1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারে হয় ‘টিনিতুস’

২৩ আগস্ট ২০১০

আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ কী মাঝে মাঝেই গর্জন, গুঞ্জণ ধ্বনি, ফিসফিসানি কিংবা শিষ বাজাবার শব্দ শুনতে পান? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনি টিনিতুসে আক্রান্ত৷

https://p.dw.com/p/Otpl
দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল ফোনে কথা বললে ‘টিনিতুস’ হতে পারেছবি: picture-alliance/ dpa

কখনো কখনো এই শব্দগুলো সবসময় শুনতে পাওয়া যায়৷ বিশেষ করে নির্জন এলাকায় থাকলে শব্দের মাত্রাটা আরও বেশি মনে হয়৷

কেন হয় টিনিতুস

সবচেয়ে বড় যে কারণটা জানা যায় সেটা হলো, প্রচন্ড জোরে কোনো শব্দ শোনা৷ যেটা হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে৷ ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কারণে তাঁর এই সমস্যা হয়েছে৷ এছাড়া অনেকক্ষণ ধরে জোরে জোরে গান শুনলেও টিনিতুস হতে পারে৷

তবে এসব কারণ ছাড়াও সম্প্রতি আরেকটা কারণের কথা বলছেন গবেষকরা৷ সেটা হলো নিয়মিত দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল ফোনে কথা বলা৷ অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক গত প্রায় এক বছর ধরে এই গবেষণাটি চালিয়েছেন৷ এর জন্য তাঁরা টিনিতুস আছে এমন ১০০ জন মানুষকে বেছে নেয়ার পাশাপাশি টিনিতুস নেই এমন ১০০ জনকেও নিয়েছেন৷ অর্থাৎ মোট ২০০ জনের ওপর গবেষণাটি চালানো হয় এবং সেটা প্রায় এক বছর ধরে৷

Mobile World Congress in Barcelona Flash-Galerie
নিয়মিত চার বছর মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ‘মারাত্মক টিনিতুস' হতে পারেছবি: AP

প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, যারা প্রতিদিন গড়ে ১০ মিনিট মোবাইল ফোনে কথা বলেন তাঁদের টিনিতুসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ বেশি৷ এছাড়া, নিয়মিত চার বছর মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ‘মারাত্মক টিনিতুস' হওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলছেন গবেষকরা৷

‘অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন' – নামক এক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি৷ ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হান্স-পেটার হুত্তার নেতৃত্ব দেন এই গবেষণা দলের৷

মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়ে অনেকেই অনেক সমস্যার কথা বলেন৷ অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে ক্যান্সার হয় কিনা – তা নিয়েও গবেষণা হয়েছে অনেক৷ যদিও একেক গবেষণায় ফলাফল এসেছে একেক রকম৷ তাই গবেষণার ফল যে সব সময় ঠিক হবে তা নয়৷ এই যেমন ড. হুত্তার৷ তিনিও বলছেন, তাঁদের গবেষণায় অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল৷ তাই প্রাপ্ত ফলাফল যে পুরোটাই ঠিক সেটা তিনি নিজেও বলছেন না৷ তাই বলে সেগুলো একেবারে ফেলে দেয়াও ঠিক হবেনা বলে মনে করেন ড. হুত্তার৷ তিনি বলেন, এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা করা যেতে পারে৷ এবং সেক্ষেত্রে তাঁদের গবেষণাটি একটা দিক নির্দেশকের মতো কাজ করতে পারে৷

টিনিতুস হলে কী হয়

টিনিতুস থেকে ব্রেইন টিউমারের মত কঠিন রোগ হতে পারে৷ এছাড়া বিভিন্ন মানসিক সমস্যাও হতে পারে৷ আর শুধু যদি টিনিতুস হয় তাহলে কানে সবসময় ফোসফোস বা গুনগুন আওয়াজ হবে৷ এতে বিরক্তির উদ্রেক হয়৷ আর এমন পরিস্থিতিতে কাজে মন দেয়া সম্ভব নয়৷ শান্তিতেও ঘুমানো যায়না৷

চিকিৎসা

চিকিৎসার কারণে কিছুটা স্বস্তি হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু পুরোপুরি মুক্তি সম্ভব নয়৷ তবে টিনিতুসের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায়ের কথা বলা যেতে পারে৷ যেমন শব্দের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হলে সুরেলা কোন গানের সিডি ছেড়ে দেয়া যেতে পারে৷ এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে৷ তাহলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাবে৷ ফলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে৷ মদ আর সিগারেট একেবারে খাওয়া যাবেনা৷ আরেকটা উপায় ‘টিনিতুস মাস্কার' ব্যবহার৷ এটা ছোট একটা বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা হেয়ারিং এইড-এর মতো কানে ঢুকিয়ে নিতে হয়৷ এই যন্ত্র থেকে একটা মধুর শব্দ নির্গত হয়, যা অস্বস্তিকর শব্দগুলোকে ঢেকে দেয়৷

সবশেষে যে উপায়ের কথা বলা যায় সেটা হলো খাবারে লবণ দেয়া বন্ধ করে দেয়া৷ বা লবণের পরিমাণটা কম দেয়া৷ কারণ লবণ খাওয়ার কারণে কানের মধ্যাঞ্চলে তরল পদার্থ জমে যেতে পারে, যেটা কিনা টিনিতুসের ঝুঁকি বহু মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ