1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ম যার যার, রাজনীতি সবার

২০ মে ২০২২

হজযাত্রার ভর্তুকি বন্ধ হয়েছে ভারতে৷ কিন্তু একাধিক হিন্দু তীর্থের খরচ কি বন্ধ করতে পেরেছে সরকার? পারেনি, কারণ তাতে রাজনীতির ক্ষতি হয়৷

https://p.dw.com/p/4BdEG
হজে ভর্তুকি বন্ধ করা হলেও আদালতের নির্দেশের পরেও ভারতের অন্য তীর্থ বা মেলার জন্য খরচ কমানো হয়নি৷
হজে ভর্তুকি বন্ধ করা হলেও আদালতের নির্দেশের পরেও ভারতের অন্য তীর্থ বা মেলার জন্য খরচ কমানো হয়নি৷ ছবি: Hindustan Times/imago images

 

২০১২ সালের একটি ঘটনা দিয়ে লেখা শুরু করা যাক৷ সে বছর ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারকের বেঞ্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন৷ তারা বলেন, ভারতীয় মুসলিমদের হজে পাঠানোর জন্য যে সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হয়, ২০২২ সালের মধ্যে তা ক্রমান্বয়ে বন্ধ করতে হবে৷ কারণ, এই ভর্তুকি সাংবিধানিক নয়৷ শুধু তা-ই নয়, দুই বিচারক কোরান উদ্ধৃত করে বলেন, গরিব মুসলিমকে হজে যেতেই হবে, এমন কথা ধর্মগ্রন্থে লেখা নেই৷ বরং ওই ভর্তুকির টাকা মুসলিম সমাজের জন্য, বিশেষত, মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করার কথা বলা হয়৷

ব্রিটিশ ভারতে হজে যাওয়ার জন্য ভর্তুকি দেওয়ার রীতি চালু হয়েছিল৷ স্বাধীনতার পরে ১৯৫৯ সালে হজ আইন তৈরি করা হয়৷ যার সাহায্যে প্রতি বছর হজযাত্রীদের ভর্তুকি দিয়ে মক্কা-মদিনা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো৷ ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ২০১৮ সালে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ঘোষণা করে, হজের ভর্তুকি বন্ধ করা হচ্ছে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় সামনে রেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়৷

এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, প্রতি বছর হজের ভর্তুকির জন্য সরকারের ঠিক কত টাকা খরচ হতো৷ হিসেব বলছে, সরকারি সাহায্যে প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ হজে যেতেন৷ ২০১৩-১৪ সালে হজযাত্রার জন্য সরকারের খরচ হয়েছিল ৬৯১ কোটি টাকা৷ ২০১২-১৩ সালে খরচ ছিল ৮৩৬ কোটি টাকা৷ ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪০৮ কোটি টাকায়৷ ২০১৭-১৮ সালে তা আরো কমে হয় ২০০ কোটি টাকা৷

অথচ ভারতের অন্য তীর্থ বা মেলার জন্য খরচ কিন্তু কমেনি৷ আদালতের নির্দেশের পরেও তা কমানো হয়নি৷ উদাহরণ দেওয়া যাক-- ২০১৬ সালে উজ্জয়িনী মহাকুম্ভের জন্য রাজ্য সরকার খরচ করেছিল তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা৷ এর উপর কেন্দ্রীয় সরকার আরো ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করে৷ ২০১৯ সালে অর্ধকুম্ভের জন্য উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার আড়াই হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করে৷ এছাড়াও অমরনাথ যাত্রা, তিব্বতে মানস সরোবর যাত্রার জন্য এখনো বিপুল অর্থ ব্যয় করে কেন্দ্র এবং রাজ্য রাজ্যসরকারগুলি৷ গত কয়েকবছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজোর সময় বারোয়ারি ক্লাবগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে শুরু করেছেন৷ যদিও ওই ক্লাবগুলির পুজোর মূল বাজেট আসে চাঁদা তুলে এবং কর্পোরেটের বিজ্ঞাপন নিয়ে৷ ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকার বাজেটের পুজোয় ৫০ হাজার টাকা পাওয়া না পাওয়া সমান৷ তবু রাজ্য সরকার লাগাতার একাজ করে আসছে৷

ভারতীয় সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ধর্মের উন্নতি বা প্রয়োজনে নাগরিকের উপর ট্যাক্সের বোঝা চাপানো যাবে না৷ বিশেষজ্ঞরা এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, নাগরিকের ট্যাক্সের টাকা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা সংবিধানবিরোধী৷ মনে রাখা দরকার, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ৷ সেখানে সমস্ত ধর্মাচরণের অধিকার যেমন আছে, তেমনই ধর্মীয় কারণে নাগরিকের করের টাকা ব্যবহার করাও বাঞ্ছনীয় নয়৷ ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়েও তারই ইঙ্গিত ছিল৷

মুশকিল হলো, রাজনীতি সংবিধানের যুক্তিতে চলে না৷ ২০১২ সালের রায়কে বিজেপি পড়েছে কেবলমাত্র হজকে মাথায় রেখেই৷ দীর্ঘদিন ধরে হজের জন্য ভর্তুকিকে মুসলিম-তোষণ বলেই অভিযোগ করে এসেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি৷ কিন্তু হিন্দু যাত্রা বা মেলা বা তীর্থের জন্য নাগরিকের করের টাকা ব্যবহারের সময় তাদের 'তোষণ' শব্দটি মাথায় আসে না৷ রাজনীতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ইমামভাতা দিতে হয় আবার দুর্গাপুজোর জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়৷

ভারতে আসলে সবকিছুই রাজনীতির গায়ের জোরে চলে৷ আর কে না জানে, ভারতীয় রাজনীতি এই একুশ শতকে পৌঁছেও ধর্ম আর জাত-পাতের বাইরে বের হতে পারেনি!