1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নোটবন্দির বর্ষপূর্তি: পথে শাসক ও বিরোধী দল

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৮ নভেম্বর ২০১৭

ক্যালেন্ডারের পাতায় আবার ৮ নভেম্বর এসে হাজির৷ নোট বাতিলের বর্ষপূর্তি পালন করছে উভয়েই: সরকারের কাছে দিনটি ‘‌কালোটাকা বিরোধী দিবস'‌, বিরোধীদের কাছে ‘‌কালা দিবস'৷ পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন অবধি নোট বাতিল ইস্যু বাতিল হচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/2nGDP
ভারতে নোট বাতিলের বর্ষপূর্তি
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Rout

বেশ উষ্ণ হয়ে উঠছে জাতীয় রাজনীতি৷ একদিকে বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলি সভা-সমিতি করে কালোটাকার বিরুদ্ধে আম জনতাকে সতর্ক করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা-‌সহ পথে নেমে মিছিল করার কথাও বলা হয়েছে কর্মী, সমর্খকদের৷ অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস-‌সহ তৃণমূল, সিপিএম, সিপিআই, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জনতা দল (‌ইউনাটেড)‌ এবং ডিএমকে-‌র মতো মোট ১৮টি দল৷ দিনভর বিরোধী জোটের সঙ্গে দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের পাশাপাশি রাত ৮টায় মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করেছে কংগ্রেস৷ তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তো দু'দিন আগে থেকেই নিজের টুইটারের ‘ডিপি' কালো করে নিয়েছেন৷ অনান্যদেরও তা করার অনুরোধ করেছেন৷ সবই মোদী সরকারের নোট বাতিলের প্রতিবাদে

অধীর‌রঞ্জন চৌধুরি

লোকসভার সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরি কার্যত তুলোধনা করেছেন কেন্দ্র সরকারকে৷ তাঁর কথায়, ‘‘‌যে ভারতবর্ষকে কংগ্রেস তিল তিল করে গড়ে তুলেছিল, নরেন্দ্র মোদীর এক ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের ধাক্কায় সেই দেশের অর্থনীতি থমকে গেছে৷ তার ওপর জিএসটি চালু করে আবারও এক ধাক্কা দেওয়া হয়েছে৷'' ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দেশবাসীর ওপর মোদী সরকারের এই জোড়া ধাক্কা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷

চারিদিকে নোট বাতিলের ভালো-‌মন্দ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই৷ বাস হোক বা মেট্রো, রাস্তার মোড়ে অথবা পথে-‌ঘাটে যেখানেই কান পাতবেন আলোচ্য বিষয় একটাই নোট বাতিলের বর্ষপূর্তি৷ গোয়ার এক জনসভায় দাঁড়িয়ে মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ‘‌‘মাত্র ৫০ দিন সময় দিন৷ কালোটাকা উদ্ধার হচ্ছে৷ সবাই পাবেন ১৫ লাখ টাকা৷ না হলে আমাকে জীবিত জ্বালিয়ে দেবেন৷''‌ কিন্তু দেশের নাগরিকরা ১৫ লক্ষ টাকা করে কি পেয়েছেন?

সুখেন্দুশেখর রায়

সংসদের উচ্চ কক্ষে তৃণমূলের প্রবীন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় প্রথমদিন থেকেই নোট বাতিলের বিরোধিতা করে আসছেন৷ আজ, একবছর পূর্তিতে তিনি বললেন, ‘‌‘আজকের দিনেই দোটা দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ ভারতে এই ধরনের ঘটনার প্রথম বিরোধিতা করেছিলেন তৃণণূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ সরকারের অনমনীয় মনোভাবের জন্য সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষ মুখ থুবড়ে পড়েছেন৷ বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন৷ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা মন্দার শিকার হয়েছেন৷ সরকার যে কথা বলে নোট বাতিল করেছিল, তার কোনো একটিও সফল হয়নি৷''

বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, এতকিছুর পরে সাধারণ মানুষের হাতে কী এল?‌ হু হু করে বাড়ছে রান্নার গ্যাসের দাম৷ গত মার্চ মাস থেকে রান্নার গ্যাসে উঠে যাবে ভর্তুকি৷ রোজ বাড়ছে পেট্রল-‌ডিজেলের দাম৷মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ কমছে আমানতে সুদের হার৷ নোট বাতিলের ধাক্কায় ছোট ব্যবসা ও শিল্পের দশা বেহাল হয়েছে৷ কাজ খুইয়েছেন বহু মানুষ৷ ওদিকে কাশ্মীরে বন্ধ হয়নি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, তাদের ফান্ডিং এবং পাথর ছোঁড়াও৷ বৃদ্ধির হার ক্রমাগত নামতে নামতে পৌঁছে গিয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশের তলানিতে৷

‌প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং নোট বাতিলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‌‘মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে এনেছে৷ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত৷''

গতবছর সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮টায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা ভারত৷ টেলিভশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন, যেখানে যত পুরনো পাঁচশ, হাজার টাকার নোট আছে, সে দিন রাত থেকেই সেগুলো অকেজো হয়ে গেল৷ টিভির পর্দা থেকে যেন সুনামি ছড়িয়ে পড়েছিল৷ নোট বাতিলের পর নগদের অভাবে ভুগেছে আমজনতা থেকে শিল্প ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কোটি কোটি মানুষ৷ সমালোচনার তীব্র ঝড় বয়েছে বিরোধী-সহ বিভিন্ন মহলে৷ মোদীর দাবি ছিল, দেশের স্বার্থে, অর্থনীতি চাঙ্গা করতেই পুরনো বড় নোট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল, এর ফলে নাকি ধরা পড়বে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা৷ কারণ সেগুলি আর ব্যাংকে ফিরবে না৷ নিকেশ হবে যাবতীয় জাল নোট৷ বন্ধ হবে সীমান্তে সন্ত্রাসের জন্য যাবতীয় অর্থের জোগান৷ আটকানো যাবে কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর উপর পাথর ছোড়া৷ থামানো যাবে মাওবাদী কর্মকাণ্ড৷

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলছেন, ‘‘যে দিনের একটি সিদ্ধআন্তে গোটা দেশে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেই দিনটিকে ‌শাসক দল বিজেপি ‘‌উল্লাস দিবস' হিসেবে পালন করছে৷ এই ধরনের কাণ্ড যারা ঘটায়, তাদের জল্লাদ ছাড়া আর কি-‌ই বা বলা যেতে পারে৷ গরিব মানুষের কথা মোদী ভাবেননি৷ ধনীদের স্বার্থে সাধারণ মানুষের টাকা লুট করেছেন উনি৷''

আবদুল মান্নান

অন্যদিকে, বিবৃতি দিয়ে নোট বাতিলের নানা সুফল তুলে ধরেছে অর্থ মন্ত্রক৷ তাদের দাবি, এক বছর আগে ১০০০ ও পুরনো ৫০০ টাকার নোট বাতিলের ফল মিলেছে হাতেনাতে৷ কমেছে কালো টাকা, জাল নোট৷ রাশ টানা গিয়েছে অর্থনীতিতে নগদ লেনদেনের উপরেও৷ তারা জানিয়েছে, নোট নাকচের আগে অর্থনীতিতে মোট হাতবদল হত ১৭ দশমিক ৭৭ লক্ষ কোটি নগদ টাকা৷ সেখানে গত ৪ আগস্ট তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ লক্ষ কোটি৷ অর্থাৎ, আগের ৮৩ শতাংশ৷ এছাড়াও করের আওতায় এসেছেন অনেক বেশি ব্যক্তি ও সংস্থা৷ সেপ্টেম্বরেই ডিজিটাল লেনদেনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ৭ কোটি৷ টাকার অঙ্কে মোট ১ দশমিক ২৪ লক্ষ কোটি৷ রিজার্ভ ব্যাংকের হিসেব, বিভিন্ন শাখায় এখনও হয়ে চলেছে বাতিল পাঁচশ, হাজারের নোট গোনার কাজ৷ এ যাবৎ ১,১৩৪ কোটি ৫০০ টাকার নোট এবং ৫২৪ দশমিক ৯০ কোটি ১,০০০ টাকার নোট গোনা সারা৷ সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কে যা ১০ দশমিক ৯১ লক্ষ কোটি৷ আরও অনেক গুনতে বাকি৷

কেন্দ্রের দাবি ছিল, নোট বাতিলের ফলে ব্যাংকে আর ফিরবেই না কয়েক লক্ষ কোটি কালো টাকা৷ অথচ নোটবন্দির সময় বাজারে যতটা নগদ ছিল এবং যতটা এত দিন ফিরে এসেছে এবং আসছে, সেই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, আখেরে তাদের সে দাবি সত্যি হয়নি৷ ফলে কালো টাকায় রাশ টানা নিয়ে সরকারের বক্তব্যে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শুরু করেন, ‘‌মিত্র, ভাই ও বোন'‌ সম্বোধন করে৷ নোট বাতিলে তাঁরা কি সত্যিই লাভবান হয়েছেন?‌‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান