1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শপথ নিলেন রামনাথ কোবিন্দ

অনিল চট্টোপাধ্যায়
২৫ জুলাই ২০১৭

ভারতের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি পদে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক শপথ নিলেন রামনাথ কোবিন্দ৷ সংসদের কেন্দ্রীয় হলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জে. এস. খেহর৷ নতুন রাষ্ট্রপতি ডাক দেন বিবিধতার মাঝে ঐক্যের৷

https://p.dw.com/p/2h79L
Indien Neuer Präsident Amtseinführung Ram Nath Kovind
ছবি: Reuters/C. McNaughton

একুশবার তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে সংসদের ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হলে ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেন রামনাথ কোবিন্দ৷ বলেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ সেই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, সংসদের উভয় কক্ষের সাংসদরা, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা এবং কূটনীতিবিদরা৷

কোবিন্দ হলেন ভারতের দ্বিতীয় দলিত রাষ্ট্রপতি৷ উত্তর প্রদেশের এক প্রান্তিক গ্রামে গরিব দলিত পরিবারের কুঁড়ে ঘর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ তিনি রায়সিনা হিলসে ৩৪০ কামরার রাষ্ট্রপতি ভবনের বাসিন্দা, অন্তত আগামী পাঁচ বছরের জন্য৷ জন্ম ১৯৪৫ সালে৷ কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য ও আইনে স্নাতক৷ পেশাগত দিক থেকে আইনজীবী৷ ১৬ বছর তিনি প্র্যাকটিস করেন হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে৷ এরপর তিনি হন সাংসদ এবং বিহারের রাজ্যপাল৷ তিনি রাষ্ট্রপতি পদের বিরোধী প্রার্থী মীরা কুমারকে পরাজিত করেন ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে৷

‘মোদীর পক্ষে রাজনীতি তথা শিক্ষার গৈরিকীকরণের পথে আর বাধা থাকবে না’

শপথ নেবার আগে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে সস্ত্রীক পুষ্পার্ঘ নিবেদনের পর, তিনি যান রাষ্ট্রপতি ভবনে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে৷ সেখান থেকে প্রথাগত প্রোটোকল অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ঘোড়সওয়ার ও দেহরক্ষী পরিবৃত শোভাযাত্রা সহকারে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি আসেন সংসদ ভবনে৷ শপথ গ্রহণের পর নতুন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ নতুন দিল্লির ১০ নং রাজাজি মার্গে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে তাঁর অবসরকালীন বাসভবনে ছাড়তে যান৷

নতুন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ একসময় ছিলেন হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারের সদস্য৷ এর প্রেক্ষিতে তিনি সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করতে কতটা সক্ষম হবেন, তাই নিয়ে মতদ্বৈধতা আছে৷ মোদী সরকার ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পছন্দের আমলাদের বসিয়েছেন৷ অনুগতদের এনেছেন রাষ্ট্রপতির সচিব, যুগ্ম-সচিব এবং প্রেস সচিব পদে৷

Indien Neuer Präsident Amtseinführung Ram Nath Kovind
ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবার পর রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অফ অনার পরিদর্শনে রামনাথ কোবিন্দছবি: Reuters/C. McNaughton

প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানি ডক্টর অমল মুখোপাধ্যায়ের কাছে ডয়চে ভেলে প্রশ্ন রেখেছিল নতুন রাষ্ট্রপতি কি গৈরিক রং একেবারে ধুয়ে ফেলতে পারবেন? সোজাসাপ্টা ভাষায় তিনি বললেন, ‘‘রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবি সংঘ বা আরএসএস-এর প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদে বসলেন৷ এর ফলে অনেক বিপদের সম্ভাবনা আছে৷ যেমন এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীর পক্ষে রাজনীতি তথা শিক্ষার গৈরিকীকরণের পথে আর বাধা থাকবে না৷ সহজেই তিনি রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেয়ে যাবেন৷ এটা দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে বলে মনে হয় না৷ এরচেয়ে বিজেপি যদি অন্য কোনো পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতো ভালো হতো৷''

তিনি অবশ্য নতুন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের নির্বাচনকে শ্রদ্ধার সঙ্গেই স্বাগত জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি এটাও সত্য যে, প্রধানমন্ত্রী মোদী কার্যত আরএসএস-এর হাতে বন্দি৷ তিনি যেটা করেছেন সংঘ পরিবারের সংকেত মাথায় রেখেই তাঁকে সেটা করতে হয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে বললেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানি ডক্টর মুখোপাধ্যায়৷

Indien Neuer Präsident Amtseinführung Ram Nath Kovind
শপথ নেবার জন্য রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে পার্লামেন্ট হাউসের দিকে যাত্রা করেছেন কোবিন্দ ও বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিছবি: Picture-alliance/AP Photo/M. Swarup

এর আগে, গত রবিবার সংসদের কেন্দ্রীয় হলে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিদায় সম্বর্ধনা জানানো হয়৷ বিদায়ী ভাষণে তিনি মোদী সরকারের কাজকর্মের সাধারণভাবে প্রশংসা করলেও খোঁচা মারতে ছাড়েননি৷ বলেন, সংবিধানকে সামনে রেখে যে কোনো জাতীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক হওয়া উচিত৷ মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু সংসদকে অচল করে দিয়ে নয়৷ আলোচনা ও বিতর্কের সুযোগ না দিয়ে অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি করাটা কাজের কথা নয়৷ আলোচনা ছাড়াই আইন পাশ করা হলে তা হয় মানুষের বিশ্বাসভঙ্গের নামান্তর৷ এই যেমন, ১৯৬৮ সালের শত্রু সম্পত্তি আইন গত বছরে পাশ করাতে না পেরে মোদী সরকার পাঁচটি অধ্যাদেশ জারি করে৷ পাশাপাশি অবশ্য জিএসটি বা পণ্য ও পরিষেবা বিল যেভাবে সংসদে পাশ করা হয়, তা প্রশংসনীয়৷ রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হলেও প্রয়োজনবোধে সরকারকে তা পুনর্বিবেচনা করতে বলতে পারেন, অতীতে যেটা করেছিলেন প্রথম দলিত রাষ্ট্রপতি কে. আর. নারায়ণন৷ তবে নতুন রাষ্ট্রপতি সেটা করবেন কিনা, তা ভবিষ্যতই বলতে পারে৷

বন্ধু, ভারতের নতুন প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? লিখুন নীচের ঘরে৷