1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তৃণমূলে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে আওয়ামী লীগ?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে৷ এসবের মাঝে তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর ইঙ্গিত দেখছেন বিশ্লেষকরা৷

https://p.dw.com/p/3piPO
কাদের মির্জা
ছবি: bdnews24.com

সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, স্থানীয় সরকারে কোন একটি নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে বা দলের যে কোনো পর্যায়ে একটি পদ পেলেই সুযোগ সুবিধার রাস্তা প্রশস্ত হয়৷ এখন যারা এই পদে আছেন, অন্যরা মনে করছেন তারাও তো এই পদে যেতে পারেন৷ এই কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে৷ সেই প্রতিযোগিতা সংঘাত থেকে হানাহানিতে রূপ নিচ্ছে৷ পাশাপাশি রাজনৈতিক মাঠে তো বিরোধী দলের শূন্যতা আছে৷ ফলে অর্থশালী হতে তৃণমূল নেতারা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন৷ যদিও অর্থশালীদের দাপট শুধু তৃণমূলে নয়, কেন্দ্রেও আমরা দেখি৷ সম্প্রতি দ্য ইকোনোমিস্ট তো লিখেছে, তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যাচ্ছে৷’’

সাম্প্রতিককালে নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা আবদুল কাদের৷ দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তার দাবি অনুযায়ী ‘সত্যবচন' করে আলোচনায় আসেন ৷ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় তার৷ সেই বিরোধে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে নিজের ভাই ও ভাবির বিরুদ্ধেও বলেছেন৷ নির্বাচনে জয়লাভের পরও বিবাদ থামেনি৷ সর্বশেষ গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হন৷ তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির৷ সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে ঘিরে সোমবার বসুরহাটে ১৪৪ ধারা জারি ছিল৷ এর মধ্যেও দুই পক্ষ মাঠে নামার চেষ্টা করে৷ তবে পুলিশের সক্রিয়তার কারণে নতুন করে আর সংঘাত হয়নি৷

অর্থশালী হতে তৃণমূল নেতারা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন: মহিউদ্দিন আহমদ

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও বিবাদের কারণ জানাতে গিয়ে মির্জা আবদুল কাদের ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দেখছেন, ফলে এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷ আমি খুবই অসুস্থ, দেড় বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছি৷ এখন আর এসব নিয়ে নতুন করে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়াতে চাই না৷’’

কেন বসুরহাটের নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এ প্রশ্নের জবাবে নোয়াখালি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ. এইচ. এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেন, ‘‘মির্জা আবদুল কাদেরের মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ তিনি কী বলছেন, নিজেই বুঝতে পারছেন না৷’’ এ. এইচ. এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের মতে, ‘‘মাথা খারাপ মানুষ কী করে, তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে ১৭ মিনিট কথা বলেছি৷ পুরো ঘটনা তাকে জানিয়েছি৷ প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, তিনি সব ঠিক করে দেবেন৷ তাই আমরা তাকে বহিস্কারের উদ্যোগ নিয়েও আর করিনি৷ রবিবারই মির্জা সাহেব আমাকে জানিয়েছেন, তিনি আর ঝামেলা করবেন না৷ অথচ সোমবার তিনি লোকজন নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেন৷ মানববন্ধন করলেন৷ তিনি তো এখন ওবায়দুল কাদেরের ফোনই ধরেন না৷ আমাদের সঙ্গেও কথা বলেন না৷ তাহলে আমরা তাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো?’’

গত জানুয়ারি মাসেও নোয়াখালীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ সদর উপজেলার এওয়াজ বালিয়া ইউনিয়নে চর করমুল্লা বাজারে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ এতে অন্তত ২০ জন আহত হন৷

জানুয়ায়িতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় শহরের ডবলমুরিং থানার ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়৷ সেখানে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে৷  

এখন নির্বাচনের মৌসুম চলছে, ফলে মনোনয়নের একটা প্রতিযোগিতা আছে: শাখাওয়াত হোসেন শফিক

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ সর্বশেষ পটুয়াখালির বাউফলে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুলের তোড়া নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেখানেও ২০ জন আহত হয়েছেন৷ তবে চলমান পৌরসভার নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বেড়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কারো কারো এত মরিয়া হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে৷ সবাই তো চাইবেন মনোনয়ন পেতে৷ কিন্তু আমরা তৃণমূলে নেতাদের কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটর করছি৷ আসলে বৈশ্বিকভাবে এক ধরনের অস্থিরতা বেড়েছে৷ তার প্রভাব বাংলাদেশেও আছে৷ এই কারণে হয়ত কিছুটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে৷ অনেক জায়গায় আমরা কঠোর ব্যবস্থাও নিচ্ছি৷”

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে কি আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হচ্ছে? তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ কি শিথিল হয়েছে? আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোনটাই না৷ এখন নির্বাচনের মৌসুম চলছে৷ ফলে মনোনয়নের একটা প্রতিযোগিতা আছে৷ এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখি৷ কিন্তু কিছু জায়গায় দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে৷ সেগুলোতে আমরা শক্তভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে৷’’