1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টেকসই শস্য চাষের অভিনব উদ্যোগ

৭ জুন ২০১৮

ভুট্টার চাষ চাষিদের জন্য প্রথমে লাভজনক হলেও জমির ক্ষতি, পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা কুফল বয়ে আনতে পারে৷ থাইল্যান্ডে চাষিদের ভুট্টা ছেড়ে টেকসই শস্য চাষ করতে সাহায্য করছে ডাব্লিউডাব্লিউএফ৷

https://p.dw.com/p/2z3qe
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/AGF-Foto

চাষিদের জন্য ‘ফিড কর্ন’ বা গবাদি পশুর খোরাক হিসেবে ভুট্টা উৎপাদন আপাতদৃষ্টিতে বেশ আকর্ষণীয়৷ বিপুল চাহিদার কারণে এর মূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে৷ তাই অনেক চাষি পুরোপুরি এর উপর নির্ভর করেন৷ কিন্তু এক-ফসলি চাষের কারণে মাটির উর্বরতা দ্রুত লোপ পায়৷

সোমবুন চাষি হিসেবে এই ভুট্টার উৎপাদন বন্ধ করতে চান৷ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি গবাদি পশুর খাদ্য উৎপাদন করছেন৷ কিন্তু সম্প্রতি ফসলের মান খুব খারাপ হয়ে উঠেছে৷ তাঁর মতে, রাসায়নিক সার ছাড়া সেখানে আর কিছুই গজাচ্ছে না৷ কিন্তু সেই সার বেশ দামি৷ ফলে তিনি ব্যাংকের কাছে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছেন৷ সোমবোন বলেন, ‘‘ভুট্টাচাষের ফলে সমস্যা বাড়ছে৷ কিন্তু এ পর্যন্ত আমার কোনো বিকল্প ছিল না৷ আমি কখনো অন্য কিছু শিখিনি৷ পরিবারের দায়িত্ব ঘাড়ে ছিল৷ কেউ এসে আমাকে অন্য পথে চলতে সাহায্য করলে আমি তার কথা শুনতে প্রস্তুত৷’’

আর নয় ভুট্টা চাষ

রাতাপাত শ্রীচানক্লাদ ভুট্টা চাষিদের জন্য বিকল্প পথ খুলে দেবার ব্রত নিয়েছেন৷ সেই কাজে তাঁকে দূর পথ পাড়ি দিতে হয়৷ এক পাহাড়ি গ্রামে তিনি চাষিদের জন্য ওয়ার্কশপ করছেন৷ পথেই তিনি ন্যাড়া পাহাড় দেখতে পেয়েছেন৷ ভুট্টা চাষের কুৎসিত রূপ বেরিয়ে পড়েছে৷

বেড়ে চলা চাহিদা মেটাতে চাষের নতুন জমি খুঁজতে হয়৷ সরকারিভাবে অনেক বছর ধরে গাছ কাটা নিষিদ্ধ হলেও ভুট্টাচাষিরা জঙ্গল সাফ করে আরও ভেতরে পৌঁছে যাচ্ছেন৷ রাতাপাত বলেন, ‘‘এর পর বর্ষা এলে এই সব খেতে আবার ভুট্টার বীজ রোপণ করা হবে৷ তার আগে তারা সব ঘাস পুড়িয়ে ফেলে৷ তখন এখানে সবকিছু জ্বলেপুড়ে যায়৷’’

সেই ছাই অবশ্যই সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় বটে, কিন্তু নিয়মিত এই পোড়ানোর প্রক্রিয়া পরিবেশের জন্য এক বিপর্যয়৷ রাতাপাত শ্রীচানক্লাদ মনে করেন, ‘‘এর মধ্যে বছরে একবার এখানে সব কিছু পুড়িয়ে ফেলা হয়৷ ছোট গাছপালা ও প্রাণী রেহাই পায় না৷ ফলে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়৷ তবে সবচেয়ে খারাপ পরিণতি হলো স্মগ বা কুয়াশা, যা দিনের পর দিন থেকে যায়৷’’

রাতাপাত যেখানেই যান না কেন, তাঁর ওয়ার্কশপকে ঘিরে বিপুল আগ্রহ দেখা যায়৷ চাষিরা বিনামূল্যেই তাতে অংশ নিতে পারেন৷ তিনি তাঁদের সবুজ জঙ্গলের স্বপ্ন দেখান৷

জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্রায় ১০ লক্ষ ইউরো অনুদান দিয়ে থাইল্যান্ডে এই ওয়ার্কশপ আয়োজনে সাহায্য করে৷ পরিবেশ সংগঠন ডাব্লিউডাব্লিউএফ স্থানীয় সহযোগী হিসেবে প্রকল্পটি চালায়৷ প্রকল্পের প্রধান প্লাই পাইরম বলেন, ‘‘আমরা শিল্পখাতের ধনতান্ত্রিক প্রণালীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছি৷ সেই প্রক্রিয়া টেকসই নয়৷ আমাদের সমাধানসূত্রের জন্য অনেক উদ্যোগ, অনেক সচেতনতা ও অনেক কাজ করা প্রয়োজন৷ সেটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷’’

আপাতত তাদের হাতে ৩ বছরের বেশি সময় নেই৷ প্রকল্পের মেয়াদ ততদিন পর্যন্তই৷ ওয়ার্কশপে চাষিদের এমন কিছু নির্দেশাবলি দেওয়া হয়, যেগুলি তাঁরা সহজে প্রয়োগ করতে পারেন৷ যেমন সঠিকভাবে সেচের কায়দা শেখানো হয়৷ কারণ ভুট্টার তুলনায় অনেক শস্যের বেশি পানি লাগে৷ চাষিরা কীভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মাটি আর্দ্র রাখতে পারেন, রাতাপাত শ্রীচানক্লাদ তা বুঝিয়ে বলেন৷ চাষিদের তিনি বলেন, ‘‘এই প্রক্রিয়ায় আমরা স্রোতের গতি কমাতে পারি৷ ফলে আশেপাশের মাটি আরও বেশি পানি পাবে৷ তবে এই বাঁধ নিয়মিত পরীক্ষা ও তার উন্নতি করে যেতে হয়৷’’

তিরাসাক সুওনো আগে ভুট্টা চাষ করতেন৷ শেষে তাঁর কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা এসে পড়েছিল৷ এখন তাঁর খেতে অরগ্যানিক কলা চাষ হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘পরিবর্তন মোটেই সহজ ছিল না৷ কারণ শস্য বদলানোর মাঝের সময় আমাদের কোনো আয় ছিল না৷ তবে সাহায্য পেয়ে টিকে গিয়েছিলাম৷ ঋণ শোধ দেবার মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যাংকও সাহায্য করেছিল৷ এখন আমি আশাবাদী৷’’

সব চাষি অবশ্য এই প্রকল্প এত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন নি৷ কিন্তু ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক ভুট্টা ছেড়ে টেকসই শস্যের চাষ করতে প্রস্তুত৷

প্রকল্পের সাফল্যের স্বার্থে ডাব্লিউডাব্লিউএফ কিছু ক্রেতাকেও সামিল করেছে৷ যেমন চিয়াং মাই শহরের এক অরগ্যানিক রেস্তোরাঁ৷ দালালের কমিশন এড়িয়ে চাষিরা সরাসরি তাঁদের কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারছেন৷ এখনো পর্যন্ত এই প্রকল্পের সাফল্যের পেছনে অনেক আদর্শ ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ কাজ করছে৷ কিন্তু টেকসই এই সব কৃষিপণ্য বাজারে কতটা জায়গা করে নিতে পারবে? আশার কথা, পরিবর্তনের চাপ অত্যন্ত বেশি৷ দিনে দিনে তা বেড়েই চলেছে৷ রাতাপাত শ্রীচানক্লাদ বলেন, ‘‘আমরা সরকারের অপেক্ষায় বসে থাকতে পারি না৷ নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করতে হবে এবং ভোগ ও উৎপাদনের প্রক্রিয়া আরও টেকসই করে তুলতে হবে৷’’

রাতাপাত শ্রীচানক্লাদ ও তাঁর সহকর্মীরা আরও বেশি মানুষকে এই সাফল্যের স্বাদ দিতে চান৷ সম্ভাবনাময় এই পরিবেশে তাঁরা সেই কাজে সফল হতে পারেন৷

ফ্লোরিয়ান নুশ/এসবি