1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ন্যূনতম মজুরি নিয়ে পোশাক শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্ব

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ জুলাই ২০১৮

তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা ন্যূনতম যে মজুরি দাবি করছেন, মালিকরা তার অর্ধেক দেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ৷ মজুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বলছেন, মালিকদের প্রস্তাবটা প্রহসনের মতো৷

https://p.dw.com/p/31bFE
Bekleidungsarbeiter Bangladesch
ছবি: bdnews24.com

গত ১৪ জানুয়ারি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য সৈয়দ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়৷ সোমবার কমিশনের তৃতীয় বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতা শামছুন্নাহার ভূঁইয়া ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার প্রস্তাব করেন৷ আর তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র  সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রস্তাব করেন ৬ হাজার ৩৬০ টাকা৷ ফলে মজুরি নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি৷ এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়৷

‘‘আমাদের দাবি ছিল ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা’

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিকঐক্য লীগের সভাপতি সিরজুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দাবি ছিল ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা৷ যিনি শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে ১২ হাজার ২০ টাকা মজুরি প্রস্তাব করেছেন, তা-ও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না৷ কারণ, তিনি সরকারের লোক৷ আর শ্রমিক নেতা হিসেবে তিনি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নন৷ আর মালিকরা যে মজুরি প্রস্তাব করেছেন, সেটা হাস্যকর৷ কারণ, পাঁচ বছর আগে যে ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি করা হয়েছিল, শ্রমিকরা এখন তার চেয়ে বেশি পান৷ কারণ, ইনক্রিমেন্ট হয়েছে, যেটা মালিকরা প্রস্তাব করেছেন, সেই মজুরি এখন বাস্তব মজুরির চেয়ে কম৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মালিকদের এই একগুঁয়েমি ভাব নিয়ে এরই মধ্যে বৈঠক করেছি৷ প্রথম বৈঠকের পর থেকে ৬ মাসের মধ্যে কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে হবে৷ সেই হিসেবে আরো কিছু সময় পাবে কমিশন৷ আমাদের আশা এর মধ্যে মজুরি নিয়ে মালিক-শ্রমিক সমঝোতা হবে৷ আর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী৷ আমরা মনে করি, তিনি মজুরির ব্যাপারের সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন৷''

"এর বেশি মজুরি দিলে পোশাক কারখানা চালানো সম্ভব নয়'

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আরো দুই সপ্তাহ সময় আছে৷ এরমধ্যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে৷ মালিকপক্ষ এখন সময় চেয়ে কালক্ষেপনের পথ বেছে নিতে পারে৷ তাঁরা যদি সেরকম কিছু করেন, তাহলে শ্রমিকরা তা মেনে নেবেন না৷''

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মালিকরা যে মজুরির প্রস্তাব দিয়েছেন, তা শ্রমিকদের একটা বিক্ষোভের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে৷ আজও আমরা সমাবেশ করেছি৷ আমরা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় সমাবেশ করবো৷''

তিনি বলেন, ‘‘মালিকদের মানসিকতা হয়েছে, তারা যেন বেতনই দিতে চান না৷ আমরা বলেছি, গার্মেন্টস মালিকরা যেন বিলাসিতা কমিয়ে দেন৷ তাঁরা যেন মানসিকতার পরিবর্তন করেন৷ আমরা সবাই মিলে ১৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছিলাম৷ আর সেটাই যৌক্তিক৷ তারপরও শ্রমিক প্রতিনিধি যে ১২ হাজার ২০ টাকা প্রস্তাব করেছেন, তিনি সরকারের লোক৷ তা-ও মালিকরা মানছেন না৷''

‘‘মালিকরা যে মজুরির প্রস্তাব দিয়েছেন, তা শ্রমিকদের একটা বিক্ষোভের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে'

বিজিএমই'র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘আমরা মূল্যস্ফীতি, উৎপাদন খরচ এবং বিশ্বে তৈরি পোশাকের দাম ও চাহিদা বিবেচনা করে ন্যূনতম মজুরি ৬ হাজার ৩৬০ টাকার প্রস্তাব করেছি৷ আমাদের উৎপাদনসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে৷ এর বেশি মজুরি দিলে পোশাক কারখানা চালানো সম্ভব নয়৷ বন্ধ হয়ে যাবে৷ আর তাতে সবার ক্ষতি হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘যাঁদের জন্য ন্যূনতম মজুরির কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা শিক্ষানবিশ৷ তাঁরা কাজ শেখে৷ পরে তাঁদের বেতন বেড়ে যায়৷ শিক্ষানবিশকে এর চেয়ে কে বেশি বেতন দেবে? শিক্ষানবিশরা ইনক্রিমেন্ট পান না৷ যাঁরা বলেন ইনক্রিমেন্ট পেয়ে  ৫ বছরে তাঁদের বেতন এখন আমাদের প্রস্তাবিত বেতনের চেয়ে বেশি, তাঁরা না জেনেই কথা বলছেন৷''

‘তাঁরা যে মজুরি প্রস্তাব করেছেন, তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না’

মজুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইকতেদার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি করা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা৷ প্রতি বছর শতকরা ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্টের বিধান ছিল৷ তাতে ইনক্রিমেন্টসহ পাঁচ বছরে যে ন্যূনতম মজুরি হয়েছে তা এখন মালিকরা যে প্রস্তাব করেছেন তার চেয়ে বেশি৷ তাঁরা যে মজুরি প্রস্তাব করেছেন, তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমার বিবেচনায়, বাজারদর, জীবনমান সব কিছু মিলিয়ে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকাই হওয়া উচিত৷ কারণ, মজুরি হিসাব করা হয় পাঁচ জনের একটি পরিবারের কথা মাথায় রেখে৷''