1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে অনড় হাসিনা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অক্টোবরেই বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হওয়ার কথা৷ কিন্তু কেমন হবে সে সরকার? নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় সংসদে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়েই হবে সে সরকার৷

https://p.dw.com/p/35hYh
Sheikh Hasina
ছবি: Reuters

সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি৷ সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হবে৷ সে হিসেবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ভোট হতে হবে৷ আর তফসিল সাধারণভাবে নির্বাচনের ৪০-৪৫ দিন আগে হয়৷ ফলে তফসিল ঘোষণা হতে পারে নভেম্বরেই৷

বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে আলাদা করে কিছু বলা নেই৷ তারপরও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়েছিল৷ সরকারের মন্ত্রিসভা ছোট করা হয়েছিল৷

ওই সময়ের নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধানমন্ত্রীসহ ২২ জন মন্ত্রী ও সাতজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন৷ নতুন আটজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী নেয়া হয়৷ আর ১৬ মন্ত্রী ও ১৪ প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন৷ তবে এর আগেই সবার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাখা হয়েছিল৷ বিএনপিকে এই নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন বয়কট করে৷

এবারের নির্বাচনের জন্যও তিন মাসের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে৷ জানা গেছে ২০১৪ সালের মতই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সরকার গঠিত হবে৷ মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে৷

শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীর (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি৷ তারা যদি চান আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন৷''

প্রধানমন্ত্রী  আরো বলেন, ‘‘সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল রাজনৈতিক দল যদি চায় তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি৷ তারা ক্ষমতাসীন অথবা বিরোধী দল কিনা সেটা কোন বিষয় না৷ তবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে কোনো সংজ্ঞা নেই৷''

সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করিবে না৷''

আর ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন৷''

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর থেকেই বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল৷ এই দাবিতেই বিএনপি ও তার শরিকরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে৷

শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের আগের দাবিতেই অটল আছি৷ কেনো দলীয় সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনই প্রমাণ করে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের কথা বলে আমাদের হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন৷ এই সরকারের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই৷  বৈধতা নেই৷ তাই সংবিধানের দোহাই দিয়ে কোনো লাভ নেই৷ তারা ৫ জানুয়ারির যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছেন ওই নির্বাচন কোনো বৈধ নির্বাচন না৷ তাই তারা এতদিন যে কষ্ট দেশের মানুষকে দিয়েছেন তা থেকে রেহাই দেয়া উচিত৷''

এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যে ৫ দফা দাবি দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না৷ ৩০ অক্টোবরের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নতুন এই জোট৷

মাহমুদুর রহমান মান্না

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবং যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটাতো প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কথা বলেছেন৷ আমাদের কথাতো বলেননি৷ ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মত একটা বিতর্কিত, থার্ড ক্লাস নির্বাচন এদেশে আর কখনো হয়নি৷ এই নির্বাচন কেউ গ্রহণ করেনি৷ এই সংসদে আবার বিরোধী দলের অর্ধেক আছে সরকারের সঙ্গেই৷ তিনি যা বলেছেন তা কোনো নীতি বা সংবিধানের কথা না৷ এটা মানবার কোনো প্রশ্ন ওঠেনা, অবকাশও নেই৷ উনি বলেছেন, উনি যেরকম ভাবেন সেরকম৷ এটা বাংলাদেশের জনগন মানবেনা, প্রত্যাখ্যান করবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেটা বলেছি সেটাই যৌক্তিক৷ একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে যারা অংশীজন তাদের বাদ দিয়ে তো হবেনা৷ তাঁরা তাঁদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যদি নির্বাচনকালীন সরকারের যৌক্তিকতা মেনে নেয়, তাহলে সেটা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব মতো নয়, আমরা যেভাবে বলেছি সেভাবে হতে হবে৷''

ড. বদিউল আলম মজুমদার

আর সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি কেনো উঠছে? উঠছে এই কারণে যাতে নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে৷ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে৷ এখন যদি কথিত বিরোধী দল নিয়ে এই সরকারের অধীনেই ছোট আরেকটি নির্বাচনকালীন সরকার হয় তাহলে তো নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবেনা৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি৷ যাঁরা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করেছে তাঁরাই আবার ক্ষমতায় এসেছে৷ তাঁরা নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এবং আইন-শৃংখলা বাহিনীকে প্রভাবিত করে তাঁদের কাজে লাগিয়েছে৷ তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার নির্দলীয় হওয়া প্রয়োজন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য