1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘তারা মনে করে, আমার ক্ষমতা আছে, আমাকে কে কী করবে?’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

সমাজের নানা স্তরে বিশ্বাস আর আস্থার ভিত নড়িয়ে দেয়া এত প্রতারণা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যার ঘটনা কেন? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করলেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা আলী৷

https://p.dw.com/p/3izMe
ছবি: privat

এর মধ্যে আছে বিচারহীনতা, অভিভাবকদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, কাউন্সেলিংয়ের অভাব ইত্যাদি৷ এছাড়া পুলিশের যে ধরনের তৎপরতা দরকার, সেটাও নেই বলে জানান তিনি৷

ডয়চে ভেলে : করোনাকালে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও প্রতারণার ঘটনা কি বেড়েছে?

অ্যাডভোকেট সালমা আলী : এই সমস্যাগুলো তো আগেও ছিল৷ করোনার কারণে এখন যেহেতু পুলিশের উপস্থিতি কম, মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সেভাবে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে সেভাবে সহযোগিতা করতে পারছে না, ফলে এটা কমেনি, বরং বেড়েছে৷

প্রেমিক প্রেমিকাকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে, কোথাও বন্ধুরা মিলেও গণধর্ষণ করেছে- এমন বর্বরতার কারণ কী? 

এখন কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষমতাশালী ধর্ষক অনেক আছে৷ এর সঙ্গে মাদক আছে৷ পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট তারা দেখছে৷ গণধর্ষণের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, যারা এটা করছে, তারা কিন্তু মনে করে আমার ক্ষমতা আছে, আমি এটা করবো৷ কে কী করবে? এই বিষয়গুলোর জন্য যে ধরনের কাউন্সেলিং বা যে ধরনের ডিসিপ্লিন থাকা দরকার, সেটা কিন্তু আমাদের দেশে নেই৷ দেখেন, আমাদের এখানে নয়ন বন্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কিশোর অপরাধীরা কী বেপরোয়া! এই অপরাধীরাও ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে উত্যক্ত করা- সব কাজই তারা করছে৷ গণধর্ষণের মূল কারণ বিচারহীনতা এবং এদের কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা না থাকা৷ অথচ কিশোরদের জন্য এটা খুব দরকার৷

‘আমাদের দেশে ক্ষমতাশালী ধর্ষক অনেক আছে’

তাহলে কি বিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে?

যৌনতা কিন্তু স্বাভাবিক বিষয়৷ কিন্তু এটার বিকৃত বিষয়টা এখন বেশি দেখা যাচ্ছে৷ প্রথম দায়িত্ব পরিবারের৷ অভিভাবকদের যে দায়িত্ব, সেটা তারা ঠিকমতো পালন করছে বলে মনে হচ্ছে না৷ যারা বিত্তশালী, তারা বাচ্চাদের বিষয়গুলোতে সেভাবে মনোযোগ দেন না৷ আর মধ্যবিত্তরা বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত৷ তারা অন্যদিকে কোনো মনোযোগই দেন না৷ নিম্নবিত্তরা তো ছেলে একটু বড় হলেই মনে করে, ছেলে লায়েক হয়ে গেছে৷ সে উপার্জন করবে৷ সে যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারে৷ এক্ষেত্রে উচ্চবিত্তরা এই ছেলেগুলোকে ব্যবহার করছে৷ পারিবারিক বন্ধন, স্কুল-কলেজে যে ডিসিপ্লিন শেখানো হতো এখন সেটা নেই৷ স্কুলগুলোতে যৌনতার পজেটিভ বিষয় নিয়েও কিছু শেখানো হয় না৷ এটাকে একটা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে৷ এই লুকোচুরির মধ্যেই অপরাধগুলো ঘটে যাচ্ছে৷

ধর্ষণ দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে, তা ঠিক৷ কিন্তু এখন তো যুগোপোযোগী আইন আছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও আছে৷ মানুষ সচেতন হচ্ছে৷ তারপরও কেন কমছে না ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের ঘটনা?

ধর্ষণের অনেকগুলো কারণ আছে৷ পরিবার থেকে, সমাজ থেকে এবং সর্বোপরি সরকারের যে দায়িত্বগুলো আছে সেগুলো পালন করা দরকার৷ কিছু জিনিস আছে অপরাধ বাড়িয়ে দেয়৷ এই বিষয়গুলোতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার৷ আমাদের যে আইন, সেটার জন্য কিন্তু আমরা অনেক কাজ করেছি৷ কিছু আইন আছে প্রতিরোধমূলক আইন৷ এই আইনগুলোর ঠিকমতো ব্যবহারও আমরা করছি না৷ আমরা বলি, পুলিশ তৎপর৷ কিন্তু পুলিশের যে ধরনের তৎপরতা দরকার, সেটা কিন্তু নেই৷ পুলিশ শুধু শক্তিশালী গ্রুপের জন্য আছে৷ নারীবান্ধব, শিশুবান্ধব বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা কিন্তু নেই৷ আপনারা জানেন, অনেক মামলাই হয়তো কোর্টে যায়৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপোষ হয়ে যায়৷ ভিকটিমের প্রোটেকশন বলতে যে জিনিসটা, সেটা কিন্তু আমাদের দেশে নেই৷ নারী ও শিশু বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য যে লিগ্যাল সাপোর্ট দরকার, সেটা কিন্তু আমরা দিতে পারছি না৷

ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের সাজার হার কেমন?

৭ থেকে ৯ শতাংশ৷ আসেই না মামলাগুলো৷ তারপরও যেগুলো আসে, সেগুলো বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তারা তুলে ফেলে বা অনেক মামলা নষ্ট হয়ে যায়৷