1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতা সরকারকে হাইকোর্টের তিরস্কার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কলকাতা হাইকোর্টে তিরস্কৃত হলো মহরমের কারণে দুর্গাপুজোর বিসর্জন বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত৷ ‘এটা সরকারের অপদার্থতা’, বলল আদালত৷

https://p.dw.com/p/2kBUh
কলকাতা হাইকোর্টছবি: DW/P. Tewari

আগামী ১ অক্টোবর মহরম৷ সেই কারণে বিজয়া দশমীর দিন সন্ধে ৬টার পর আর কোনও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশিকা জারি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ আর মহরমের দিন বিসর্জন পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল৷ সরকারি ঘোষণার আগেই অবশ্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি টুইট করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন৷

এরপরই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয় নানা পর্যায়ে৷ প্রথমত যে যুক্তিতে তর্ক ওঠে, যে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসব বা উদযাপন বহু বছর ধরেই কাছাকাছি সময়ে হয়৷ তার দরুণ কখনও কোথাও বড় কোনও অশান্তি, বা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার নজির নেই৷ তা হলে কেন দুই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিভাজনকে এরকম প্রকট করে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী!‌ সরকারের এই সিদ্ধান্ত এতটাই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে যে, কিছু মুসলিম গোষ্ঠী বিবৃতি দিয়ে জানাতে বাধ্য হয়, যে তারা সরকারকে মহরমের দিন, বা দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখার কোনও আবেদন জানায়নি৷ অর্থাৎ, এটা পুরোপুরিই সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত৷ এবং কেন সংখ্যালঘুদের খাতিরে সংখ্যাগরিষ্ঠের ন্যায্য অধিকার খর্ব করা হবে, সে প্রশ্নও তুলতে শুরু করে বিজেপি এবং তাদের সমর্থকরা৷ বিজেপি নেতারা বিষয়টা নিয়ে সরব হন৷ এমনকি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে গেছেন৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে নেহাতই নিজের খেয়াল-খুশিতে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা যদিও নয়৷ কারণ, বিজয়া দশমীর দিনটি বিজেপি ‘‌শস্ত্রপূজা' করবে, এরকম একটা খবর অনেকদিন ধরেই আছে৷ বিজেপির প্ররোচনায় এই রাজ্যে অভূতপূর্ব‌ভাবে রাম নবমী পালিত হয়েছে, সেখানে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল হয়েছে৷ কাজেই এবার বিজয়া দশমীর দিন একই চেষ্টা যে হবে না, বা মহরমের দিন কোনও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর যে চেষ্টা হবে না, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না৷

কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘোষণা সরকারি নির্দেশিকার আগেই কী করে মুখ্যমন্ত্রী টুইটারে জানিয়ে দিলেন, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এবং সেই সূত্রেই আদালতের দ্বারস্থ হন উত্তম বসাক নামে এক নাগরিক৷ পঞ্জিকায় বিসর্জনের নির্ঘণ্ট তুলে ধরে তিনি দশমীর দিন সন্ধে ৬টার মধ্যে বিসর্জন সেরে ফেলার সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন৷ জবাবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হাইকোর্টকে জানান, ওটা সরকারি বিজ্ঞপ্তির ‘‌ছাপার ভুল’৷ দশমীর দিন রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন করা যাবে৷ কিন্তু পঞ্জিকা অনুযায়ী যেহেতু মধ্যরাতে ১.‌৩৬ মিনিট পর্যন্ত দশমী, ততক্ষণ পর্যন্ত বিসর্জনের ছাড়পত্র চান উত্তম বসাক৷

এই মামলার সূত্রে রাজ্য সরকারকে রীতিমতো তিরস্কার করেছে কলকাতা হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চ৷ মুম্বই শহরের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, সেখানে যদি গনেশ পুজো এবং ঈদের উদযাপন পাশাপাশি চলতে পারে, তা হলে কলকাতায় কেন হবে না!‌ রাজ্য সরকার যদি সেই ব্যবস্থা না করতে পারে, তা হলে সেটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা৷ হাইকোর্ট পরিস্কার বলে, এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকার ক্ষুন্ন করা যায় না৷