1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নামে শসা, আসলে প্রাণী, দাম আকাশছোঁয়া

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নাম শসা হলেও আসলে কিন্তু প্রাণী৷ খাদ্য হিসেবে সামুদ্রিক শসার বিশাল কদর রয়েছে৷ কিছু প্রজাতির মূল্য আকাশছোঁয়া৷ আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারে সামুদ্রিক শসা পালন করে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির উদ্যোগ চলছে৷

https://p.dw.com/p/3Dcsi
Lala Njava beim Baum-Pflanzen in Madagaskar
ছবি: Lala Njava

সংরক্ষণের উদ্যোগ

বিশ্বের সব সমুদ্রেই সামুদ্রিক শসা পাওয়া যায়৷ প্রায় ১,২০০ প্রজাতির শসা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ এশিয়া, বিশেষ করে চীনে খাদ্য হিসেবে তার বিশাল কদর৷ এক কিলোগ্রাম শুকনা সামুদ্রিক শসার দাম ১,০০০ ডলার পর্যন্ত ছুঁতে পারে৷ সারা দিন ধরে এই প্রাণী বালুর নীচে থাকে৷ সে কারণে চাষিরা দুই সপ্তাহ অন্তর রাতে এসে সামুদ্রিক শসার খোঁজ চালান৷ কারণ চুরি ও রোগের কারণে এই প্রাণীর সংখ্যা কমে চলেছে৷

 ব্লুভেন্চার্স নামের এক এনজিও প্রায় ১০ বছর আগে গ্রামে একটি প্রকল্প শুরু করে৷ তার আওতায় সামুদ্রিক শসার ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়৷ ৪০০ গ্রাম ওজন হলে তবেই বিক্রি করা হয়৷ ব্লুভেন্চার্স-এর প্রতিনিধি মাহেরি আন্দ্রিয়ানাহি বলেন, ‘‘প্রজননের জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণের নির্দিষ্ট বিধিনিয়ম রয়েছে৷ প্রজননকারীদের সঙ্গে মিলে আমরা সেই সব নিয়ম স্থির করেছি৷ যেমন আমাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো চাষির জমিতে পা রাখা নিষেধ৷ কাঁকড়া ছাড়া সব রকম মাছ ধরাও নিষেধ৷ তারা সামুদ্রিক শসা খেয়ে ফেলে বলে তাদের ধরা চলে৷ সমুদ্রের সুরক্ষার জন্য এ সব নিয়ম স্থির করা হয়েছে৷''

সামুদ্রিক শসা চাষের আগে জেলেদের অতিরিক্ত কার্যকলাপের ফলে এই উপহ্রদে মাছ প্রায় লোপ পেয়েছিল৷ আজ সেখানে মাছ, শামুক ও কাঁকড়ার অসাধারণ বৈচিত্র্য দেখা যায়৷ যে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করেন, সেখানে এই গ্রামে কিছুটা সমৃদ্ধি এসেছে৷

সামুদ্রিক শসা দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন

মাদাম সেরাফিন ২০০৯ সালে প্রথম চাষিদের মধ্যে ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সামুদ্রিক শসার ফার্মের আগে আমার জীবনযাত্রার উন্নতির কোনো সুযোগ ছিল না৷ যখন থেকে নিজের আলাদা চাষের ক্ষেত্র পেয়েছি, তখন থেকে আমার দুই সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য এসেছে৷ তাছাড়া বাসার জন্য কিছু ভালো ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পেরেছি৷ আমি এখন একপাল ছাগলেরও মালিক৷''

কেউ নিজের সামর্থ্য দেখাতে চাইলে একটি শূকর কেনে৷ টামপোলোভে-তে অনেক শুয়োর দেখা যায়৷ তবে শুধু বড়দিন উৎসবের সময়েই শূকর জবাই করা হয়৷

চাষের কায়দাকানুন

সারাদিন ধরে সামুদ্রিক শসা যখন বালুতে ডুবে থাকে, তখন ভেড়ির বেড়া পরিষ্কার করতে হয়৷ লাজুক প্রকৃতির এই প্রাণী সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি৷ তবে চাষিরা লক্ষ্য করেছেন, যে বিনা বাধায় পানির প্রবাহ ছোট বেড়া পেরিয়ে বইতে পারলে তারা আরও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে৷

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথরিন টেলর গোটা বিশ্বের হাতে গোনা সামুদ্রিক শসা বিশেষজ্ঞদের অন্যতম৷ তিনি বলেন, ‘‘এ এক বিশেষ ধরনের প্রাণী৷ এখানে যে প্রজাতির চাষ হচ্ছে, তার নাম হলোটুরিয়া স্কাব্রা৷ আন্তর্জাতিক বাজারে তার বিশাল কদর৷ এমন এক গ্রামে টেকসই প্রজনন সম্ভব হওয়ায় স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে গেছে৷ অন্যদিকে সামুদ্রিক শসা এই এলাকার ইকোসিস্টেমের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ গোটা বিশ্বে এই প্রজাতি প্রায় লোপ পেতে বসেছিল৷ উপহ্রদে তার উপস্থিতি সি-গ্রাসের জন্যও কল্যাণকর৷ সামুদ্রিক শসা অনেকটা প্রাকৃতিক ফিল্টারের কাজ করে৷ সেগুলি বালু শুষে নিয়ে  অরগ্যানিক আবর্জনা, মাইক্রো অ্যালজি ও ব্যাকটিরিয়া দূর করে৷'' 

প্রাদেশিক রাজধানী টুলেয়ার-এ বাণিজ্যিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইওটি-তেও নিরাপত্তার বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ সেখানে কম বয়সের প্রাণীদের প্রজনন করা হয়৷ পরে তারা টাম্পোলোভে উপসাগরে বিচরণ করতে পারে৷ সেগুলি যথেষ্ট বড় হলে আইওটি প্রাপ্তবয়স্ক সামুদ্রিক শসা ধরে তা প্রক্রিয়াজাত করে৷ ইন্ডিয়ান ওশেন ট্রেপাং-এর প্রতিনিধি টিবো জুলোলি বলেন, ‘‘প্রায় ৪৫০ গ্রাম ওজনের পূর্ণবয়স্ক প্রাণী থেকে ১৫ গ্রাম ওজনের চূড়ান্ত পণ্য তৈরি করতে সবার আগে প্রাণীগুলিকে কাটতে হয়৷ নীচে ছোট করে কেটে ভেতরের অংশ ফেলে দেওয়া হয়৷ তারপর পানিতে ফুটিয়ে শুকানো হয়৷ খাবার আগে সেই শুকনো সামুদ্রিক শসাকে পানিতে ডোবাতে হয়৷ পাতলা করে কেটে সালাদে অথবা সুশি হিসেবে সেগুলি খাওয়া যায়৷''

টাম্পোলোভে-তে চাষিদের কাছে প্রত্যেকটি ছোট আকারের সামুদ্রিক শসার দাম ১৬ সেন্ট৷ তবে প্রায় ৯ মাস ধরে সেটি বালু খাবার পর পূর্ণবয়স্ক প্রাণীর দাম বেড়ে ১ ডলার, ৩০ সেন্ট ছোঁয়৷ ফলে শুধু চাষি নয়, গোটা উপসাগর ও সেখানে বসবাসরত সব প্রাণীরই উপকার হয়৷

ভিবকে ফয়ারসেঙার/এসবি