দেশে দেশে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক
ছবিঘরে দেখে নিন মাতৃদুগ্ধ ব্যাংকের ধারণা কোথা থেকে এল, কোন কোন দেশে তা চালু আছে৷
মাতৃদুগ্ধ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর দুই কোটি শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়৷ এই ধরনের নবজাতকদেরকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে সংস্থাটি৷ পাশাপাশি যেকোনো নবজাতককে জন্মের পর থেকে অন্তত ছয়মাস মাতৃদুগ্ধ পান করার পরামর্শ ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের৷
সংরক্ষণ যে কারণে
শিশু তার মায়ের দুধ না পেলে অন্যকোন মায়ের বুকের দুধ যাতে পান করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও৷ এই প্রয়োজনের নিরিখেই হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উদ্ভব৷ যেসব মায়েদের নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে কিংবা সন্তানকে খাওয়ানোর পরও যাদের অতিরিক্ত দুধ আছে তারা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে তা সংরক্ষণ করতে পারেন৷ যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত তারা সেখান থেকে দুধ পানের সুযোগ পায়৷
প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক
প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৩ সালে ব্রাজিলে৷১৯৮৫ সালে দেশটিতে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়৷ ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ব্রাজিলিয়ান নেটওয়ার্ক অফ হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকস৷ শুধু নিজ দেশে নয় গোটা লাতিন আমেরিকায় মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা দেয় তারা৷ ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই অঞ্চলে এমন ৩০১টি সংরক্ষণাগার রয়েছে যার ২১৮টিই ব্রাজিলে৷
ইউরোপে দুই শতাধিক
ইউরোপের বিশটিরও বেশি দেশে মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগার রয়েছে৷ সব মিলিয়ে যার সংখ্যা ২৩৯টি বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন৷ আরো ১৫ টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে৷ এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ৩৭টি ব্যাংক আছে ইটালিতে৷ ফ্রান্সে ৩৬টি, সুইডেনে ২৮টি আর জার্মানিতে রয়েছে ২০টি৷
উত্তর আমেরিকায়
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্থ আমেরিকা৷ তারা এই অঞ্চলের অলাভজনক মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগারগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে৷ বর্তমানে তাদের অধীনে মিল্ক ব্যাংকের সংখ্যা ২৯টি৷
আফ্রিকার ত্রয়ী
আফ্রিকার তিনটি দেশে বর্তমানে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক রয়েছে৷ ১৯৮০ সালে প্রথম চালু হয় সাউথ আফ্রিকাতে, এরপর ২০১১ সালে আফ্রিকার কেপ ভার্দে এমন উদ্যোগ নেয়৷ সবশেষ চলতি বছরের আগস্টে কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশটির প্রথম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক৷
এশিয়ায় প্রথম ভারতে
এশিয়ায় প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক যাত্রা শুরু করে ভারতের মুম্বাইতে ১৯৮৯ সালে৷ বর্তমানে যার সংখ্যা প্রায় অর্ধশত৷ চীনেও এমন ব্যাংক আছে অনেকদিন থেকে৷ ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম তাদের প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে৷ ২০১৫ সালে থেকে এই উদ্যোগ চালু রয়েছে ফিলিপিন্সেও৷ চলতি বছর ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিশ্বের অন্যতম বড় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে৷
মুসলিম দেশগুলোতে
মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে তাবরিজ শহরে প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ইরান৷ চলতি বছরের আগস্টে পঞ্চম ব্যাংকের উদ্বোধন করা হয়েছে সিরাজ শহরে৷ ২০১২ সালে তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে এ ধরনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়৷ তবে এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি৷
বাংলাদেশে
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো মাতৃদুগ্ধ ব্যাংকের উদ্যোগ নেয় ঢাকার মাতুআইলে অবস্থিত শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট৷ প্রাথমিকভাবে এই ব্যাংকে ৫০০ লিটার দুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়৷ সে বছর ১ ডিসেম্বর এর যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও বাধার মুখে তা চালু করা যায়নি৷