পঙ্গপালে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

মরু পতঙ্গদের সাধারণত শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায়৷ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে এদের বসবাস৷ এসব অঞ্চলে বছরে বৃষ্টিপাত হয় আট ইঞ্চিরও কম৷

গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘হর্ন অব আফ্রিকার’ দেশগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০০ ভাগ পর্যন্ত বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ আফ্রিকার মরু অঞ্চলে এমন বৃষ্টি পঙ্গপালের বংশবিস্তারের জন্য সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করেছে৷

পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণের সহজ কোন উপায় নেই৷ উড়োজাহাজে, গাড়িতে করে কিংবা বহনযোগ্য যন্ত্রের সাহায্যে কীটনাশক ছিটিয়ে সাধারণত এদের দমন করা হয়৷ সমস্যা হল এতে উপকারী কীট পতঙ্গও মারা পড়ে৷ কীটনাশক ছাড়া বিকল্প উপায়ে পঙ্গপালের বংশবিস্তার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে৷

বিভিন্ন সময়ে পঙ্গপাল ভয়ানক আকার ধারণ করেছে৷ ১৮৭৫ সালে ১৮০০ মাইল দীর্ঘ আর ১১০ মাইল ব্যাপ্তির একটি পঙ্গপাল যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ ঢেকে দিয়েছিল৷ রকি পর্বতমালার এই পতঙ্গরা এখন বিলুপ্ত বিশ শতকে বিশ্বে ১৩ বার পঙ্গপালের বিস্তার ঘটেছে৷ যার একটি ১৩ বছরব্যাপী ছিল৷ ১৯৫৪ সালে আফ্রিকা থেকে এসব পতঙ্গ ব্রিটেনেও ছড়িয়ে পড়ে৷ ১৯৮৮ সালে তিন হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পশ্চিম আফ্রিকা এমনকি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেও পৌছে যায় এরা৷

এসব মরু পতঙ্গ প্রতিদিন তাদের নিজেদের ওজনের সমপরিমান খাবার খেতে পারে৷ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক বিশেষজ্ঞের মতে, ম্যানহাটনের আকৃতির পঙ্গপালের একটি ঝড় গোটা নিউ ইয়র্কের জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় খাবার সাবাড় করতে পারে৷ প্রতি কিলোমিটারে ঝাঁকে চার থেকে আট কোটি পতঙ্গ থাকে৷

মরু পতঙ্গরা ঝাক ধরে উড়ে৷ কেনিয়ায় এমন একটি পঙ্গপাল দৈর্ঘ্যে ৩৭ মাইল আর প্রস্থে ২৫ মাইলের আকার নিয়েছে৷ যেখানে যাচ্ছে সেখানে রীতিমত সূর্যের আলো তারা ঢেকে ফেলতে পারে৷ সব মিলিয়ে ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছে দেশটি৷ অন্যদিকে ইথিওপিয়া ও সোমালিয়া ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সঙ্কটে পড়েছে পঙ্গপাল নিয়ে৷

এরইমধ্যে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে কয়েক হাজার একর জমিতে হানা দিয়েছে পঙ্গপাল৷ জাতিসংঘের আশংকা এদের ঠেকাতে না পারলে জুন নাগাদ তাদের জনসংখ্যা ৫০০ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে৷ পৌছাতে পারে ৩০ টি দেশে৷ আর খারাপ পরিস্থিতিতে বিশ্বের ২০ ভাগ ভূমি খুব সহজেই আক্রান্ত হবে৷ ১০ ভাগের এক ভাগ মানুষের বেঁচে থাকার মত খাবারের অভাব দেখা দিবে৷

কেনিয়া, ইথিওপিয়া ও সোমালিয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ৷ সেই সঙ্গে আফ্রিকার অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়েছে এই পতঙ্গরা৷ লোহিত সাগরের দুইপাড়েও সমান তালে বাড়ছে এদের আধিপত্য৷ সুদান, মিশরের উপকূল থেকে শুরু করে দক্ষিণ পশ্চিম সৌদি আরবেও চলছে বংশবিস্তার৷ ওমানের পূর্ব উপকূল থেকে শুরু করে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত অবধি এখন এই পতঙ্গদের বিস্তৃতি৷

পঙ্গপালের হানায় ফেব্রুায়ারিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান৷ সাতশো ত্রিশ কোটি রুপি বা ৪০০ কোটি টাকার একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইমরান খানের সরকার৷ সেসময় ভারতের পাঞ্জাবেও ঢুকে পড়েছে পতঙ্গরা৷ যার ব্যাপ্তি ছিল তিন কিলোমিটার৷