1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌নাগরিকপঞ্জি ও মোদী-‌মমতার সাক্ষাৎ

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় মিছিলে পা-‌মেলাচ্ছেন, দিনে দু-‌বেলা হুঙ্কার দিচ্ছেন, অথচ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বেমালুম বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!‌

https://p.dw.com/p/3QDPm
ফাইল ছবিছবি: UNI

দিন কয়েক আগে নতুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অনেকেই ভেবেছিলেন আসামের পর পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ কিন্তু মমতা সে আলোচনা তো করলেনই না, বরং বৈঠকের পর নাগরিকপঞ্জি বিষয়ে নিজের সুর বদল করেছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি নিয়ে মোদীর সঙ্গে কোনো কথা হয়নি, নিজেই জানিয়েছেন৷ আবার পরদিন অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকে আসামের এনআরসি নিয়ে কথা বলেছেন!‌

ওদিকে, ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গে এনারসি‌র পক্ষে সওয়াল করে জোরদার প্রচার চালাচ্ছে৷ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্গের নেতা মোহন ভাগবতরা বলছেন, ‘‌‘‌পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু করা হবেই৷ কেউ রুখতে পারবে না৷’’ এখন পরিস্থিতি এমন যে, রাজ্যজুড়ে নাগরিকদের মধ্যে সরকারের গ্রহনযোগ্য নথি সংগ্রহের হিড়িক শুরু হয়েছে৷ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন৷ রাজ্যের অন্য বিরোধী দল সিপিআই (‌এম)‌ বলছে, কিছুতেই রাজ্যে এনআরসি হবে না৷ করতেও দেওয়া হবে না৷ এহেন বিরোধিতার পেছনে যুক্তি হিসেবে বামপন্থিরা বলছেন, পশ্চিমবাংলার মানুষ প্রতিবেশী দেশ থেকে ভিটেমাটি ছাড়া মানুষদের আশ্রয় দিয়েছেন৷ বুকে আগলে রেখেছেন৷ এখন রাজনৈতিক স্বার্থে এনআরসি করা চলবে না৷ একই বক্তব্য জানাচ্ছেন অপর বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারা৷ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরও বক্তব্য একই৷ কিন্তু তারা শুধুমাত্র বক্তব্য জানিয়েই ক্ষান্ত নন, দলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এনআরসি‌র বিরুদ্ধে পদযাত্রা করছে তৃণমূল৷ নানা এলাকায় সভা-‌সমিতি করা হচ্ছে৷ কিন্তু এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷

কী সেই প্রশ্ন?‌ পশ্চিমবঙ্গে যখন তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি‌-র বিরোধিতায় এত দৌড়ঝাঁপ করছেন, তখন দেশের রাজধানী নতুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেও নাগরিকপঞ্জি নিয়ে চুপ রইলেন কেন?‌ সাপে-নেউলে সম্পর্ক শিকেয় তুলে রেখে আচমকা হলুদ গোলাপের স্তবক হাতে তাঁর বৈঠক তাহলে কী উদ্দেশে?‌

‘‌মোদীর সঙ্গে বৈঠক সেরে মমতা যে রাজনীতি শুরু করেছেন তা মারাত্মক’

‘‌‘‌আমাদের দেশে নাগরিকত্ব ঠিক হয় সংবিধান ও আইন অনুযায়ী৷ কোনো ধর্ম, প্রদেশ, জাতি, বর্ণের ভিত্তিতে হয় না৷ বিজেপি নেতারা বলছেন, হিন্দুদের ভয় নেই৷ অর্থাৎ, মুসলমানদের তাড়ানো হবে৷ পশ্চিমবঙ্গে নয় জন আত্মহত্যা করেছেন৷ ২০০৫ সালে ‌সংসদে মমতাই প্রথম রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীর তত্ত্ব তুলে ধরে স্পিকারের মুখে কাগজ ছুঁড়ে মেরেছিলেন৷ এখন তিনি রাজ্যে হইচই করছেন, কিন্তু, নতুন দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এনআরসি নিয়ে কথা বললেন না কেন?‌ মানুষ বুঝেছেন মমতা আসলে কী চাইছেন৷’’

‌এই বিষয়টিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুজিত রায় ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন, ‘‌‘‌নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক সেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ফিরে এসে যে রাজনীতি শুরু করেছেন, তা মারাত্মক৷ মমতা ও তাঁর দলের কর্মীরা যে ধরনের প্রচার করছেন, তার মূল কথা হলো, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাঙালি খেদাও ‌অভিযান শুরু করতে চাইছে বিজেপি৷ ভয়ে সরকারি দপ্তরে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছেন৷ সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে পরিস্থিতি আরো খারাপ৷’’ তাঁর প্রশ্ন, শাসক দল যদি এমন গুজব ছড়ানোয় উদ্যোগ নেয় তাহলে সাধারণ মানুষ যায় কোথায়?‌

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও নিজের দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এনআরসি নিয়ে দ্বিচারিতা করছেন৷ তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে নাগরিকপঞ্জির প্রতিবাদে রোজই মুখ খুলছেন৷ আশ্বাস দিচ্ছেন, কাউকে তাড়ানো হবে না৷ মোদীর সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘নাগরিকপঞ্জি তো আসামের ব্যাপার!‌’’