1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ত্রাণ নিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ নভেম্বর ২০২০

সাতক্ষীরায় জার্মান দূতাবাসের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের সময় স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা অনিয়মের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত৷

https://p.dw.com/p/3lcQ6
Bangladesch Deutsche Botschaft Lebensmittelverteilung Botschafter Peter Fahrenholtz
ছবি: Twitter/@peterfahren

অবশ্য শেষ পর্যন্ত ঠিক লোকদের মধ্যেই ত্রাণ বিতরণ করা গেছে বলে জানান তিনি৷

জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফারেনহলৎস সাতক্ষীরার একটি ইউনিয়নে বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ উদ্বোধন করেন ১৪ নভেম্বর৷ জার্মান দূতাবাসের উদ্যোগে ছয় হাজারের বেশি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের প্রকল্প ছিল এটি৷ পরে ঢাকায় ফিরে ১৯ নভেম্বর এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ের কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের নিজেদের স্বার্থে ত্রাণের খাদ্য সরানোর চেষ্টা করেছিল বলে জানতে পেরেছি, যা আমাকে হতাশ করেছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা ঠিকমত ত্রাণ বিতরণে সক্ষম হই৷ প্রকৃত অভাবীরাই খাদ্র সামগ্রী পেয়েছেন৷’’

এই ত্রাণ বিতরণ করা হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নে৷ ত্রাণ বিতরণের সময় সেখানে এএসপি সার্কেল ইয়াছিন আলি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন সুলতানা, ওসি গোলাম কবির, শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল, প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেনসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন৷

সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন সুলতানা জানান, ‘‘ত্রাণ দেয়া উদ্বোধনের সময় জার্মান রাষ্ট্রদূত ছিলেন৷ এরপর তিনি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ঢাকায় চলে যান৷ আমরাও তার সাথে যাই৷ বিকেলের দিকে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সমস্যা হয়৷ খবর পেয়ে আমি ওসি সাহেবকে নিয়ে সেখানে যাই৷ ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে ছিল মিনা নামে একটি এনজিও৷ জার্মান দূতাবাসই তাদের নিয়োগ দেয়৷ তাদের কাছে ঝামেলার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, যত প্যাকেট ছিল তার চেয়ে ত্রাণ প্রার্থী বেশি ছিলেন৷ প্রথমে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়৷ পরে বেশি লোক আসায় সাড়ে ১২ কেজি করে দেয়া হয়৷ যারা কম পেয়েছেন তারা হৈচৈ করেন৷’’

‘ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সমস্যা হয়’

তিনি বলেন, ‘‘পরে আমি এবং ওসি সাহেব সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ত্রাণ বিতরণ শেষ করতে সহায়তা করি৷ আমি যখন ছিলাম তখন কোনো রাজনৈতিক নেতাকে সেখানে দেখিনি৷’’

শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল বলেন, ‘‘এখানে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা মিনা এনজিও তালিকা তৈরি করে৷ টোকেন বিতরণ করে৷ তাদের ভলান্টিয়াররাই বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন৷ আমাদের কোনো দায়িত্ব ছিলনা৷''

তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে ২,৫০০ লোককে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়৷ পরে দেয়া হয় সাড়ে ১২ কেজি করে ৪০০ লোককে৷ কিন্তু যাদের সাড়ে ১২ কেজি করে চাল দেয়া হয় তারা প্রথমে ওই পরিমাণ চাল নিতে অস্বীকার করেন৷ তারা বলেন, আগে যারা নিয়েছে তারা ২৫ কেজি পেয়েছে আমরা কেন সাড়ে ১২ কেজি নেব? লোকজন একটু উত্তেজিত হয়ে ওঠে৷ ওসি সাহেবকে ফোন করলে তিনি এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন৷ পরে তারা সাড়ে ১২ কেজি করেই চাল নেন৷’’

সাকিল বলেন, ‘‘আমি পুরো সময় সেখানে ছিলাম না৷ একটি কাজ থাকায় চলে যাই৷ তবে আমি যতক্ষণ ছিলাম কোনো রাজনৈতিক নেতাকে সেখানে দেখিনি৷’’

ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘মিনা ইনক্লুসিভ সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট' নামের এনজিওটির ম্যানেজার মনির হোসেনের জানান, জার্মান দূতবাসের এই ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তা নেন৷ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য কিছু লোকের সহায়তায় ওই এলাকা থেকে ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ঠিক করা হয়৷ ওই স্বেচ্ছাসেবকরাই ত্রাণ পেতে পারেন এমন ২,৫০০ লোকের তালিকা করেন৷ তাদেরই টোকেন দেয়া হয়৷ কিন্তু স্বেচ্ছাসেবকদের কেউ কেউ টোকেন বাণিজ্য করেন৷ তারা টোকেন বিক্রি করেন৷ স্বেচ্ছাসেবকরা এমন কিছু লোককে টোকেন দেন যারা কিছু টাকার বিনিময়ে ওই চাল নিয়ে তাদেরকে দেবে৷ এটা তারা (এনজিও কর্মীরা) ধরে ফেলায় কিছু স্বেচ্ছাসেবক তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন৷ তারাই ত্রাণ বিতরণের শেষ দিকে পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা করে৷ এমনকি তখন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানও তাদের ভুল বোঝেন৷

‘ত্রাণ বিতরণের শেষ দিকে পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা করে’

তিনি জানান, ২৫০০ লোকের জন্য ২৫ কেজি করে চাল নেয়া হলেও ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ লোকের সংখ্যা বেশি ছিল৷ তাই শেষ পর্যায়ে ২০০ প্যাকেজ ভেঙে তারা ৪০০ করেন৷ তখন প্রতি প্যাকেজে সাড়ে ১২ কেজি করে চাল দেয়া হয়৷

মনির হোসেন বলেন, ‘‘আমরা চাইছিলাম যাতে কেউ খালি হাতে ফেরত না যান৷ কিন্তু তখন কিছু ক্ষুব্ধ ভলান্টিয়ার স্থানীয় কিছু ছেলেকে নিয়ে সাধারণ ত্রাণ প্রার্থীদের উত্তেজিত করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে ফেলে৷ এক পর্যায়ে আমরা নিরাপত্তার কারণে বাকি ত্রাণ বিতরণ বন্ধ করে চলে আসার উদ্যোগ নিই৷ পরে সহকারী কমিশনার ও ওসি সাহেব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে যারা এই ধরনের কাজ করেন তারা রাজনীতির বাইরে বলে আমি মনে করিনা৷''

তিনি জানান, ১৪ নভেম্বর সকাল থেকেই ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়৷ জার্মান রাষ্ট্রদূত সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যান৷ দুপুর ১২টার দিকে তিনি চলে যান৷