1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিউ নর্মালে উৎসব এবার ভার্চুয়াল

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ অক্টোবর ২০২০

আদালতের নির্দেশে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ এখন কনটেনমেন্ট জোন৷ সামাজিক দূরত্বের বিধি কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ তাই এ বারের উৎসব একটা বড় অংশের মানুষের কাছে ‘ভার্চুয়াল’ উদ্‌যাপন৷

https://p.dw.com/p/3kHXb
পূজা মন্ডপের সামনে বড় স্ক্রিন দেখা যাচ্ছেছবি: Payel Samanta/DW

পুজোর কয়েকদিন আগে, কার্যত মহালয়ার পর থেকেই কলকাতার মণ্ডপে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ করা যায়৷ বড় বাজেটের পুজো কমিটি একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মাতে দর্শক টানার জন্য৷ আলো ঝলমলে সেই কলকাতা এ বছর অনেকটাই নিভু নিভু৷ করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা৷ একদিকে প্রশাসনিক কড়াকড়ি, অন্যদিকে সংক্রমণের আশঙ্কায় অনেকেই এবার বাড়িতে বসে পুজো উপভোগ করতে চান৷

মূলত প্রবীণ ও প্রবাসীদের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা আগেও ছিল৷ কিন্তু সেটা এই শহরে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি৷ তবে করোনাকালে অনলাইনে উৎসবের আনন্দ নেওয়াই সবচেয়ে বড় বাস্তব হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে৷ তাই কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, আদালতে পুজো নিয়ে আইনি লড়াইয়ের আগেই অনেক উদ্যোক্তা ‘ভার্চুয়াল’ পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন৷ অনেকে কমিটি আদালতের নির্দেশের পর অনলাইনে পুজো দেখানোর পরিকাঠামো তৈরি করেছে তড়িঘড়ি৷

‘আমরা প্রবীণদের মণ্ডপে আসতে নিষেধ করেছি’

‘ভার্চুয়াল’ উৎসব উদ্‌যাপনে কোনো মণ্ডপের বাইরে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হয়েছে৷ কোথাও লাগানো হয়েছে এলইডি টিভি৷ কোথাও পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে জুম বা গুগল মিট-এ৷ কলকাতার বিখ্যাত পুজো কমিটি, যেখানে প্রতি বছর ভিড় উপচে পড়ে, সেই সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার আগেই স্লোগান দিয়েছিল— ‘হেঁটে নয় নেটে দেখুন’৷ শুধু এলাকাবাসীকে তারা মণ্ডপে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে৷ বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পুজো এ বার ৮২ বছরে৷ তাদের কর্তা সঞ্জীব চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ ধরনের অভিজ্ঞতা এই প্রথম৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় পুজোর সব পর্বই  দেখানো হবে৷ এমনকী অঞ্জলি দেওয়ারও সুযোগ থাকছে৷’’

Indien Virtuelle Darstellung der Puja in Kalkutta
ছবি: Payel Samanta/DW

সল্টলেক এডি ব্লক রেসিডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ৩৬ বছরের পুজোয় একই ছবি৷ উদ্যোক্তা ময়ূখ মজুমদার বলেন, ‘‘সল্টলেকের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ প্রবীণ৷ আমরা তাদের মণ্ডপে আসতে নিষেধ করেছি৷ তারা বাড়িতে বসেই পুজো দেখবেন, পুষ্পাঞ্জলি দেবেন৷ আমরা প্রবীণদের বাড়ি গিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি বুঝিয়ে দিচ্ছি৷’’ হাতিবাগান সর্বজনীনও অনলাইনে সপ্তমী থেকে নবমী অঞ্জলির ব্যবস্থা করেছে৷ এই কমিটির কর্তা ও ফোরাম ফর দুর্গোৎসব-এর আহ্বায়ক শাশ্বত বসুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের মণ্ডপ বড় রাস্তা থেকে একটু ভিতরে৷ দূর থেকে প্রতিমা দেখা সম্ভব নয়৷ তাই জায়ান্ট স্ক্রিন-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷’’

‘জায়ান্ট স্ক্রিন-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে’

উত্তরে বরানগর থেকে দক্ষিণে বড়িশা, সর্বত্রই ‘ভার্চুয়াল’ উৎসবের ঝোঁক৷ মণ্ডপে কমিটির কয়েকজন সদস্য থাকবেন, থাকবেন পুরোহিত ও ঢাকি৷ তবে অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে বসে উৎসবে সামিল হবেন৷ যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লির সভাপতি রতন দে ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁরা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিদিনের পুজো দেখাবেন৷ বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রে অবশ্য বারোয়ারির বাধ্যবাধকতা নেই৷ তাই অনেক বনেদি বাড়ির দরজা এ বার বন্ধ থাকবে৷ অনেক বাড়িতে প্রবেশাধিকার থাকলেও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ এই বাড়িগুলির ফেসবুক পেজে ইতিমধ্যেই ভিডিও আপলোড করা হয়েছে৷

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে আগেই বাড়িতে বসে পুজো দেখার সুযোগ ছিল৷ এবার অনেকগুলি সংস্থা এই পরিষেবা দিচ্ছে৷ এমনকি রাজ্য সরকার ই-পুজো পরিক্রমার ব্যবস্থা করেছে৷ যারা উৎসবের দিনগুলিতে বেরিয়ে খাওয়াদাওয়া পছন্দ করেন, তাদের জন্য বাড়িতে ভোগ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর৷ সবমিলিয়ে ‘নিউ নর্মাল'-এর পুজোয় স্লোগান উঠেছে— ‘বোধন থেকে বিসর্জন, অনলাইনে সারাক্ষণ’৷ কিন্তু তাতে কি উৎসবের আমেজ মেলে? শততম বছরে পৌঁছনো টালা বারোয়ারির কর্তা অভিষেক ভট্টাচার্যকে এই প্রশ্ন করায় তাঁর বক্তব্যে হতাশা ঝরে পড়ল৷ তাদের সব আয়োজনই এ বার মাটি৷ তিনি বলেন, ‘‘ডিজিটাল পদ্ধতি কতজন ব্যবহার করতে পারবেন, সন্দেহ আছে৷ অনলাইনে কখনো পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া যায় না৷ এটা একেবারে লোক দেখানো৷’’