1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতিবাজ ধরবে দুদক, দুদক ধরবে কে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ ডিসেম্বর ২০২১

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অন্যের দুর্নীতি ধরার আগে নিজেদের অসততা দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন দুদককে।

https://p.dw.com/p/4433c
রাষ্ট্রপতির কথায় স্পষ্ট, দুদককে আস্থা অর্জনে বহুদূর যেতে হবেছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman

রাষ্ট্রপতির পরামর্শ যে বাস্তবসম্মত তা খোদ দুদক চেয়ারম্যানও মানছেন৷

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত এক সভায় পাঠানো ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতি কমিশনের প্রতি

 ‘নিজের ঘরে' আগে অভিযান চালানোর আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, " দুদকের সব পর্যায়ের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে তারা যেন সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করেন।  অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার পূর্বে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে হবে।”

তার মতে, "দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না- জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।”

রাষ্ট্রপতির কথায় স্পষ্ট যে দুদককে আস্থা অর্জনে আরো বহুদূর যেতে হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআই)-র জরিপে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২ তম। এটা ২০২০ সালের হিসেব। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৪ তম স্থানে। সেই হিসেবে সর্বশেষ বছরে দুই ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১২টি সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের একটি। আগে ছিল ১৪টির মধ্যে একটি। অবশ্য এক সময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ‘চ্যাম্পিয়ন', অর্থাৎ প্রথম স্থানেও ছিল।

অর্থ পাচার নিয়ে এখন বেশ হইচই হচ্ছে। সর্বশেষ হাইকোর্টে অর্থপাচারকারীদের একটি তালিক জমা দিয়েছে দুদক। তাতে ১৪টি প্রতিষ্ঠান ও ২৯ ব্যক্তির নাম রয়েছে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি আদালত। কারণ, ২০১৮ সালের প্যারাডাইস পেপার্সের তালিকায়ই ৮২ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম ছিল। গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)-র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে গত ১৬ বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে । আদালতও বলেছে, অর্থ পাচার তো বন্ধ হচ্ছে না। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদদরা বলছেন, এই টাকা ঘুস ও দুর্নীতির টাকা।

‘অর্থ পাচারকারীদের তালিকা করা দুদকের কাজ নয়’

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল  বলেছেন, ক্যানাডায় যারা অর্থ পাচার করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন, তাদের অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা। গত নভেম্বরে তিনি দাবি করেছিলেন, শুধু ক্যানাডায় অর্থ পাচার করা ২৮ পাচারকারীর নামের তালিকা তিনি পেয়েছেন।  আর দুদক সব মিলিয়ে ৪৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, দুদক পাচার হওয়া অর্থের সামান্যই এখন পর্যন্ত ফেরত আনতে পেরেছে। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ২১ কোটি টাকা ফেরত আনে সিংগাপুরের একটি ব্যাংক থেকে। এখন মোরশেদ খান ও তার পরিবারের ১৬ কোটি টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছে হংকং-এর একটি ব্যাংক থেকে।

পিকে হালদার সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে ক্যানাডায় পালিয়েছেন। তাকে ফিরিয়ে আনা এবং টাকা ফেরত আনার কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তিনি নির্বিঘ্নে চলে গেছেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "বাংলাদেশ থেকে বছরে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়। এটা বিশাল অপরচয়, বিশাল দুর্নীতি। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দুদকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আরো অনেকের দায়িত্ব আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনিরও এটা দায়িত্ব। সবাই মিলে কাজ করা দরকার।”

‘বাংলাদেশ থেকে বছরে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়’

তার মতে, "আইনে ধাকলেও দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সরকারের প্রভাব আছে। তাই তারা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ধরতে ভয় পায়। তাদের সিলেকটিভ হতে হয়।”

তিনি মনে করেন, "রাষ্ট্রপতি ঠিকই বলেছেন। দুদকে অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন। তাদের দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যেখানে দক্ষতার অভাব আছে, সেখানে দক্ষতা বাড়াতে হবে।”

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেন, "রাষ্ট্রপতি বলেছেন নিজের ঘর থেকেই দুর্নীতি নির্মূল শুরু করুন। আমার কথা হলো, এখানে যারা চাকরি করেন, তারা তো সবাই অন্য গ্রহ থেকে আসেননি। তারা কি সবাই ফেরেশতা? ফেরেশতা না। এখন নিজেরা যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হই, তাহলে অপরের দুর্নীতি কীভাবে ধরবো? এজন্যই বলা হয়েছে নিজেরা আগে পরিশুদ্ধ হই তারপরে...। আমিও বিশ্বাস করি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঠিক কথাই বলেছেন। এখানে সমাজে আর আট-দশটি জায়গায় যা আছে, আমার এখানেও তাই। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করবো নিজেদের দুর্নীতির বাইরে রাখতে।”

তার কথা, "অর্থ পাচারকারীদের তালিকা করা দুদকের কাজ নয়। এটা করার কোনো মেকানিজম আমাদের কাছে নেই। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ। তাদের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট আছে, ব্যাংক আছে। তারা তথ্য দিলে আমরা পাবো, ব্যবস্থা নেবো। তথ্য না দিলে  আমরা পাবো না।''

দুদক চেয়ারম্যান জানান, তাদের মামলায় শাস্তি পাওয়ার হার শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। ভবিষ্যতে এটা আরো বাড়বে। কারণ, দুদকের তদন্তে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।  ফরেনসিক ল্যাব করা হচ্ছে। ফলে তদন্তে দক্ষতার যে ঘাটতি আছে, তা অনেকটা দূর হবে।

দুদকের তথ্য মতে, এখন তাদের কাছে মোট মামলা আছে এক হাজার ৫২১টি। অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে তিন হাজাার ৮৭৪টি অভিযোগ।