1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দ্বিচারিতা করছেন মমতা, অভিযোগ বিরোধীদের

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি | স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ঐশী ঘোষকে ঢুকতে দেওয়া হল না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক৷ প্রশ্ন উঠেছে মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় কি দ্বিচারিতা করছেন?

https://p.dw.com/p/3Xlh7
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

জেএনইউয়ের বাম নেত্রী ঐশী ঘোষকে বৃহস্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঐশী জেএনইউ এর ছাত্র সংগঠনের প্রধান এবং সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হাতে আক্রান্ত হয়ে সংবাদ শিরোনামে৷ অভিযোগ, তাঁর উপর হামলা চালিয়েছিল আরএসএসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি৷

বৃহস্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লনে বামপন্থী ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের সংগঠন সেভ এডুকেশনের একটি সভা ছিল। সেখানে সিএএ, এনআরসি, এনপিআর এর বিরুদ্ধে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। সেখানেই বক্তা হিসাবে ঐশীকে ডাকা হয়৷ কিন্তু ঐশী আসছেন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ ঐশীকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ বিশ্ববিদ্যালয় গেটের বাইরে তিনি জনসভা করেন৷ সেখানে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রের মতো বাম নেতা এবং অনীক দত্ত, কৌশিক সেনের মতো বিশিষ্টজনেরা ছিলেন। ঐশী বলেন, সিএএ-এনআরসি-এনআরপি বিরোধী আন্দোলনকে থামানো মানে আদতে বিজেপি ও আরএসএসের হাত শক্ত করা৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে যে একটা আঁতাত আছে, সেটাই স্পষ্ট হল। এই অভিযোগ বামপন্থীরা সম্প্রতি বারবার করছেন। বলা হচ্ছে, নিজের দলকে বাঁচাতে বিজেপির সঙ্গে পরোক্ষ সমঝোতা করে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী৷ আর এর ঠিক বিপরীত অভিযোগ আসে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে। বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাম ও কংগ্রেস তাঁকে ক্ষমতাচ্যূত করতে চাইছে৷

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যুক্তি, বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে ঢুকে সভা করতে দেওয়া হয় না৷ এটা বিশ্বিবদ্যালয়ের ঐতিহ্যের বিরোধী৷ এই সভার অনুমোদনও দেওয়া হয়নি৷ যদিও অতীতে বহু বিহরাগতকে কলকাতা বশ্বিবদ্যালয়ে সভা করতে দেখা গিয়েছে৷ এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আমাদের সব ধরনের অনুমতি নেওয়া ছিল৷ শেষ সময়ে কীভাবে গেট বন্ধ করে দেওয়া হল, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এতেই প্রমাণ হয়, বিজেপি ও তৃণমূলের আঁতাতের অভিযোগ ঠিক৷ দিল্লিতে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে যিনি মার খান তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে কোনও অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয় না৷''

কিন্তু প্রশ্নটি কেবল ঐশীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া বা না দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না৷ বৃহত্তর প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন কুক্ষিগত করে রখতে চান? এই আন্দোলনে কি তিনি অন্যদের ঢুকতেই দিতে চান না? দিল্লিতে বিজেপি-আরএসএস যাঁকে থামাবার চেষ্টা করে, মমতা কি রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে জমি ছাড়তে চান না? প্রশ্নটি উঠছে কারণ, সম্প্রতি সিএএ-এনআরসি নিয়ে সনিয়া গান্ধীর ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি আসেননি মমতা৷ বরং কলকাতায় থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ সংসদেও কংগ্রেস সহ অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সিএএ বা মোদী সরকারের বিরোধ করেনি তিনি৷ নিজেরা আলাদা প্রতিবাদ করেছেন৷ সিএএ, এনআরসি, এনপিআর নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু যে আলাদাভাবে লড়ছেন তাই নয়, অন্য কাউকেই কলকাতায় এই আন্দোলন করতে দিতে তিনি খুব একটা উৎসাহী নন৷ ঐশী ঘোষের ঘটনা তার আরও এক ইঙ্গিত৷

ঐশীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ এ দিন বিধানসভায় তুলেছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি ঐশীর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ''আরএসএস ও বিজেপি যার কন্ঠরোধ করতে চায়, তৃণমূলও তাকে বলতে দিতে চায় না৷'' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, ''পশ্চিমবঙ্গে মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হয় না বলা হচ্ছে, অথচ, রোজই এখানে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে৷ বিক্ষোভ হচ্ছে৷ একটা মেয়ের সামান্য মাথা ফেটেছে, তাই নিয়ে এত হইচই। হাজরার ঘটনা ভুলে গেলেন? আমার মাথা কীভাবে ফাটানো হয়েছিল? ৩৪ বছরে অনেক দেখেছি৷ আমাকে শেখাবেন না৷'' এরপর বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে সুজন বলেন, ''ঐশী বাংলার গর্ব৷ তিনি যেভাবে আরএসএস ও বিজেপির আক্রমণ সহ্য করে লড়াই করছেন তার তুলনা হয় না৷ তাকে মুখ্যমন্ত্রী বিদ্রুপ করছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথা ফাটার পর এফআইআর হয়েছে. তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে৷ মমতা সেখানে সাক্ষ্য দিতে যাননি। ''

বিধানসভায় এ দিন আরও প্রশ্ন ওঠে।  মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে দুই জন মারা গিয়েছেন। অথচ, সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃতদের তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ পড়েছে কেন? মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, ''ওরা সরস্বতী পুজোর দিন বনধ ডাকে কেন?'' সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ''মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় দ্বিচারিতা এ থেকেই স্পষ্ট হয়। জলঙ্গির ঘটনা নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যে কথা বলেছেন, মমতাও ঠিক সেই একই কথা বলছেন। আসলে চিত্রনাট্য তৈরি হচ্ছে নাগপুরে (আরএসএস সদর দফতর), আর বিজেপি এবং তৃণমূল তা আউড়ে দিচ্ছে।''

তৃণমূল অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে৷ দলের সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আন্দোলনপ্রত্যেকেই করতে পারেন৷ সকলকে এক সঙ্গে আন্দোলন করতে হবে তার কোনও অর্থ নেই। আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেন, সেটা কী করে মুখ্যমন্ত্রী বা দলের ঘাড়ে চাপানো যায়? এর মধ্যে তৃণমূল নেই৷ বামেরা এ সব অভিযোগ করছেন ঠিকই, তবে এ সব ওরা বলছেন ৩৪ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে, যখন উপাচার্যদের দলদাস করে রখা হত৷'' 

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এর আগে কানহাইয়া কুমার পষ্চিমবঙ্গে এসে সভা করেছেন, এখন ঐশী করছেন৷ দেশবিরোধীদের নিয়ে এসে বিতর্ক তৈরি করে মমতা আসলে তাঁদেরকেই আরও জমি তৈরি করে দেন৷ এটাই তাঁর রাজনীতি৷ সিপিএমকে নিয়ে কিছু বলার নেই৷ ওদের লড়াই এখন নোটার সঙ্গে৷''

এ ভাবেই রাজনৈতিক তরজায় সরগরম পশ্চিমবঙ্গ৷ যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ উঠছে। আর তিনি সে সব উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা আঘাত করছেন বাম, বিজেপি, কংগ্রেসের ওপর৷ মনে রাখা দরকার, আগামী বছরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ২০২০ সালের গোড়া থেকেই তার ঢাক বেজে গিয়েছে বলা যেতেই পারে।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো