1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তারা হয়ত খেলবেন না, কিন্তু...

Sanjiv Burman২৭ মে ২০১৮

তারা গোল করবেন না, গোল অ্যাসিস্টও করবেন না, কিংবা প্রতিপক্ষকে রুখে দেবেন না বা গোল বাঁচাবেন না৷ তারপরও বিশ্বকাপের ৩২টি দলেই তাঁরা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ তারা কারা?

https://p.dw.com/p/2yJRQ
Fußball WM-Qualifikation Deutschland Österreich Hummels Bank
ছবি: imago/MIS

ফুটবলের অঙ্ক বলে, মাঠে খেলা শুরু করবেন এগার জন৷ এরপর নির্ধারিত সময়ে তিনজন বদলি খেলবেন এবং আরো একজন অতিরিক্ত সময়ে অন্য কারো বদলে নামতে পারবেন৷ অর্থাৎ ২৩ জনের স্কোয়াডের কারো কারো হয়ত পুরো আসরেই মাঠে নামা হবে না৷

কিন্তু কেন তারা এত গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের দলের সদস্য হিসেবে নাম থাকায় সারাক্ষণ দলের সঙ্গে থাকতে হবে তাদের৷ অথচ মাঠে না নামতে পারার হতাশা কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে৷ নিজেদের গর্ব চূর্ণবিচূর্ণ করে কোচ কখন একটু সদয় দৃষ্টি দেবেন সে আশায় থাকতে হবে৷ হয়ত কেউ কেউ মনে মনে আশা করবেন, তার জায়গায় যিনি সুযোগ পেয়েছেন, তিনি যেন খারাপ খেলেন৷ তার মানে দলে এক ধরনের বিভক্তি, বা অসম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যার প্রভাব যারা মাঠে খেলবেন তাদের ওপরও পড়বে৷ তাই এই খেলোয়াড়দের মন মানসিকতা ভালো থাকাটা খুব জরুরি পুরো দলের জন্য৷

উলটোদিকে, মূল দলে জায়গা না দিয়েও এদের অনুপ্রাণিত রাখা কোচের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ, যাতে করে দলের প্রয়োজনে তারা যে কোনো পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে প্রস্তুত থাকেন, এবং দলের মধ্যে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না করেন, যার প্রভাব সামগ্রিক পারফরম্যান্সের ওপর পড়ে৷

‘‘তারা যেন নিজেদেরও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন, এবং দলকে সমর্থন করেন, তেমন মনোভাব সবসময় বজায় রাখা সত্যিই কঠিন৷'' বলছিলেন ফ্রেঞ্চ কোচ দিদিয়ের দেশঁ৷ ‘‘যারা হয়ত খেলবেনই না, বা খেললেও একেবারে অল্পই খেলবেন, তাদের আমি অনেকটা সময় দিই৷'' যোগ করেন তিনি৷

গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার তরুণ মিডফিল্ডার মাসিমো লুয়োঙ্গো স্কোয়াডে সেই চার জনের একজন ছিলেন, যাদের এক সেকেন্ডের জন্যেও কোচ মাঠে ব্যবহার করেননি৷

ব্রাজিল বিশ্বকাপে নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন লুয়োঙ্গো৷ তাই খেলতে না পারার সময়টা তার জন্য ‘কঠিন' ছিল বলে জানান তিনি৷

এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অনেকজন মিডফিল্ডার ছিলেন৷ আমি সবচেয়ে তরুণ ও নবীনতম ছিলাম৷ ইস্, যদি এক মিনিটের জন্য হলেও বিশ্বকাপে খেলতে পারতাম!'' আফসোস করছিলেন তিনি৷

‘‘মনে হচ্ছিল, আমার পেটে একটা ফুটো হয়ে গেছে, যা কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না৷ তাই এই বিশ্বকাপে মাঠে নামার জন্য মরিয়া হয়ে আছি আমি৷''

দলে কখনোই প্রথম বাছাই না হয়েও একবার সুযোগ পেয়ে যদি অসাধারণ কিছু করে দেখানো যায়, তাহলেই কেল্লাফতে৷যেমন ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেপর্তুগাল দলের খেলোয়াড় এডার৷ ফরোয়ার্ডের এই খেলোয়াড় একটু আধটু গ্রুপ ম্যাচে সুযোগ পেলেও নকআউট রাউন্ডে কোনো সুযোগই পাচ্ছিলেন না৷

ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে ৭৯তম মিনিটে কোচ তাঁর ওপর ভরসা রাখলেন৷ অতিরিক্ত সময়ে জয়সূচক গোলটি করে তিনি কোচের মানই শুধু রাখলেন না, প্রমাণ করলেন নিজেকে৷

দলের অব্যবহৃত খেলোয়াড়রা অন্যভাবেও দলকে সাহায্য করতে পারেন৷ যেমন, গত বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক নিক রিমান্ডো একবারের জন্যও মাঠে নামেননি৷ কিন্তু তিনি অনুশীলনে বেশি বেশি খাটছিলেন৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি চাইছিলাম যেন মূল গোলরক্ষকের ওপর চাপ কম পড়ে৷ তাঁর শক্তিক্ষয় কম হয়৷ তাহলে খেলার সময় তিনি তা কাজে লাগাতে পারবেন৷''

অনেক খেলোয়াড় তাদের দলকে পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রতিপক্ষ দলের মতো খেলেন অনুশীলনে৷ যেমন অস্ট্রেলিয়ার কোচ পোস্টেকোগলু গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের অনুশীলনের সময় প্রতিপক্ষ চিলি, নেদারল্যান্ডস বা স্পেনের মতো খেলতে বলেন মূল একাদশের বাইরের খেলোয়াড়দের৷ তাতে ম্যাচের মতোই আবহ তৈরি হয়৷ খেলোয়াড়রা প্রস্তুতি নিতে পারেন৷ লুয়োঙ্গো বলছিলেন যে, বিষয়টি কত কঠিন ছিল অন্য খেলোয়াড়দের জন্য৷

‘‘আমাদের যতটা সম্ভব প্রতিপক্ষের মতোই খেলতে হতো মূল একাদশের বিরুদ্ধে৷''

ছাড়া যারা দলের ভেতরে খুব জনপ্রিয় খেলোয়াড় থাকেন তাদের দায়িত্ব বেশি বলে মনে করেন মার্কিন গোলরক্ষক রিমান্ডো৷ তিনি মনে করেন, এরা সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে ভুমিকা রাখতে পারেন৷

‘‘খেলতে পারেনি বলে কাউকে তাচ্ছিল্য করা যাবে না৷ যদি করা হয়, তা দলের জন্য একটা বাজে দিক তৈরি করবে৷'' বলছিলেন তিনি৷

মাঝে মাঝে কোচদের কড়াও হতে হয়৷ যেমন বেলজিয়ামের কোচ মার্ক উইলমটস গত বিশ্বকাপের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম যে, এমন খেলোয়াড় চাই না, যারা নিজের দিকেই শুধু তাকাবে৷ আমি এমন খেলোয়াড়ই চাই, যারা দেশের জন্য খেলবে৷ কাউকে যদি দলের মধ্যে এ সব নিয়ে তাচ্ছিল্য করতে দেখি, তাহলে তাঁকে পত্রপাঠ বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো৷''

তবে না খেলতে পারলেও এমন আসরে দলের অংশ হওয়াও যে অনেক বড় ব্যাপার তা মনে করিয়ে দিলেন উইলমটস নিজেই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে৷ ১৯৯০ এর বিশ্বকাপে ইটালি দলের সদস্য থাকলেও মাঠে খেলার সুযোগ পাননি৷

‘‘বর্ষীয়ান খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেবার শিখেছি অনেক৷'' বলছিলেন তিনি৷

লুয়োঙ্গোও মনে করেন, ব্রাজিল বিশ্বকাপ তাঁকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি ঐ অল্প সময়েই অনেক কিছু শিখেছি৷ যখন ক্লাবে ফিরে আসলাম, তখন মনে হচ্ছিল আগাগোড়া আমি ভিন্ন এক খেলোয়াড়৷''

জেডএ/ডিজি (এপি)

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য