1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের যুদ্ধের অঙ্গীকার

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনি ইশতাহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের অঙ্গীকার করেছে৷ শেখ হাসিনা অতীতের ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন৷এসবের প্রশংসাই করেছেন বিশ্লেষকরা৷ তবে প্রশ্ন আছে আন্তরিকতা নিয়ে৷

https://p.dw.com/p/3AK2c
Bangladesh Wahl  Sheikh Hasina
ছবি: PID

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতাহারে যা আছে
ইশতাহারের ২১টি দফার মধ্যে আছে, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ; সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি; সামষ্টিক অর্থনীতি : উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন; জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গঠন করা; সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল; স্থানীয় সরকার ও জনগণের ক্ষমতায়ন; জনসংখ্যায় বয়স কাঠামোর সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন; অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প; তরুণ যুবসমাজ : ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ উল্লেখযোগ্য৷ প্রতিটি দফার সঙ্গে গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ কী করেছে, ভবিষ্যতে কী করতে চায় সেগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের ক্ষমা চাওয়ার উদাহরণ নেই৷ এটা খুবই ইতিবাচক৷ পাশাপাশি তিনি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার কথাও বলেছেন৷ এটাও ভালো দিক৷ তিনি টেকসই উন্নয়নের কথা বলেছেন৷ এখন উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে৷ সেখানে বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রেরস্বাধীনতা কিন্তু ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ আমরা দেখেছি, কিছু আইনের কারণে এগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে৷ সেখানে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, তিনি নির্বতনমূলক বা পশ্চাতমুখী আইনগুলো সংস্কার করবেন৷ আর দুর্নীতির বিষয়ে যে ঘোষণা এসেছে, সেটা আগেও আমরা ইশতাহারে দেখেছি৷ এটা শুধু ইশতাহারে থাকলেই হবে না৷ এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই৷ আমাদের কিছু প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ বা রাজনীতিকরণ হয়েছে৷ সেখান থেকে আমাদের বের হতে হবে৷ এই কাজগুলো যদি হয়, তাহলে দেশের জন্যই ভালো হবে৷''

‘খুবই ইতিবাচক ইশতাহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ’

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতাহার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা৷ দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করে দেবো– এটা আমাদের জাতির কাছে ওয়াদা৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে এবং দলের পক্ষ থেকে আমাদের যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার জন্য দেশবাসী আপনাদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি৷ আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরো সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব৷''

ইশতাহার ঘোষণার পর শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি৷ আমাদের এবারের অঙ্গীকার, আমরা টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করব৷ এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনগণ কিছু পায়, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও সমৃদ্ধির সকল সুযোগ এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাঙ্খিত ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ৷''

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতাহার কেমন হলো জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতাহারে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দিক রয়েছে৷ বিগত দিনের শাসনামলে কী অর্জন ছিল, ভবিষ্যতে কী করতে চায়, সেটার একটা দিকনির্দেশনাও রয়েছে৷ পাশাপাশি রূপকল্প ২০২১ নিয়ে যেমন বলেছেন, তেমনি ২০৪১ ও ২১০০ শতাব্দীতে গিয়ে কী করতে চায়, তারও একটা গাইডলাইন রয়েছে৷ আমি মনে করি, খুবই একটা ইতিবাচক ইশতাহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ৷''

‘শুধু ইশতাহারে থাকলেই হবে না, এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই’

ইশতাহার ঘোষণার সময় শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, ‘‘আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা সাড়ম্বরে পালন করব৷ বাঙালি জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে, সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে৷'' ইশতাহার ঘোষণার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজকের বাংলাদেশ আর্থিক দিক থেকে যেমন শক্তিশালী, তেমনি মানসিকতার দিক থেকে অনেক বলীয়ান৷ ছোটখাটো অভিঘাত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আর থামিয়ে রাখতে পারবে না৷ ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা দিয়েছে৷ ২০১৮ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছে৷ আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালে যেখানে ৫৪৩ মার্কিন ডলার ছিল, সেখানে ১৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদের কাছেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতাহার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটা ভালো দিক৷ কিন্তু গত ১০ বছরে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটাও দেখতে হবে৷ এখানে গণতন্ত্র, রাষ্ট্র ও দল একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে৷ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে, এটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু সরকারের সমালোচনা করলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা কেন হবে৷ এখানে সেটাই হচ্ছে৷ সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা তো যে কেউ করতে পারে৷ গত ৫ বছরে বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৮৫ হাজার মামলা হয়েছে৷ এই মামলাগুলোতে সরাসরি ২৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশন থেকে ইশতাহার ঘোষণার পরও বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে৷ এখনো অনেক প্রার্থী নির্বাচনি মাঠ বাদ দিয়ে আদালতে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছেন৷ ফলে ইশতাহারে ভালো ভালো কথা বললে হবে না, মন থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে৷ দেশটা কিন্তু স্বাধীন হয়েছিল একটা সাম্যের জন্য৷ মুক্তিযুদ্ধে আমার বহু বন্ধু শহিদ হয়েছে৷ আমি তখন জুনিয়র লেকচারার৷ আমি নিজেও পালিয়ে রক্ষা পেয়েছি৷ এখন দেশ দুই ভাগ হয়ে গেছে৷ আমরা আর তোমরা৷ আমরা মানে আওয়ামী লীগ আর তোমরা মানে বাকি যা আছে৷ আওয়ামী লীগের বাইরেও তো মুক্তিযোদ্ধারা আছে৷ সেটাও তো স্বীকার করতে হবে৷''

‘গত ১০ বছরে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটাও দেখতে হবে’

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতাহারে মানসম্মত সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছে৷ সবচেয়ে বড় যে অঙ্গীকার এসেছে, সেটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে৷ সেখানে বলা হয়েছে, দুর্নীতি একটি বহুমাত্রিক ব্যাধি৷ পেশিশক্তির ব্যবহার ও অপরাধের শিকড় হচ্ছে দুর্নীতি, যার ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ-জীবনে অবক্ষয় বা পচন শুরু হয় এবং অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন প্রভৃতি কোনো ক্ষেত্রেই ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না৷ দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে৷ আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ৷ নির্বাচনি ইশতেহারে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘যুবসমাজ দেশের মূল্যবান সম্পদ৷ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ, যা প্রায় ৫ কোটি ৩০ লাখ৷ ‘সোনার বাংলা'র স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানতম শক্তি হচ্ছে যুবশক্তি৷দেশের এই যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতেরূপান্তরের লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান