1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী প্রার্থী সব দলেই ২০ ভাগের কম

২৭ মার্চ ২০২১

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আলোচনার বড় একটা অংশ জুড়ে নারী প্রার্থীরা৷ কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ‘বাংলার মেয়ে'র স্লোগান৷ কিন্তু নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর প্রশ্নে কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে?

https://p.dw.com/p/3rGNn
ছবি: privat

প্রথম দফার নির্বাচনে ভোট দেবেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার একাংশ, ঝাড়গ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুরের একাংশ ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশের ভোটাররা৷ ৫৬টি আসনের জন্য লড়াই দিয়েই শুরু এবারের বিধানসভা নির্বাচন৷ মোট ২৯৪টি আসনের জন্য ভোটের লড়াইতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নারী ভোটাররা, যাদের সংখ্যা তিন কোটি ৬০ লাখের কাছাকাছি৷

সব দল মিলিয়ে, এবারের নির্বাচনে লড়বেন মোট ১৪১জন নারী প্রার্থী৷ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ৯৬৷

ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস আগের বার ৪৫জন নারীকে প্রার্থী করলেও এবারে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩তে (মোট ২৯০টি আসনে লড়বে তৃণমূল, বাকি ৪টিতে লড়বে তাদের মিত্রদল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা)৷ শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘বাংলা তাদের মেয়েকেই চায়' স্লোগানেই ভরসা করছে তৃণমূল৷ কলকাতা শহর ছেয়ে গেছে এই স্লোগান-লেখা হোর্ডিঙে৷ তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, শশী পাঁজার মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিকের পাশাপাশি রয়েছেন অদিতি মুন্সী, জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষের মতো তারকা, অথচ রাজনীতির দুনিয়ায় নতুন নারীরাও৷

ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির হাতেও রয়েছে পার্নো মিত্র, অগ্নিমিত্রা পাল, পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জনা বসুর মতো তারকা নারী প্রার্থী৷ রয়েছে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় বৈশালী ডালমিয়া বা লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রার্থীও৷ কিন্তু সংখ্যার বিচারে, তৃণমূলের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে বিজেপি৷ ২৯৩জন প্রার্থীর মধ্যে (বাকি একটি সিটে লড়বে বিজেপির মিত্রদল এজেএসইউ) বিজেপির হয়ে লড়ছেন ৪১জন, যা ২০১৬ সালের চেয়ে বেশি হলেও তৃণমূলের চেয়ে কম৷

নারী প্রার্থীর সংখ্যায় এই মুহূর্তে তৃণমূলের সাথে কাঁধ মিলিয়ে রয়েছে বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফের সংযুক্ত মোর্চা৷ তারা এখনও সব কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ না করলেও এখন পর্যন্ত ঘোষিত মোট ১৩৭টি আসনের মধ্যে ২২টিতে লড়বে নারী প্রার্থীরা৷ এক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে ছাত্র রাজনীতির ময়দান থেকে উঠে আসা একঝাঁক তরুণী৷ ঝাড়গ্রামে মধুজা সেনরায়, বালিতে দীপ্সিতা ধর, জামুরিয়াতে ঐশী ঘোষ, নন্দীগ্রামে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচিত মুখও উঠে এসেছে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী তালিকায়৷

আলাদাভাবে বিচার করলে, কংগ্রেসের পক্ষে লড়তে নামা মোট ৯১ প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন নারী৷ ২০১৬ সালে মোট ৯৪জন প্রার্থীর মধ্যে কংগ্রেস বেছে নিয়েছিল ১১জন নারীকে৷ এ বছরের নির্বাচনে বামফ্রন্টের ৪৪জন প্রার্থীর মধ্যে ১০জন নারী৷ এর আগে ১০৪জনের মধ্যেই ছিল মাত্র ১৪ জন৷ এখানে উল্লেখ্য, ফুরফুরা শরীফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফ এখন পর্যন্ত মোট ২৮টি আসনে প্রার্থিত্ব ঘোষণা করলেও সেখানে স্থান পাননি একজনও নারী প্রার্থী৷

সংখ্যার বিচারে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবক'টি বড় দলই আগেরবারের চেয়ে নারী প্রার্থী বাড়িয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক, বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷

সংখ্যার বিচারই কি সব?

নির্বাচনি ইশতাহারে বিজেপি নারীদের জন্য বিনামূল্যে গণপরিবহন ব্যবস্থা, শিশুকন্যাদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ বিপরীতে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা, বিজেপি দিচ্ছে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের আশ্বাস৷ কংগ্রেসের ইশতাহারেও রয়েছে নারী সুরক্ষার বিষয়টি৷ বামেদের ইশতাহারে উঠে এসেছে নারী অধিকার সংরক্ষণ, নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ দমন ও তাদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে নানা প্রতিশ্রুতি৷

রাজনীতির ময়দানে প্রার্থিত্ব থেকে ইশতাহার, সর্বত্র নারীদের গুরুত্ব বাড়ছে৷ নারী প্রার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে নারী অধিকার কর্মী বর্ষা চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিগত ১০-১৫ বছরে বাংলা তথা ভারতীয় রাজনীতিতে নারীর গুরুত্ব এবং প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে৷ ২০১৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকার ৪১ শতাংশই ছিলেন নারী, যা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনেও সিপিআইএম-এর তুরুপের তাস একজন তরুণী (মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়)৷ আবার সরাসরি নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব না করলেও, এ অঞ্চলে বেশিরভাগ ফ্যাসিবাদ-বিরোধী নাগরিক আন্দোলনের নেতৃত্বেও কিন্তু নারীরাই৷ আমার মনে হয় নারীর সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি আজকের দিনে মুখ্য রাজনৈতিক বিষয় হয়ে ওঠার পেছনেও একটি প্রধান কারণ রাজনীতিতে নারী প্রতিনিধিত্বের বৃদ্ধি৷''

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে মাঠপর্যায়ে গবেষণা চালাচ্ছেন প্রমা রায়চৌধুরী৷ বর্তমানে, এ বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা করছেন ডাবলিনের ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউটে৷ কলকাতা থেকে এই গবেষক জানালেন, ‘‘ভোটারের নিরিখে নারীরা ৪৯ শতাংশ, তাই সব দলই চেষ্টা করছে এই সংখ্যাকে টার্গেট করতে৷ নানা ধরনের নারীবিষয়ক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা৷ সব দলেই নারী প্রার্থী দেবার হার আগের চেয়ে বেড়েছে নিঃসন্দেহে৷ বামেরা তরুণ নারী প্রার্থী দিয়েছে বহু হায়গায়, এমনকি তথাকথিত কঠিন সিটেও৷ বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলই নারীদের কথা মাথায় রেখে নানা প্রকল্পের কথা বলেছে ইশতাহারে৷ শুধু তাই নয়, এই তিন মূল শক্তি কিন্তু বিশেষ নারী বিভাগ তৈরি করে প্রচারে নেমেছে৷''

কিন্তু নারীদের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে প্রার্থিত্বের মাধ্যমে দেখা গেলেও এই ধারার কিছু খামতি রয়েছে বলে মনে করেন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ বর্ষা চক্রবর্তী৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন কিন্তু ভাববার বিষয় এই যে, যেসব নারী সক্রিয় রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের বেশির ভাগই ‘উচ্চবর্ণের'৷ দলিত, আদিবাসী, মুসলিম নারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব কিন্তু আজও আমাদের ভাবনার বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি, ফলে তাদের বিষয় বা সম্যাগুলি নির্বাচনের বিষয় হয়ে ওঠে না৷''

দেবলীনা হেমব্রম, সোনালী মূর্মূ, চন্দনা বাউরি ছাড়া সেভাবে আদিবাসী কোনো নারী পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দাগ কাটতে পারেননি৷ এবারের নির্বাচনের প্রার্থী তালিকাতেও সেই ধারার ব্যতিক্রম হলো না৷ তবে দলিত, আদিবাসী বা মুসলিম নারীর প্রতিনিধিত্বের দাবিতে সেরকম কোনো উজ্জ্বল মুখ থাকা বা না থাকা আদৌ কতটা প্রভাব ফেলবে ফলাফলে, তা নিয়েও থাকছে প্রশ্ন৷

নারী প্রার্থী ২০ ভাগেরও কম

প্রচারে যে দল নারীর কথা যতই বলুক, প্রার্থী তালিকায় চোখ রাখলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় ঠিকই আর তা হলো- সব দল বা জোটেই নারী প্রার্থী এখনো পুরুষ প্রার্থীর তুলনায় অনেক কম৷ তৃণমূলে ১৯ শতাংশ, বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফের সংযুক্ত মোর্চায় ১৬ শতাংশ আর বিজেপিতে মাত্র ১৪ শতাংশ৷