1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নেপালের প্রত্যন্ত গ্রামে জৈব গ্যাস প্রকল্প

২৪ অক্টোবর ২০১০

নেপালের প্রত্যন্তের ছোট্ট গ্রাম বাদ্রেনি৷ বনের কাঠ পুড়িয়েই তাদের জীবন চলে৷ সেখানকার মানুষ-জন সম্প্রতি পরিচিত হয়েছেন জৈব গ্যাসের সঙ্গে৷ কিন্তু এই জৈব গ্যাস প্রকল্প কি পারবে তাদের প্রয়োজন আর অভ্যাসকে বদলাতে!

https://p.dw.com/p/PmAv
জৈব, গ্যাস, প্রকল্প, নেপাল, Nepal, Bio Gas, Project
জৈব গ্যাস প্রকল্প (ফাইল ছবি)ছবি: AIDG

সাবিত্রী দেইরি থাকেন দক্ষিণ নেপালের ছোট্ট গ্রাম বাদ্রেনি'র একটি কুড়েঘরে৷ চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কের খুব কাছেই তাঁর বাড়ি৷ অন্যান্য কৃষক আর গ্রামের মানুষ-জনের মতই রান্না-বান্নার জ্বালানী হিসেবে সাবিত্রী ব্যবহার করেন কাঠ৷ ‘কিছু জ্বালানি কাঠ আমাদের কিনতেও হয়৷ আর কিছু কাঠ বন থেকে আনি,'- তিনি বলে চলেন, ‘একবার বনে কাঠের জন্য গেলে কাঠ নিয়ে ফিরে আসা প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টার মামলা৷' দেইরি জানেন, জ্বালানির জন্য এভাবে বন থেকে কাঠ কাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ কিন্তু যখন বেঁচে থাকার প্রশ্ন আসে, যখন খাবার রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির দরকার হয়, তখন পরিবেশ রক্ষার চাইতে রান্নাই মুখ্য হয়ে ওঠে৷

মানুষের এই প্রয়োজন আর পরিবেশের মধ্যকার এ'বিরোধ এড়াতে বাদ্রেনিতে পরীক্ষমূলকভাবে একটি বায়োগ্যাস প্রকল্প চালু করা হয়েছিল৷ যা বাদ্রেনিবাসীদের জ্বালানির সংকট মেটাবে পাশাপাশি বনকেও রক্ষা করবে৷ কিন্তু দেখা গেছে, বিবিধ অপচয়ের কারণে এই প্রকল্পটি সমালোচিতই হয়েছে৷ যেমন এই বায়োগ্যাস প্রকল্পের কল্যাণে কতখানি কার্বন কম পুড়লো তা পর্যবেক্ষণ করতে ইউরোপ থেকে যদি কেউ আসেন তখন শুধু পর্যবেক্ষণেই সবমিলিয়ে খরচা দাঁড়ায় চৌদ্দ হাজার ইউরোতে!

গ্যাস দিয়ে রান্না

ঠিক চার বছর আগে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচার বা ডব্লিউডব্লিউএফ এবং নেপালের সরকার এই গ্রামের বায়োগ্যাস প্রকল্পটির অর্থায়ন করেছিল৷ গ্রামবাসীরা তাঁদের গৃহপালিত পশুর মল এই বায়োগ্যাসের ভূগর্ভস্থ আধারটিতে জমা দিয়ে আসতেন৷ প্রাকৃতিকভাবেই সেখানে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হতো আর তা থেকে পাইপে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেত জ্বালানির প্রয়োজনীয় বায়োগ্যাস৷ ‘এই গ্যাসে কোনরকম বাজে গন্ধ নেই'- সেনি চৌধারি নামের আরেকজন বাদ্রেনিবাসী কৃষাণীর মন্তব্য৷ রান্নার জন্য দুরের বন থেকে কষ্ট করে কাঠ কেটে আনার ঝামেলা নেই, বিরক্তিকর ধোঁয়ার অস্বস্তি নেই, কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই চমৎকার ঘরে বসে রান্না করা যায়৷

একটা বড়-সড় ‘কিন্তু'!

কিন্তু! হ্যাঁ, একটা বড় কিন্তুও রয়েছে এর ভেতরে৷ সেটি হচ্ছে- দরিদ্র গ্রামবাসীদের সামর্থ্যের বিবেচনায় এই বায়োগ্যাস বড়ই মহার্ঘ্য৷ এর খরচ অনেক৷ প্রায় চারশো ইউরো খরচ পড়ে যায়৷ একজন কৃষক বড়জোর বছরে আয় করতে পারেন এক হাজার ইউরো৷ সেখান থেকে চারশো ইউরো জ্বালানীর জন্য বায়োগ্যাসে ঢাললে তাঁরা খাবেনটা কি! যদিও নেপাল সরকার ভর্তুকি হিসেবে সিকি অংশ বহন করে, কিন্তু তারপরও বাকি অংশ ভরতে ফতুরই হয়ে যেতে হয়৷ সুতরাং তাঁদেরকে আবারো সেই কাষ্ঠাহরণে বনেই যেতে হয়৷

অবশ্য ডব্লিউডব্লিউএফ আশা করছে, এই বায়ো গ্যাস প্রকল্পটি সবার নাগালের মধ্যে আনার লক্ষ্যে তারা ইউরোপের স্বেচ্ছাসেবী কার্বন অফসেট মার্কেট থেকে সাত লক্ষ ইউরো তুলতে পারবেন৷

কার্বন ক্রেডিট

ডব্লিউডব্লিউএফ উদ্ভাবিত ‘কার্বন ক্রেডিট' এমন একটি পণ্য৷ যা অর্থের বিনিময়ে বিকি-কিনি করা হয়৷ আসলে বিষয়টি ভার্চুয়াল৷ বায়োগ্যাসের সহায়তা নিয়ে যদি পৃথিবীর এক টন কার্বন বাঁচানো যায় সেই বিষয়টিই- ‘কার্বন ক্রেডিট'৷ সুইস একটি এনজিও তাদের ‘মাই ক্লাইমেট' নামের একটি সেবার জন্য নগদ টাকায় এটি আবার কিনেও নেয়৷ খুব সাধারণ অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে ‘মাই ক্লাইমেট' বিভিন্নজনের কাছে কার্বন পোড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে আর তাঁদের পোড়ানো কার্বনের প্রেক্ষিতে অর্থ সাহায্য চায়৷ যেমন কেউ হয়তো গাড়ি চালিয়ে গ্রীস যাচ্ছেন, তাঁর কাছে পাই-পয়সা হিসেবে বলা হল, তুমি স্রেফ গ্রীসে যেতেই পৃথিবীর এতোখানি কার্বন পুড়িয়েছো৷ এবার কিছু অর্থ সহায়তা করো৷ এই আরকি, আর এভাবে সংগৃহীত অর্থে নেপালের বাদ্রেনি'র বায়োগ্যাস প্রকল্পটিকে অর্থায়নের চিন্তা করছে তারা৷

বাস্তবতা হচ্ছে, এটি এখনো পরীক্ষামূলক, বাস্তবতা হচ্ছে- বাদ্রেনির দরিদ্র গ্রামবাসীদের সামর্থ্যের বিবেচনায় এটি মহার্ঘ্য, সত্য হচ্ছে- সেখানকার সামান্য কয়েকজনই এখনো পর্যন্ত এই সুযোগ বা সুবিধা যাই বলি না কেন তা কাজে লাগাতে পারছেন৷ মোটের ওপর এটি এখনো পরীক্ষামূলকই রয়ে গেছে৷ এখন খরচ কিভাবে কমানো যায় সেটি একটি বিষয় এছাড়াও এধরণের প্রকল্প কিন্তু সাশ্রয়ী তা পাশের দেশ ভারতে সফল হয়েছে সেটিও দেখার বিষয় রয়েছে৷ সবমিলিয়ে বাস্তবিকই কার্বন পোড়ানো বন্ধ করার অবস্থানে পৌঁছাতে এর আরো অনেক উৎরাই ডিঙোনোই বাকি রয়েছে৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক