1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্ভোগ মধ্যবিত্তের, তাতে কার কী এসে গেল!

১২ নভেম্বর ২০২১

মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ভারত সরকার জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারে৷ কিন্তু ভোট ছাড়া তারা কিছুই বোঝে না৷

https://p.dw.com/p/42sY7
ছবি: DW

কলকাতা বিমানবন্দর থেকে লেকটাউন যশোর রোডের দূরত্ব ছয় কিলোমিটারের সামান্য কম৷ বিমানবন্দর থেকে অ্যাপ ক্যাব (ওলা, উবার) নিলে ভাড়া হয় তিনশ টাকার সামান্য বেশি৷ প্রিপেড ট্যাক্সি পাওয়া যায় আড়াইশ-তিনশ টাকায়৷ সম্প্রতি বিমানবন্দরে নেমে বাড়ি ফিরতে গিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল৷ ছয় কিলোমিটার দূরত্ব যেতে অ্যাপ ক্যাব দর হাঁকছে সাড়ে নয়শ টাকা৷ আর প্রিপেড ট্যাক্সি দাম চাইছে পাঁচশ টাকারও বেশি৷

দামবৃদ্ধি অযৌক্তিক নয়৷ গত কয়েকমাসে গোটা ভারতে পেট্রল-ডিজেলের দাম বেড়েছে লাফিয়ে৷ বছরের শুরুতেও যে পেট্রল ৮০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তার দাম কম-বেশি ১০৮ টাকা৷ ডিজেল ১০০ টাকা ছাড়ানোর পর সরকার ১০ টাকা দম কমিয়েছে৷ আপাতত ৯০টাকার আশপাশে৷ জ্বালানির দাম বাড়লে তার অনুষঙ্গে বাজার অগ্নিমূল্য হয়৷ ভোজ্য তেল কিছুদিন আগেও লিটার প্রতি ১১০, ১২০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তা আড়াইশ টাকার কাছাকাছি৷ পেঁয়াজ, সবজি-সহ বাজারের প্রায় সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে৷ ফলে অ্যাপ ক্যাবের দর হাঁকানো অস্বাভাবিক নয়৷ সংসার টানতে সকলেরই তো কালঘাম ছুটছে৷

আসলে গত ২০ মাসে ভারতের অর্থনীতির মতোই দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির কোমর ভেঙে গেছে৷ করোনা এবং লকডাউনের কারণে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন৷ নতুন জায়গায় বহু আপস করে চাকরি খুঁজে নিতে হচ্ছে৷ বেতন কমছে, কাজের প্রকৃতি বদলাচ্ছে৷ লকডাউনে কাজ হারিয়ে এখনো কোনো চাকরি পাননি, এমন মানুষের সংখ্যা বিশাল৷ এই পরিস্থিতিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে৷ শুধু তো পেট্রল, ডিজেল নয়, রান্নার গ্যাসের দামও একাধিকবার বেড়ে প্রায় হাজার টাকা প্রতি সিলিন্ডারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে৷ স্বাভাবিকভাবেই মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়তে শুরু করেছেন৷ অবস্থা সামাল দিতে না পেরে ধনিয়াখালিতে এক গৃহশিক্ষক তার বাবা, মা, বোনকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন৷

এমন হওয়ার কথা ছিল না

মনমোহন সিংয়ের সরকার যখন ক্ষমতায়৷ সে সময় পেট্রল-ডিজেলের দাম ৬০ টাকা পার করেছিল৷ বিজেপির বর্তমান নেতা-মন্ত্রীরা তখন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ দাবি করেছিলেন৷ ভারতে তেলের দাম তখনো সরকার নিয়ন্ত্রণ করতো৷ ওই সময়ের পর স্থির হয়, তেলের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে৷ অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে, দেশেও বাড়বে৷ কমলে, দেশেও কমবে৷ যে কারণে, ভারতের প্রতিটি রাজ্যে তেলের দাম প্রতি ২৪ ঘণ্টায় বদলায়৷ বাজারের নিয়মে ওঠা-নামা করে৷ সমস্যা হলো, ওই দামের উপর কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ কর বসায়৷ যা নেহাত কম নয়৷ লাভের আশায় সময় সময় দুই সরকার করের অঙ্ক বাড়িয়েছে৷ এখন যখন তেলের অগ্নিমূল্য, সরকার প্রাথমিকভাবে কর কমাতে রাজি হয়নি৷ একশ টাকা প্রতি লিটার হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ডিজেলে ১০টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনো তাদের কর কমাতে চায়নি৷ সরকার যদি সত্যিই জনকল্যাণকামী হতো, তাহলে করের বোঝা কমিয়ে মানুষকে সাময়িক স্বস্তিতে থাকার সুযোগ করে দিল৷ বাস্তবে তা হলো না৷ জমিদার আমলে ধ্বস্ত প্রজাকে রাজকর দেওয়ার জন্য যেমন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হতো, বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সে কাজই পরিকল্পিতভাবে করে চলেছে৷ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত সত্যি সত্যিই বিধ্বস্ত৷ ঋণের বোঝায় জর্জরিত৷

সুযোগ নেয় মুনাফাখোরের দল

সংকটকালে কালোবাজারি বাড়ে৷ এ কোনো নতুন কথা নয়৷ সাম্প্রতিক করোনাকালে কালোবাজারির একাধিক ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছে ভারত৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না৷ যে ঘটনা দিয়ে শুরু করেছিলাম লেখা, সেখানেই ফিরে যাওয়া যাক৷ গত এক বছরে তেলের দাম সব মিলিয়ে ২০টাকার আশপাশে বেড়েছে৷ সেইমতো ট্যাক্সিভাড়া অবশ্যই বাড়া উচিত৷ কিন্তু বাস্তবে অ্যাপ ক্যাব দাম বাড়িয়েছে তিন গুণেরও বেশি৷ একেই কালোবাজারি বলে৷ অ্যাপ ক্যাব বুকিং নিয়ে বাতিল করে দিচ্ছে৷ গাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার চলবে না, এমন ফতোয়া জারি করে দিচ্ছে৷ এদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই৷ না সরকার, না প্রশাসন, না মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি৷ সকলে সব কিছু মুখ বুজে মেনে নিচ্ছে৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলে
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

অ্যাপ ক্যাবের চালক যেমন নিম্নমধ্যবিত্ত, তেমনই সেই ক্যাব ব্যবহার যিনি করছেন, তিনি মধ্যবিত্ত৷ ক্যাবচালকের কালোবাজারিতে আরো বিপাকে পড়ছেন মধ্যবিত্ত যাত্রী৷ ট্যাক্সি নেওয়া ছাড়া তার উপায় নেই৷ রাস্তায় বাস কমেছে৷ ভিড় বাসে করোনার ভয়৷ ট্রেন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে শুরু করেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ৷ কিন্তু অফিসে ঢুকতে হবে সময়ে৷ করোনাকালে অফিসের বেতন কমলেও ট্যাক্সি ধরা ছাড়া উপায় নেই তার৷ আর এই সুযোগটাই ব্যবহার করছে বেসরকারি গণপরিবহণ৷

এ শুধু কলকাতার খণ্ডদৃশ্য নয়, গোটা দেশ জুড়েই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে৷ প্রতিদিন আরো বেশি বেশি করে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে৷ এক এবং একমাত্র প্রশাসনই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে৷ কালোবাজারি রুখতে পারে, মূল্যবৃদ্ধি রুখতে জরুরিভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে৷ কিন্তু সে কাজ কেউ করবে না৷

ভোট বড় বালাই৷ উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার তেলের দাম অতি সামান্য কমিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে ভোট নেই, তাই সরকারেরও দাম কমানোর মাথাব্যথা নেই৷ তাতে যদি মানুষ মরে, মরার মতো করে বেঁচে থাকে, তাতে কার কী এসে যায়!

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ছবিঘরটি দেখুন...