1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণ নিয়ে আমাদের মুখবন্ধ!

১০ জানুয়ারি ২০১৯

নোয়াখালীর নারকীয় ধর্ষণের ঘটনার দগদগে ক্ষত শুকানোর আগেই আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে ৫ ও ৭ জানুয়ারির তিনটি ধর্ষণের ঘটনা৷ আমরা আসলেই স্তব্ধ, তাই ফুঁসে উঠিনি বিচারের দাবিতে৷

https://p.dw.com/p/3BJnW
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

গত ৫ তারিখে ২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়৷ আমি আবার লিখছি– দুই বছরের কন্যা শিশু৷ বস্তিতে মা-বাবা ও তিন বোনের সঙ্গে থাকতো শিশু আয়েশা৷ সেদিন বিকালেও খেলতে বের হয় শিশুটি৷ সন্ধ্যার দিকে টিনশেড বস্তির পাশের চার তলা বাড়ির সামনে আয়েশার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়৷

আর ৭ তারিখের ঘটনাটি নিশ্চয়ই আপনি পড়ে ফেলেছেন৷ ডেমরায় বাবা-মা কাজে ছিল, তখন দুই শিশুকে সাজিয়ে দেওয়ার নাম করে ধর্ষণের চেষ্টা করে ও পরে হত্যা করে৷ চিৎকারের মুখে ধর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়ে প্রথমে একজনকে গলা টিপে এবং পরে আরেকজনকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়৷ শিশু দু'টি নার্সারিতে পড়তো৷ স্কুল শেষে এলাকায় দুজনে ঘোরাঘুরি করছিল৷ ঠিক সেই সময়ই তাদের সাজিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নেয়া হয়৷

এই ঘটনাগুলো পড়ার পর আপনাদের অনুভূতি কী জানি না৷ আমি শুধু নিজের স্তব্ধ অনুভূতি নিয়েই বসে আছি৷ আপনার অনুভূতি জানার সুযোগ ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ বা অন্যান্য প্লাটফর্ম থেকে৷ কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, ভীষণ নিশ্চুপ সব সময় খইয়ের মতো ফুটতে থাকা অনলাইন প্লাটফর্ম৷ ভীষণ ক্ষোভে কয়েকজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন৷ কোন উপায়ে ধর্ষণ বন্ধ করা যেতে পারে, শাস্তি কী হতে পারে এই নিয়েই বেশি আলাপ ছিল, তবে সেটি ‘দায়সারা কার্যক্রম’ বলা চলে৷ শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো একটি ঘটনা নিয়ে কেন আমরা রাজপথে নই– এই প্রশ্ন নিজেকেই করছি বারবার৷  

এটা হতে পারে আমি গত ৫ ও ৭ তারিখের ধর্ষণ ঘটনা আজকে ৫ দিন পর খুঁজছি বলে থিতিয়ে গেছে আমাদের অনুভূতি৷ তবে আদৌ কি থিতিয়ে যাওয়ার কথা ছিল? আমাদের নিত্যদিনকার আলাপে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি নেই৷ কেন নেই?

অথচ ৩১ ডিসেম্বর রাতে নোয়াখালীর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ছেলে-বুড়ো সবাই বেশ সরব ছিলেন৷ এখনো এই বিষয়ে বিশ্লেষণ এবং আলোচনা-সমালোচনা চলমান৷  

তবে কি ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হতে গেলে অনেকগুলো বিষয় সামনে রেখে এগুতে হবে? আমাদের মানবমন কোন পথে হাঁটছে?

স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক যে-কোনো ঘটনা নিয়ে আমরা বেশ সরব হই৷ কারণ, এখানে পক্ষ-বিপক্ষ, দোষ, অপবাদ দেওয়ার মতো ঘটনা সহজ হয়৷ আমাদের রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক সচেতনতা অন্য যে-কোনো দেশের মানুষের চেয়ে বেশি৷ আর সরকার বা বিরোধীপক্ষের কঠোর সমালোচনার সুযোগও আমরা কেউ হাতছাড়া করতে চাই না৷ সে কারণে নোয়াখালীর ভোট নিয়ে নারী ধর্ষণের ঘটনায় আমরা সরব ছিলাম বলে দাবি করতেই পারি৷

আবার মনে হয়, ধর্ষণের বিষয়ে সরব হতে গেলে সামাজিক স্ট্যাটাসও মাথায় রাখার একটি বিষয় আসে৷ তনুর মতো শিক্ষিত নাট্যকর্মী মেয়েকে নিয়ে আমরা যতটা সরব হয়েছিলাম, টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর নিম্নবিত্ত পরিবারের রূপাকে হত্যা নিয়ে আমাদের আগ্রহ সমান ছিল না৷ আমরা এখনো প্রসঙ্গক্রমে তনুর নির্মম মৃ্ত্যু নিয়ে আলাপ তুলি৷ নিজেদের রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতেই তুলি, কারণ, এর বিচার হয়নি বলে প্রশাসনকে প্রশ্ন করা যাবে৷ কিন্তু রূপার হত্যাকারী বা তাঁর পরিবার নিয়ে আপাত দৃষ্টে আমাদের মাথাব্যথা একটু কমই৷ এমন করে এই তিন শিশুর ধর্ষণের ঘটনা ভুলে যাবো৷ কিন্তু আমাদের মাথা থেকে পারুল কিংবা পূর্ণিমা শীলের ঘটনা মুছে যাবে না৷ অন্তত একটি রাজনৈতিক দলের ওপর ক্ষোভ প্রশমিত করতে আমরা তাদের ‘ধর্ষক’ বলে গালি দিতে পারবো৷

Fatema Abedin, Intern, DW Bangla section.
ফাতেমা আবেদীন নাজলা, ডয়চে ভেলেছবি: privat

আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেদের কাণ্ড নিয়েও আমরা বেশ সরব হয়েছিলাম৷ এর পেছনে কি ‘ধনীর দুলাল’, উচ্চবিত্ত সমাজের প্রতি ক্ষোভ, ‘হোটেলকাণ্ড’– এসব ভাবনা কাজ করেছে?

আসলে ‘ধর্ষণ' শব্দটিই ভীষণ নারকীয়৷ তাই যখন যেখানেই একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার সঙ্গে যুক্ত হয় হত্যাকাণ্ড, তখন আমার মধ্যবিত্ত মন কি বিবেচনা করে সেটিই  মূল ভাবনা৷ আমাদের মধ্যবিত্ত মন শুধু ভাবে, ‘‘এতে আমার কী ক্ষতি, আমি তো ভালো আছি৷ এসব নিয়ে আমাকে বলতে হবে কেন!’’ এভাবেই আমরা ভয়ঙ্কর সব ঘটনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি৷ আজ নিম্নবিত্ত শিশুদের নাগাল পাওয়া সহজ বলে তাঁদের সন্তানদের ধর্ষণ ও হত্যা করে বেশ পার পেয়ে যাচ্ছি৷ কিন্তু কাল আমার বলয় থেকে আমার শিশুটি বেরিয়ে গেলে ভীষণ অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে৷ তাই আমাদের বোধহয় শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেই নয়, ধর্ষণের বিষয়ে সর্বত্রই সচেতন, সতর্ক ও সোচ্চার হতে হবে৷