1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তেলের রাণী মরক্বোর আরগান এখন ইউরোপের বাজারেও

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০

আরগান তেল কে বলা হচ্ছে ‘সব তেলের রাণী’৷ মরক্কোয় আরগান তেল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে প্রসাধনী৷ আরগান তেলের চাহিদাও বাড়ছে দিনকে দিন৷ রূপ চর্চায় আরগান তেলের ভূমিকা কতটুকু ?

https://p.dw.com/p/PFwg
আরগান ফলছবি: dpa

সৌন্দর্যের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের কথা আমরা জানি৷ চন্দন, হলুদ, রূপটান ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরণের তেল৷ সুস্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ধরণের তেল ম্যাসাজ করার কথা বলেন চিকিৎসকরা৷ ওমেগা থ্রির অতিরিক্ত তেল ঝড়িয়ে ফ্যাটি এসিডসহ, কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে তৈরি করা হয়েছে আরগান তেল৷ এই তেল ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর করতে সক্ষম৷

আরগান তেলটি ফল থেকে আসে তাঁর নামও আরগান, গাছের নামও আরগান৷ এই গাছ দেখা যায় মরোক্কোয়৷ ইউরোপের নামকরা প্রসাধনী কোম্পানিগুলো সম্প্রতি খবর পেয়েছে এই তেলের কথা৷ জানতে পেরেছে তেলের অসাধারণ গুনের কথা৷ সেই কোম্পানিগুলো চেষ্টা করছে মরক্কোর যে অঞ্চলে এই গাছ দেখা যায় সেখানে আরাগান গাছের চাষ বাড়াতে৷ সে অঞ্চলের মহিলাদের কর্মজীবি হতে সাহায্য করতে৷

মারাকেশের একটি গ্রামে ছয়জন মহিলা মাটিতে বসে কাজ করছেন৷ তাঁদের সবার হাতে একটি করে শক্ত পাথর৷ সেই পাথর দিয়ে তাঁরা আরগান বাদামের খোসা ভাঙ্গছেন, ভেতরে রয়েছে নরম দানা৷

এই মহিলারা তিগুয়েমিন আরগান তেলের সমবায় সমিতির সদস্যা৷ মারাকেশ থেকে একটু দূরে আটলাস পাহাড়ের কাছে৷ গত আট বছর ধরে হান্না হালিদ এই সমবায় সমিতিটি চালাচ্ছেন৷ তিনি জানালেন আরগান তেল আসলে কী৷ হালিদ জানান, ‘‘আরগান হচ্ছে একটি গাছ, দেখতে জলপাই গাছের মতই৷ কিন্তু এই গাছটি শুধু মরক্কোতেই দেখা যায়৷ এর ফল থেকে আমরা দু ধরণের তেল তৈরি করি৷ একটি খাবার জন্য, আরেকটি ত্বকে ব্যবহার করার জন্য৷''

যে সব মহিলা এই সমবায় সমিতির সঙ্গে জড়িত তাঁরা হয়তো বিধবা নয়তো তালাকপ্রাপ্ত৷ তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছেন আর্থিকভাবে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে৷ বিয়ে হয়নি এমন মেয়ে এখানে কাজ করে না কারণ বিয়ে না করায় সমাজে তাদের অবস্থান অনেক নিচে৷ হালিদ জানালেন, ‘‘মরক্কো পুরুষ শাসিত সমাজ৷ নারীদের কোন কথা বলার স্বাধীনতা নেই৷ আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন করতে চাই কারণ এই দেশে পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি কর্মঠ৷ মহিলারাই বেশি কাজ করছে৷ মূল সমস্যা সেখানেই৷''

Stadttor in Fez Marokko
ছবি: AP

আরগান তেল তৈরি করা কঠিন পরিশ্রমের কাজ৷ একটি মহিলা যদি অর্ধেক লিটার আরগান তেল তৈরি করতে চায় তাহলে তাঁর ছয়দিন সময় লাগবে৷ প্রথমে বাদামটি ভাঙ্গতে হবে, হাত দিয়ে দানাটি মিহিন করতে হবে এবং প্রতিবারই একটু একটু করে তেল জমবে৷

কিন্তু এই কঠিন কাজের স্বীকৃতি শেষ পর্যন্ত মিলেছে৷ আর্গান তেল মরক্কোয় কয়েক শতাব্দ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ তেলটি দিয়ে রান্না করা হয়৷ খেতে বাদামের মত এক ধরণের স্বাদ পাওয়া যায়৷ ঠিক জলপাই তেলের মত৷ আর জলপাই তেলের মতই আরাগান তেলে ওমেগা থ্রির পরিমাণ বেশি এবং এই তেলে কোলেস্টেরলের পরিমাণও খুব কম৷ ইদানিং এই তেলের চাহিদা বাড়ছে ইউরোপে৷ তবে তা খাবার তৈরির জন্য নয় বরং প্রসাধনী তৈরির জন্য৷

হালিদ ইংল্যান্ড থেকে আসা বেশ কিছু পর্যটককে আরগান তেলের কিছু সামগ্রী দেখান৷ এই তেলের ব্যবহারের নানা দিকও তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন৷ হালিদ পর্যটকদের বললেন, ‘‘এই তেলটি ম্যাসাজের জন্য খুব ভাল৷ এটা একজিমা এবং এ্যাকনি নিরাময়ে সাহায্য করে৷''

গত কয়েক বছরে দুনিয়াখ্যাত কিছু প্রসাধন কোম্পানি, যেমন গার্নিয়ের, দ্য বডি শপ এবং লো'রিয়্যাল এই আরগান তেল আমদানি করা শুরু করেছে৷ তারা সরাসরি তেল আমদানি করছেন এই মহিলা সমবায় সমিতির কাছ থেকে৷ কোম্পানিগুলো এই তেল ব্যবহার করছে লিপস্টিক, সাবান, শ্যাম্পুতে৷ জানানো হচ্ছে ত্বককে কোমল এবং সজীব দেখাবে৷ বলিরেখা দূরে সরে যাবে অনেক দূরে৷

হালিদ জানালো তাঁর দাদী এবং নানীরা এই তেল ব্যবহার করতেন সারা শরীরে৷ ত্বককে ঠিক রাখার জন্য৷ তবে সেই প্রচলন এখন আর নেই৷ এখন সেই প্রলনকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে ইউরোপ৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়