1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশপ্রেমের তাগিদে তরুণী শিল্পপতির অভিনব উদ্যোগ

২ জানুয়ারি ২০১৯

বিদেশে উচ্চশিক্ষার পর লাভজনক চাকরি ছেড়ে নিজের দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঝাঁপ দেবার ক্ষমতা ক'জনের থাকে? ইন্দোনেশিয়ার এক তরুণী ঠিক সেই ঝুঁকি নিয়ে মানুষের কল্যাণকে সামনে রেখে এক ব্যবসা শুরু করেছেন৷

https://p.dw.com/p/3AsaR
Abenteuer Schokolade
ছবি: Marco Wicher

সুটকেস, ল্যাপটপ, বিমানের টিকিট – কাজের সূত্রে সাব্রিনা মুস্তোপোকে প্রায়ই ভ্রমণ করতে হয়৷ জন্ম ইন্দোনেশিয়ায়, স্কুলশিক্ষা সিঙ্গাপুরে, উচ্চশিক্ষা অ্যামেরিকার এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ তবে ২০১৩ সালে তিনি পাকাপাকিভাবে নিজের দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে গেছেন৷ সেখানে তিনি এক কোকো কারখানা চালু করেছেন৷ আজ তিনি জাকার্তা থেকে সুমাত্রা যাচ্ছেন৷ সাব্রিনা বলেন, ‘‘আমি সব সময়েই ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে কিছু একটা গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম৷ সে কারণে আমি কখনো আমার ইন্দোনেশীয় নাগরিকত্ব ছাড়িনি৷ এখানে অনেক কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি৷ বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও দেশ অত্যন্ত পিছিয়ে রয়েছে৷ তাই আমি ফিরে এসেছি৷''

প্রায় ২০০ চাষি তাঁর কোম্পানিতে কোকো বিন বা বীজ সরবরাহ করে৷ সাব্রিনা আজ তাঁদেরই একজনের সঙ্গে দেখা করছেন৷ পরিবর্তন চাইলে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি তৌফিক হিদায়াতকে কোম্পানির নতুন ব্র্যান্ডের চকলেট চেখে দেখতে দিচ্ছেন৷ তাঁর ক্ষেতে কোকো বিন উৎপাদন কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা করছেন৷ তুচ্ছ বিষয়ও গ্রামাঞ্চলে সমস্যা হয়ে উঠতে পারে৷ সবে গত বছর তৌফিকের বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে৷ তবে ইন্টারনেট সংযোগ এখনো দূর অস্ত৷ সাব্রিনা বলেন, ‘‘অবকাঠামোর অবস্থা খুবই খারাপ৷ ল্যাপটপ খুলে কিছু জানারও উপায় নেই৷ কোকো বিনসে কালো রং ধরলে তার অর্থ কী, তা জানার জন্য গুগল ঘেঁটে দেখাও সম্ভব নয়৷''

কৃষি অর্থনীতিবিদ ও খাদ্যবিজ্ঞানী সাব্রিনা সে কারণে শুধু চাষিদের কাছ থেকে কোকো বিন কিনেই সন্তুষ্ট হন না, তাঁদের প্রশিক্ষণও দেন৷ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কোকো উৎপাদনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়ার নিজস্ব কোনো চকলেট ব্র্যান্ড নেই বললেই চলে৷

সাব্রিনা বলেন, ‘আমাদের শুধু কাঁচামাল বিক্রি করা উচিত নয়'৷ তৌফিক হিদায়াৎ এ বিষয়ে একমত৷ প্রথমদিকে তাঁর মনে গভীর সংশয় ছিল৷ তৌফিক বলেন, ‘‘সাব্রিনা যখন প্রথমবার এখানে আসেন, অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় বেশি দামে কোকো কেনার প্রস্তাব এবং সেইসঙ্গে পেশাদারি পরামর্শও দেন, তখন আমরা এই ‘শহরের মেয়ের' কাণ্ড দেখে হাসাহাসি করেছিলাম৷ তারপর আমরা বুঝলাম, যে তিনি সত্যি এই পথে এগোতে চান৷''

কোকো বিন থেকে চকলেট তৈরি করে সাব্রিনা ছ'টি দেশে বিক্রি করছেন৷ তিনি নিজে বেলজিয়ামের এক বিখ্যাত চকলেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন৷ বাবা-মায়ের গ্যারেজে প্রণালী অনুযায়ী প্রথমবার চকোলেট তৈরি করেন তিনি৷ এখন তাঁর কোম্পানিতে ৫০ জনেরও বেশি কর্মী কাজ করেন৷

তাঁর মতে, উন্নয়নশীল দেশের তকমা ঝেড়ে ফেলতে হলে সরকারকে শিক্ষাখাতে আরও বিনিয়োগ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে হবে৷ অসংখ্য অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয় বলে তাঁর কোম্পানিও এই সমস্যার ভুক্তভোগী৷ সাব্রিনা মুস্তোপো বলেন, ‘‘সম্ভব হলে আমরা ঘুস দেই না৷ কিন্তু কখনো কখনো বাস্তববাদী হতেই হয়৷ ইন্দোনেশিয়ায় দুর্নীতি কমছে বটে, কিন্তু পুরানো এই সমস্যা যা রাতারাতি লোপ পাবে না৷ বিবেকদংশন ছাড়া কোনটা করা যায় বা যায় না, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা কোম্পানি হিসেবে তা বিবেচনা করি৷''

সাব্রিনার হাতে বেশি সময় নেই৷ গাড়িতে বসেই অনেক সময়ে অফিসের কাজ সারতে হয়৷ তবে কোম্পানির উপদেষ্টা হিসেবে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি মোটেই অনুতপ্ত নন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে থাকতে আমি সেরা আইডিয়াগুলি দেখার সুযোগ পেয়েছি৷ আশা করি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইন্দোনেশিয়াকে কিছুটা অগ্রসর করতে পারবো৷''

 

সমাজের উঁচু স্তরে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সাব্রিনা মুস্তোপো যথেষ্ট সচেতন৷ তবে তাঁর ভাষায়, ‘‘আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের অসংখ্য মানুষ কিছু একটা করে দেখাতে চায়৷''

সান্ড্রা রাৎসো/এসবি