডেমিন শুধু কাপড় নয় একটা ফ্যাশান এবং ক্রেতা সবাই, বারাক ওবামাও পরেন আবার আমাদের দেশের একজন লোডারও পরেন’

এনভয় টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম মুর্শেদি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডেনিমে সফলতার প্রধান কারণ উদ্যোক্তাদের সাহস৷ কারণ ছোট আকারের একটি ডেনিম ফ্যাক্টরি করতেও ৫০০-১০০০ কোটি টাকা লাগে৷ এর সঙ্গে সরকারের পলিসি সাপোর্ট কাজ করেছে৷ বাংলাদেশে ডেনিম ফেব্রিক্স-এর কাঁচামাল আছে৷ আমরাই ভালো কাপড় তৈরি করায় কম সময়ে এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে জিন্স দিতে পারি৷ আমাদের কারখানাগুলো অত্যাধুনিক এবং ওয়াশিং-এর ক্ষেত্রেও আমরা ভালো করছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘ডেমিন শুধু কাপড় নয়, এটা একটা ফ্যাশান৷ ওয়াশিং-এর মাধ্যম এই ফ্যাশানকে তুলে ধরা হয়৷ তাছাড়া এর ক্রেতা সবাই৷  বারাক ওবামাও পরেন, আবার আমাদের দেশের একজন লোডারও পরেন৷ সাংবাদিকও পরেন, আমিও পরি৷ এর কোনো সিজন নেই, কারণ ১২ মাসই সিজন৷ এ সব দিক খেয়াল রেখে আমরা সময়মত চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছি বলে ডেনিমের চাহিদা বাড়ছে এবং আরো বাড়বে৷''

কেন আরো বাড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কম সময়ে ক্রেতাকে ডেনিম সরবরাহ করতে পারি৷ ‘লিড টাইম' একটা বড় ব্যাপার৷ আমাদের নিজেদের কাপড় দিয়েই আমরা কাজ করি৷ এর সঙ্গে আমাদের ‘টেকনিকাল নো হাউ' অনেক বেড়েছে৷ ওয়াশিং-এ আমরা এগিয়ে রয়েছি৷ সব মিলিয়ে ডেনিমে আমাদের সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল৷''

তিনি অবশ্য সামনে চ্যালেঞ্জের কথাও বলেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের প্রতিযোগিতায় অনেক চ্যালেঞ্জ আছে৷ আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক কিছু সমন্বয় করছে৷ যেমন জ্বালানি তেলের দাম ভারত ও শ্রীলঙ্কা নিয়মিত সমন্বয় করে৷ অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও আমাদের দেশে উলটে বাড়ে৷ ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও আমরা সমন্বয় না করায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি৷''

‘বাংলাদেশকে ডিজাইন উন্নয়ন এবং নতুনত্বের মাধ্যমে ডেনিমে অবস্থান সংহত করতে হবে এখন আরো বিনিয়োগ এবং গবেষণা বাড়াতে হবে’

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘এখন বিদ্যুতের সমস্যা নেই৷ তবে পলিসিসহ অন্য সমস্যা আছে৷ ভিয়েতনাম টিটিপি ফ্যাক্টরির কথা বলে কিছুটা এগিয়ে গেছে৷ ডেনিমের এই সাফল্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে৷''

মার্কেট রিসার্চ প্রতিষ্ঠান টেকনিভোর মতে, বিশ্বে ডেনিমের বাজার ৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলারের৷ ২০২০ সাল নাগাদ এই শিল্পের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ ভাগ৷ এশিয়া-প্রশন্তমহাসাগরীয় অঞ্চল ডেনিমের সবেচয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বাজার৷ বাংলাদেশের জন্য এই বাজারে বড় সুযোগ অপেক্ষা করছে৷ সেই সুযোগ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তার জন্যই বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডেনিম এক্সপো৷

ডেনিম এক্সপোর প্রবর্তক এবং সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশকে ডিজাইন উন্নয়ন এবং নতুনত্বের মাধ্যমে ডেনিমে অবস্থান সংহত করতে হবে৷ এই খাতে এখন আরো বিনিয়োগ এবং গবেষণা বাড়াতে হবে ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে মাথায় রেখে৷''

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এখন ভ্যালু অ্যাডিশনের দিকে যেতে হবে৷ আমরা এখন একটি জিন্স প্যান্টবিক্রি করি ৫ থেকে ৬ ডলারে৷ আর দোকানে বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৯ ডলারে৷ আমাদের এই কোয়ানটিটির পরিবর্তে এখন সাসটেইনিবিলিটির দিকে যেতে হবে৷ কারণ এখন প্রশ্ন উঠছে, একটি জিন্স তৈরিতে কতটুকু পানি ব্যবহার করা হয়৷ সেটা পরিবেশ বান্ধব কিনা৷ কেমন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে? ‘ওয়ার্কিং এনভায়রনমেন্ট' কেমন? আমাদের এখন ১৯ ডলার থেকে ২৯ ডলারের উৎপাদনে যেতে হবে৷''

‘এখানকার পানি, ইন্ডিগো কালার এবং প্রতিযোগিতামূলক দাম ডেনিম-এ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এখানকার পানি এবং আবহাওয়া ডেনিমের জন্য ভালো’

কীভাবে ‘ভ্যালু অ্যাডিশন' সম্ভব? তাছাড়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতা কেন অতিরিক্ত দাম দেবে? এ সব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ইনোভেশন, ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইননিবিলিটি – এই চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দিলে আমরা ভ্যালু অ্যাডিশন করতে পারব৷ পানির ব্যববহার কমাতে হবে৷ কেমিকালের ব্যবহার কমাতে হবে৷ নতুনত্ব আনতে হবে৷ নতুন নতুন ডিজাইনের দিকে নজর দিতে হবে৷''

দেশে বর্তমানে ৩১টি ডেনিম কারখানায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন উদ্যোক্তারা৷ কারখানাগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ কোটি ৫০ লাখ গজ৷ ডেনিম ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউরোরেপ ৭১ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ ভাগ, চিন ৫৮ ভাগ এবং জাপানে ৫৮ ভাগ মানুষ নিয়মিত ডেনিম পণ্য ব্যবহার করেন৷

জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্রেব্রিক্স-এর অনল রায়হান মনে মনে করেন, ‘‘এখানকার পানি, ইন্ডিগো কালার এবং প্রতিজোগিতামূলক দাম ডেনিমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের পানি এবং আবহাওয়া ডেনিমের জন্য ভালো৷ তবে ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে৷ তাই আমাদের অবস্থান ধরে রেখে এগিয়ে যেতে সরকারের কিছু ‘পলিসি সাপোর্ট' লাগবে৷ এখন যারা নন ডেনিম ফেব্রিকে আছেন, তারাও ডেনিমের মার্কেটটা বুঝতে চাইছেন৷ ফলে এবার ডেনিম এক্সপোতে অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য