1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নোট বাতিলের ফাঁসে বইমেলা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ভারতে বড় নোট বাতিলের জেরে নাভিশ্বাস খুচরো ব্যবসার৷ আর তার জের এবার পড়ছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতেও৷ মেলা প্রাঙ্গনে ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের ১৪টি ‘‌এটিএম'‌ বসলেও, বই বিক্রির ওপরে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে নোট বাতিল৷

https://p.dw.com/p/2UG7v
কলকাতায় এটিএম মেসিনের সামনে লম্বা লাইন
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar

৮ নভেম্বর থেকে ভারতে পুরনো ১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষিত হয়েছে৷ বহু লক্ষ কোটি টাকার পুরনো নোট জমা পড়েছে ব্যাংকে৷ আয়ের উৎস ঘোষণা করায় অসুবিধে থাকায় বাতিল হয়েছে প্রায় সম পরিমাণ টাকার অবৈধ মজুত৷ ফলে বাজারে, মানুষের হাতে বড় অঙ্কের নোটের আকাল দেখা দিয়েছে৷ কিন্তু সেই ঘাটতি ভরাট করতে যে পরিমাণ নতুন নোটের জোগান থাকা উচিত ছিল, সেটা হয়নি৷ যদিও রিজার্ভ ব্যাংক বলছে, তারা ব্যাংকগুলিকে যথেষ্ট পরিমাণ নতুন নোট দিয়েছে৷ কিন্তু এখনও অনেক ব্যাংকের অধিকাংশ এটিএম টাকার অভাবে বন্ধ, বা সীমিত সংখ্যক ২০০০ টাকার নোটই পাওয়া যাচ্ছে৷ সরাসরি ব্যাংকের কাউন্টারে গিয়ে টাকা তোলার ক্ষেত্রেও এখনও জারি আছে নিয়ন্ত্রণ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক হওয়ার জন্যে ৫০ দিন সময় চেয়ে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু এখনও তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ বরং মোদীর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিই প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন, অন্তত তিন মাস লাগবে সব আবার ঠিক হতে৷ টাকার অভাবে ব্যাপক মার খাচ্ছে রোজকার খুচরো ব্যবস্থা৷ তার জের এবার গিয়ে পড়ছে কলকাতা বইমেলাতেও৷

মঙ্গলবার এবারের ৪১তম বইমেলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার মেনে যথারীতি ২৫ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে৷ এবার মেলার ‘‌থিম দেশ'‌ লাটিন অ্যামেরিকার ছোট্ট দেশ কস্টারিকা৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র৷ গতবারের বইমেলায় প্রায় ৫০০০টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছিল৷ নোট বাতিলের জেরে সেই সংখ্যাটা এবার কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে যেতে পারে৷ এমনটা যে হতে পারে, কলকাতা তথা বাংলার প্রকাশকরা সেই ভয়টা পাচ্ছিলেন নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই৷ কারণ, প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক লেনদেন, যেমন কাগজ কেনা, ছাপানোর খরচ, ইত্যাদি চেকে, কার্ডে, বা অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে চলতে পারে৷ কিন্তু দপ্তরিপাড়ায় বই বাঁধাইয়ের পুরো কাজটাই হয় নগদ টাকায়৷ যাঁরা সেই কাজ করেন, তাঁদের অনেকের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টই নেই: এর সঙ্গে আছে মাল পরিবহনের খরচ৷ সে ভারবাহী মুটিয়ার মাথায় চাপিয়ে হোক বা ভাড়ার গাড়িতে, খরচ মেটাতে হয় নগদে৷ সেই কাজটা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বাজারে বড়, বা ছোট, কোনো অঙ্কের নোটেরই জোগান যথেষ্ট না থাকায়৷ বড় প্রকাশকরা নতুন বইয়ের সংখ্যা কমিয়েছে, আর ছোট প্রকাশকরা আপাতত নতুন বই ছাপানো মুলতবি রেখেছে৷

তবে সমস্যার এখানেই শেষ হবে না৷ বইমেলাতে বই বিক্রির ওপরেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে নোট বাতিল৷ যদিও বইমেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিলন মেলা প্রাঙ্গনে ১৪টি ‘‌এটিএম'‌ বসাবে ভারতীয় স্টেট ব্যাংক৷ কিন্তু ব্যাংকের হাতে যদি যথেষ্ট খুচরো নোট না থাকে, তা হলে আসল সমস্যার কোনো সুরাহা হবে না৷ কোনো ক্রেতা ২০০০ টাকার নোট দিয়ে ৩০০ টাকার বই কিনলে, তাঁকে খুচরো ফেরত দেওয়াটাই বরং আরও বেশি সমস্যা হবে৷ বড় প্রকাশক এবং বই বিক্রেতাদের স্টলে অবশ্য কার্ড সোয়াইপ করার যন্ত্র থাকবে৷ কিন্তু তাতেও সবসময় ভরসা করা যাবে না৷ কারণ কার্ডে কেনাকাটায় বিক্রির গতি ধীর হতে বাধ্য৷ তাছাড়া এই যান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রায়শই বিকল হয়৷ সদ্য শেষ হওয়া বর্ধমান বইমেলাতেই শেষ দিনে ব্যাংকের সার্ভার অকেজো হয়ে, কার্ড সোয়াইপ ব্যবস্থা বিকল হওয়ার কারণে অন্তত লাখ টাকার বিক্রি নষ্ট হয়েছে৷ কাজেই প্রকাশকদের এখন একমাত্র আশা, যদি ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বাজারে যথেষ্ট খুচরো টাকা চলে আসে৷ তা হলে অন্তত বিক্রিবাটা কিছুটা হতে পারে৷ গত বছরের বইমেলায় যেমন ২৫ কোটি টাকার বিক্রি হয়েছিল৷ তাই এতকিছুর পর এবারও আশায় বুক বেঁধেছে বই পাড়া৷

বন্ধু, আপনার কী মনে হয়? নোট বাতিলের ফলে কি বইমেলা সত্যিই বাধাগ্রস্ত হবে? লিখুন নীচের ঘরে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান