1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পণ্ডিত ভীমসেন যোশী চলে গেলেন

২৪ জানুয়ারি ২০১১

৮৭ বছর বয়সে৷ সেই সঙ্গে এমন একটি কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল, যার সঙ্গে বিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের ইতিহাসের অনেকটাই জড়িত৷

https://p.dw.com/p/101TZ
ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবুল কালামের সঙ্গে নিজ বাসভবনে কথা বলছেন ভীমসেন জোশী (ফাইল ফটো)ছবি: AP

ভারত রত্ন ভীমসেন যোশী'র নাম যেমন লোকে এক ডাকে চিনতো, তেমনই ভারতের উত্তর স্বাধীনতা পর্বে যাদের জন্ম, তাদের অধিকাংশই বোধহয় এই অসাধারণ গায়ক এবং তাঁর গায়কির নানা ব্যক্তিগত স্মৃতি সযত্নে মনের মণিকোঠায় তুলে রাখবেন৷ হয়তো ভীমসেন যোশীকে শুনেছেন কলকাতায়, সদারং সঙ্গীত সম্মেলনে কিংবা বিড়লা অডিটোরিয়ামে৷ পরে হয়তো দিল্লীতে শ্রীরাম কলা সেন্টারে৷ তারও পরে হয়তো জার্মানিতে এসে স্টুটগার্টে৷ একই গলা, একই শৈলী৷ বলতে কি, একই মানুষ৷ জার্মানির ফ্ল্যাটে কিচেন পরিষ্কার করতে করতে বেজেছে টেপ কিংবা সিডি৷ সেই মানুষটা চলে গেলেন৷ এ' একমাত্র কোনো আগের প্রজন্মে ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের চলে যাওয়ার সঙ্গে তুলনীয়৷

গানের ঘরানা ইত্যাদি যারা বেশী বোঝেন না, তাদের কাছেও কিরানা ঘরানার নাম দু'বার বলতে হয় না৷ কিন্তু যোশী প্রেমিকরা খুব ভালো করেই জানতেন, এই একদা সুরারসিক মানুষটি একবার গান গাইতে বসলে অন্য সব নেশা কেটে তাঁর গানের নেশাটাই সব ছাড়িয়ে উঠতো৷ ওদিকে তান করছেন দুর্ধর্ষ গতিতে, দুনে চৌদুনে৷ পদ্মাসনে বসে, হাতের আঙুল দিয়ে বাতাসে মেঝের কাছে কি সব যেন অঙ্কের ছক কাটছেন৷ অসম্ভব ভারী গলার জড়োয়া কাজ যেন হঠাৎ কাকলি হয়ে মূর্ছনায় পরিণত হচ্ছে৷

মনে হয়, কল্যাণ ঠাটের রাগগুলোতেই যোশীজিকে যেন সবচেয়ে তাঁর স্বকীয় ব্যক্তিত্বে প্রভাসিত বলে মনে হতো৷ মনে হতো যেন পুজোয় বসেছেন, পুজো করছেন৷ এ' কিন্তু নির্মল, শুদ্ধ গঙ্গাজল গোত্রীয় পালুসকরের ভজন নয়৷ যোশীজির গানে যেন অনেক বেশী স্বীয় দুর্বলতার স্বীকৃতি এবং অনুতাপ ছিল৷ মানুষ যখন ঈশ্বরের জন্য গায়, তখনও সে মানুষই থাকে৷ কাজেই মারাঠি ভক্তি সঙ্গীতের কায়দায় তাঁর ‘সন্ত বাণী' অনুষ্ঠানগুলো সত্বেও বলব, ভীমসেন যোশীকে মহারাষ্ট্র কি কর্ণাটকের সন্ত-কবি ঐতিহ্যের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করলে ভুল করা হবে৷ ওনার পূজা হল পাপে-তাপে দগ্ধ ধরিত্রীর মানবের পূজা৷ সেভাবেই তাঁকে শোনা উচিৎ৷

যোশীজি সম্পর্কে কিছু আশ্চর্য কাহিনীতে যারা আগ্রহী, তাদের বলা যেতে পারে, কুমার প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘কুদরত রঙ্গী বিরঙ্গী' বইটা একটু পড়ে দেখতে পারেন৷ ভীমসেন নাকি প্রখ্যাত অভিনেতা পাহাড়ী স্যান্যালের কলকাতার বাসায় ছোকরা চাকর ছিলেন! ভাবতে পারেন? সে আমলে ছেলেছোকরারা মার্গসঙ্গীত শেখার জন্য বাড়ি থেকে পালাতো, চায়ের দোকানে চা বেচতো কিনা৷ ভীমসেন যোশী ছিলেন সেই জগতের বাসিন্দা৷

প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী

সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার