1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দূরের দৃষ্টি হারাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম

২৪ জানুয়ারি ২০২১

স্ক্রিনের ব্যবহার এত বেড়ে গিয়েছে যে, দূরের দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম৷ করোনাকালে সমস্যা আরো বেড়েছে৷

https://p.dw.com/p/3oGUn
Symbolbild | Schönheit-Operationen
ছবি: A. Noor/BSIP/picture alliance

ঠিক মতো পড়তে পারছেন? স্ক্রিনের এই লেখাটা পড়ার জন্য চোখ কি খুব কাছে নিয়ে যেতে হচ্ছে? আপনার দৃষ্টি কি আগের মতোই আছে? না কি কোভিড সময়ে দৃষ্টিশক্তি খারাপ হয়েছে?

করোনা পৃথিবীর প্রায় সমস্ত মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে৷ লকডাউন, বাড়ি থেকে পড়াশোনা, ওয়ার্ক ফ্রম হোম-- এই সবকিছুর জন্যই মানুষ স্ক্রিনের উপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন৷ সারাক্ষণ সকলে তাকিয়ে আছেন ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, মোবাইল স্ক্রিনের দিকে৷ বাড়ির বাইরে মানুষ বেরোচ্ছেন না৷ ফলে প্রায় গোটা সময়টাই সকলে তাকিয়ে থাকছেন স্ক্রিনের দিকে৷ এর ফলে চোখ দূরের দিকে তাকাচ্ছে না৷ সারাক্ষণ হয় স্ক্রিন নয় বাড়ির ভিতরের বিভিন্ন জিনিসের দিকে দৃষ্টি যাচ্ছে৷ যাকে বলে কাছের দৃষ্টি৷ কিন্তু চোখ ভালো রাখার জন্য কাছের এবং দূরের দৃষ্টি দুইটিই জরুরি৷

চোখের ব্যায়াম

এই সময়ে চোখের ব্যায়ামখুব জরুরি৷ বিশেষ করে ছোটদের চোখে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ নেদারল্যান্ডস এবং চীনের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, কোভিড সময়ে মায়োপিয়ার মতো সমস্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে৷ বিশেষ করে ছোটদের চোখে এই সমস্যা সব চেয়ে প্রকট৷ চিকিৎসকরা এর নাম দিয়েছেন কোয়ারান্টিন মায়োপিয়া৷

চীনে এক লাখ ২০ হাজার শিশুকে পরীক্ষা করা হয়েছে৷ স্কুল পড়ুয়া এই শিশুদের চোখ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ছয় থেকে আট বছরের শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া হওয়ার প্রবণতা সব চেয়ে বেশি৷ ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালে এই বয়সের শিশুদের চোখে মায়োপিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে তিন গুণ৷

গোড়ার সমস্যা

চিকিৎসকরা বলছেন, গত প্রায় এক বছরে শিশুরা বাড়িতে বসে থেকেছে৷ সারাক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকেছে৷ দূরের জিনিস দেখেনি৷ ফলে তাদের দূরের দৃষ্টিশক্তি ঠিকমতো তৈরিই হচ্ছে না৷ দৃষ্টিশক্তি এক দিনে তৈরি হয় না৷ আট বছর পর্যন্ত শিশুদের চোখের গঠনগত পরিবর্তন হতে থাকে৷ ফলে এই বয়সের শিশুরা দূরের জিনিস না দেখতে দেখতে, দূরের দৃষ্টিশক্তিই হারিয়ে ফেলছে৷ বড় হওয়ার পরেও তাদের এই সমস্যা কাটবে না৷

ছয় থেকে আট বছরের মধ্যে আইবল যদি খুব বড় হয়ে যায়, তাহলে দূরের দৃষ্টির ক্ষমতা একেবারে কমে যায়৷ কাছের জিনিস দেখলে, খুব ফোকাস করে কোনো কিছু দেখলে আইবল বড় হয়৷ করোনাকালে ঠিক সেটাই ঘটেছে শিশুদের চোখে৷ এর থেকে রেটিনার সমস্যা হতে পারে৷ এমনকী, বেশি বয়সে অন্ধত্বও হতে পারে৷

যত বেশি পড়াশোনা, তত বেশি দৃষ্টিশক্তির সমস্যা

ব্রিয়ান হোলডেন ভিশন ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, একুশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছে, বিশ্বের পাঁচ বিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মানুষ কেবলমাত্র কাছের জিনিস দেখতে পাওয়ার সমস্যায় ভুগবে৷ গত এক দশকে উন্নত দেশে এই সমস্যায় ভোগা রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে৷

মজার বিষয় হলো, সমীক্ষা বলছে, পড়াশোনার সঙ্গে মায়োপিয়ার সরাসরি যোগ আছে৷ যাঁরা বেশি পড়াশোনা করেছেন, তাঁদের মায়োপিয়ার প্রবণতাও বেশি৷

এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো খুব ছোট বয়স থেকে কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা৷ মানুষের বাইরে যাওয়া এমনিই কমে গিয়েছে৷ রাস্তায় গিয়ে, মাঠে গিয়ে সুদূরের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস মানুষের কমে গিয়েছে৷ মুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপথালমোলজির ডিরেক্টর নিকোল এটার এমনই জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরনের সমস্যা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে৷ হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ যুবক এই রোগে ভুগছেন৷ চীনের ৮০ শতাংশ মানুষ দূরের জিনিস ঠিকমতো দেখতে পান না৷ ইউরোপে অর্ধেক মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত৷

চোখের চিকিৎসায় জিন থেরাপি

দূর এবং দিনের আলো

মায়োপিয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায় হলো, যে কোনো কাজ করার সময় মাঝে মাঝেই একটু দূরের দিকে তাকানো৷ এটা অভ্যাস করে ফেলতে হবে৷ খুব মন দিয়ে মোবাইল বা ট্যাবলেটে কাজ করার সময়ও মাঝে মাঝেই দূরের দিকে তাকাতে হবে৷

সূর্যের আলোও খুব জরুরি৷ দিনের কিছুটা বাইরে কাটাতেই হবে৷ সূর্যের আলো আইবলের গ্রোথ ভালো করে৷ স্ক্যানডেনেভিয়ার একটি সমীক্ষা বলছে, অন্ধকার মরসুমে মায়োপিয়া বাড়ে৷ আলো থাকলে মায়োপিয়ার সমস্যা অনেক কমে যায়৷

নীল আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়

স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে শুধুমাত্র মায়োপিয়ার সমস্যাই হয় না৷ এর ফলে শিশুদের চোখের জল শুকিয়ে যেতে থাকে৷ পরিভাষায় যাকে ড্রাই আই বলা হয়৷ চোখকে ক্লান্ত করে দেয় স্ক্রিন৷ স্মার্টফোনের নীল আলোর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে৷

ইদানীং অবশ্য বহু স্মার্টফোনই ব্লু লাইট রিডাকশনের ব্যবস্থা থাকে৷ নাইট মোড থাকে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘুমের অন্তত দুই ঘণ্টা আগে ফোন বন্ধ করে দেওয়া উচিত৷ কোনো স্ক্রিনের দিকে না তাকানোই ভালো৷

শিশুদের হাতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস দেওয়া বন্ধ করা উচিত৷ চিকিৎসকদের বক্তব্য হলো, তিন বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো স্ক্রিন শিশুদের চোখের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর৷ চার থেকে ছয় বছরের শিশুদের দিনে তিরিশ মিনিটের বেশি স্ক্রিনের দিকে তাকানো ঠিক নয়৷ কিন্তু বিশেষ করে করোনাকালে সেই হিসেব সম্পূর্ণ বদলে গেছে৷ অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে শিশুদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে৷ এর থেকে নিস্তার পাওয়ার একটাই সুযোগ৷ সুযোগ পেলেই বাইরে যাওয়া৷ খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে দূরের দিকে তাকানো৷

আলেক্সান্ডার ফ্রয়েন্ড/জিএইচ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য