1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নুরের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নেয়াকে সমর্থন করিনা’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ মার্চ ২০১৯

অবশেষে ডাকসু ভিপি’র দায়িত্ব নিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন নেতা নুরুল হক নুর৷ নির্বাচন বর্জন এবং ফের নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি দেয়ার মাঝেই তাঁর এই দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ৷

https://p.dw.com/p/3FYzR
প্রতীকী ছবি
ছবি: bdnews24/A. Al Momin

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ডাকসুর নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের প্রথম বৈঠক হয় ডাকসু ভবনে৷ এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ ২৫ জন এবং ১৮টি হল সংসদের কর্মকর্তারা দায়িত্ব নেন৷ আর ডাকসু ভবনের বাইরে কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা ফের ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে অবস্থান নেন৷ তারা ডাকসুকে লাল কার্ড দেখান৷ ভিসি এবং ডাকসুর প্রেসিডেন্ট নতুন কমিটিকে এক বছরের জন্য দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন৷ 

‘শিক্ষার্থীরা চেয়েছেন বলেই আমি দায়িত্ব নিয়েছি’

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সম্মানসূচক সদস্যপদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ তবে নুর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বলে জানা যায়৷ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আছে উল্লেখ করে তিনি এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে যে ডাকসু গঠিত হয়েছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মতো সম্মানিত ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত না করাই ভালো৷''

প্রসঙ্গত, ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন চলাকালে শুধুমাত্র ছাত্রলীগ ছাড়া সব ছাত্রসংগঠন ও প্যানেল কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে৷ কিন্তু পরে রাতে ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের (বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ) নেতা নুরুল হক নুর ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন৷ তাঁর প্যানেলের আরো একজন প্রার্থী, আখতার হোসেন, সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন৷ তবে, ছাত্রলীগ মনোনীতরা ২৫টি পদের মধ্যে জিএসসহ ২৩টি পদে নির্বাচিত হন৷ এছাড়া ৬টি হলে কোটা সংস্কার ও স্বতন্ত্র প্যানেলের সদস্যরা জয় পান৷ 

‘তাঁর নৈতিক অবস্থান আমাদের হতাশ করেছে’

ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর পুর্নিনর্বাচনের দাবির মাঝেই নুর নির্বাচনে বিজয়ীদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন বঙ্গভবনে৷ তবে শুক্রবার অবধি তিনি ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন কিনা সে বিষয়ে স্বচ্ছভাবে কিছু জানান নি৷ শনিবার ভিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চেয়েছেন বলেই আমি দায়িত্ব নিয়েছি৷ একইসঙ্গে ফের নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনও চলবে৷''

নুরের দায়িত্ব গ্রহণ প্রসঙ্গে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর প্যানেল প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ভিপি পদপ্রার্থী লিটন নন্দী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নুরের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নেয়াকে নৈতিকভাবে সমর্থন করিনা৷ একই সঙ্গে ভিপি'র দায়িত্ব নেয়া আবার নির্বাচন বাতিলের আন্দোলন করা বিপরীতমুখী৷ আমরা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো৷ ২৮ মার্চ ভিসি কার্যালয় অভিমুখে আমাদের পদযাত্রা কর্মসূচি আছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা মনে করি জালিয়াতির নির্বাচন হয়েছে৷ ছাত্রলীগ বাদে আমরা সবাই নির্বাচন বর্জন করে ফের নির্বাচন দাবি করেছি৷ নুর এবং তাঁর সংগঠনও একই কথা বলেছে৷ এখন নুর ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন৷ এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ তিনি বলেছেন আন্দোলনও করবেন৷ এখন তিনি সেটা কিভাবে করেন দেখার বিষয়৷'' 

‘ভিপির দায়িত্ব নেয়া আবার নির্বাচন বাতিলের আন্দোলন করা বিপরীতমুখী’

আর স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে জিএস প্রার্থী এ আর এস এম আসিফুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নুর আমাদের সাথে বসেছিলেন৷ আমরা বলেছি যে আমরা নির্বাচিত হলে দায়িত্ব নিতাম না৷ কারণ আমরা মনে করি এই নির্বাচন অবৈধ৷ তাই তিনি ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাঁর ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম৷ কারণ তিনি আলাদা প্যানেলে নির্বাচন করেছেন৷ আলাদা সংগঠন আছে৷''

এদিকে, নুরকে নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ডাকসুর এজিএস মো. সাদ্দাম হোসেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাঁর (নুর) নৈতিক অবস্থান আমাদের হতাশ করেছে৷ কারণ যখন যে পাত্রে রাখা হচ্ছে, সেই পাত্রের রঙ এবং আকার ধারণ করার মধ্য দিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিপি পদটিকে যে সম্মান করতো তা ধারাবাহিকভাবে ক্ষুন্ন করেছেন৷'' 

‘আমরা নির্বাচিত হলে দায়িত্ব নিতাম না’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা তাকে বারবার আহ্বান করেছি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের ম্যান্ডেট দিয়েছেন, আসুন তাদের জন্য একসঙ্গে কাজ করি৷ কিন্তু তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের যে অভীপ্সা, প্রতিক্রিয়াশীলদের সঙ্গে যে আঁতাত তা আমাদের বারবার হতাশ করেছে৷''

নুরের এই দায়িত্ব নেয়া এবং তাঁর নৈতিক অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন বর্জন করেছি৷ তারপরও ব্যাপক কারচুপি করেও আমাকে (ভিপি) এবং আখতারকে (সমাজ সেবা সম্পাদক) হারাতে পারেনি৷ তাই আমি (শুরুতে) এই দু'টি ছাড়া বাকি ২৩ পদে পুর্নর্নিবাচন দাবি করেছিলাম৷ কিন্তু, যখন সাধারণ ছাত্ররা নির্বাচন বাতিল করে সব পদে নির্বাচন চেয়েছে, আমিও তাদের সাথে একমত হয়েছি৷ নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু এই ফলাফলই বহাল আছে, সেহেতু দায়িত্ব পালনে বাধা নেই৷ তাই, আমি মনে করি আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত৷ সেই বিবেচনায়ই আমি দায়িত্ব নিয়েছি৷''

‘‘২৮ বছর পর একটা শুভ সূচনাতো হয়েছে,'' বলেন তিনি৷